একচিলতে বারান্দা মনের মতো সাজালে তা হতে পারে অবসরের সঙ্গী। কীভাবে সাজাবেন বারান্দা? লিখেছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।
প্রাইভেট স্পেস। হাইরাইজের সাতশো স্কোয়্যার ফিটে একচিলতে বারান্দাই জানে ব্যক্তিগত মনখারাপের খতিয়ান। যার সাহেবি নাম ব্যালকনি। যে বারান্দায় সম্পর্কের পাঁচ বছরে বহু সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন, সেখানেই সদ্য বিয়ে করলেন আলিয়া ভাট এবং রণবীর কাপুর। তাহলেই বুঝুন, বারান্দা কতটা আপন হতে পারে! সাতমহলা বাড়ির চিক দেওয়া বারান্দা এখন ইতিহাস। যৌথ পরিবারে লাল মেঝের লম্বা বারান্দায় ভাই-বোনেদের একসঙ্গে খেতে বসার স্মৃতিও ফিরে আসে বিজয়া বা বছর শেষের পার্টিতে। টু, থ্রি বা ফাইভ বিএইচকে-র হিসেবে ব্যালকনির মাপ এখন বদলায়। যা কারও কাছে হয়তো নিজস্ব অবসর যাপনের ঠিকানা।
এই একচিলতে বারান্দা যদি সাজিয়েগুছিয়ে রাখেন, তাহলে মন ভালো রাখার খাতায় আরও কিছু নম্বর যোগ হবে। চেনা উপায় বাদ দিয়ে নতুন ভাবে বারান্দা সাজাবেন কীভাবে? হাতের কাছেই ছড়িয়ে রয়েছে উপকরণ। শুধু সঠিক জিনিস বেছে নিতে হবে আপনাকে।
প্রাণের সঞ্চার
অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা মনে করেন বারান্দাতেই প্রাণের আরাম। মিথিলা বললেন, ‘বারান্দা আমার বড় প্রিয়। ঢাকাতে এখন কলকাতার থেকেও বেশি ফ্ল্যাট। ফলে সবসময় ছোট ছোট বারান্দাতেই আমি অভ্যস্ত। খুব ছোটবেলায় বিশাল বারান্দাওয়ালা একটা পুরনো বাড়িতে ছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে বাড়িগুলো উপরের দিকে উঠেছে আর বারান্দাগুলো ছোট হয়েছে। আমাদের বাড়িতে সবসময়ই বাগান ছিল বারান্দায়। বাবা বাগান করতে ভালোবাসেন। ঢাকার বাড়ির বারান্দায় ছোট টবে টম্যাটো, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, লঙ্কা সবই হতো। মায়ের প্রিয় বেলফুল থাকতই। যাতে দরজা খুললে সুন্দর গন্ধ আসে। এখন আমরা ইট কাঠের জঙ্গলে থাকি, একটু প্রাণের তো দরকার হয়। বারান্দায় বা আমার কলকাতার বাড়ির ছাদে যেমন বাগান করেছি, ওইটুকুই তো প্রাণের সঞ্চার।’
ঘাসের গালচে, পর্দা, খড়খড়ি
গত ১২ বছর ধরে ইন্টিরিয়র ডিজাইন করছেন বিদিশা বসু। তিনি বললেন, ‘আজকাল সবারই ছোট বারান্দা। ফলে লেগ স্পেস কম। এসব ক্ষেত্রে বারান্দার গ্রিল ব্যবহার করতে হবে। আংটা দেওয়া প্লাস্টিকের টব গ্রিলের সঙ্গে লাগিয়ে দেওয়া যায়। তাতে ফুল লাগালে বারান্দাটা প্রজাপতির মতো ঝলমল করবে। মর্নিং গ্লোরি নামে একটা ক্রিপার হয়। নীচে ছোট টব রেখে গাছটা দড়ি দিয়ে বেঁধে দেবেন। দেখতে সুন্দর আবার প্রিভেসিও দেবে। এই গাছ লাগালে পাশের ফ্ল্যাটের থেকে অনেকটা গার্ড হবে বারান্দা। স্কার্টিংয়ের উপর ছোট ছোট টব রাখতে পারেন। বসে বই পড়া বা আড্ডা দেওয়ার জন্য মেঝেটা ফাঁকা রাখুন।’ সিন্থেটিক ঘাসও বারান্দার মেঝেতে লাগান অনেকে। ইদানীং শুধু ঘাসের গালচে নয়, বারান্দার একদিকে সিন্থেটিক ঘাসে তৈরি পর্দা বা খড়খড়িও ব্যবহার করছেন অনেকে।
লাইব্রেরি
বারান্দার মেঝেতে বসার ব্যবস্থা রাখলে বিছিয়ে নিন আটপৌরে মাদুর। সংগ্রহে হানে বোনা মাদুর থাকলে তা দেবে আগলে রাখার পারিবারিক ওম। মাদুরে ছড়িয়ে রাখুন রঙিন কুশন। অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ সুদীপ ভট্টাচার্য পরামর্শ দিলেন, ‘বারান্দা একটু বড় মাপের হলে লাইব্রেরি করুন। সামনে স্লাইডিং উইন্ডো করে স্টাডি টেবিল রেখে লাইব্রেরি তৈরি করতে পারেন। সম্ভব হলে চেয়ার বা সোফা রাখুন।’
বাতিল টুকিটাকির রিমডেলিং
সংসারে যা বাড়তি, তা হয়তো সব সময় ফেলে দেওয়ার নয়। বিদিশা বললেন, ‘পুরনো ননস্টিকের ফ্ল্যাট সারফেসের কড়াই থাকলে ধরুন তার একটা কান ভেঙে গিয়েছে। আমরা আর একটা কান ভেঙে দিলাম। ওর মধ্যে জল, পেবলস, ঝিনুক দিয়ে রক গার্ডেন বানাতে পারি। গাড়ির বাম্পার প্রচুর ফেলে দেওয়া হয়। সেটা টব হিসেবে ব্যবহার করুন। অ্যাম্বাসাডরের বাম্পার লম্বা হয়। ফুটো করাই থাকে। তার মধ্যে মাটি দিয়ে গাছ করুন। রং করে গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে দিন। বাম্পার স্টিলের হয়। ফলে জং ধরবে না।’
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
পোষ্য পাখি থাকলে, হয়তো তাদের জায়গা হয় খোলা বারান্দা। পাখি না পুষলেও শুধু খাঁচাই আপনার ব্যালকনির শোভা বাড়াতে পারে। কীভাবে? বিদিশার কথায়, ‘খাঁচাগুলো ভাইব্র্যান্ট রং করে নিন। তার ভিতরে একটা ছোট্ট টবে কোনও একটা লতানে গাছ রেখে দিন। টুনি দিয়ে ঘিরে দিন। উপরে একটা আংটা করে ঝুলিয়ে দিন। টুনি লাইটের জন্য বারান্দায় ইলেকট্রিক কানেকশন রাখতে হবে না। কারণ এখন বাজারে ব্যাটারি অপারেটেড টুনি লাইট পাওয়া যায়। এগুলো ভ্যালু অ্যাড করে।’