বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ
 

ভালো, খারাপ ও সন্দেহজনক
পি চিদম্বরম

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ করা হয়েছিল ২০১৯-২০ সালে। ২০১৫-১৬ সালে হয়েছিল তার আগের সমীক্ষাটি (এনএইচএফএস-৪)। উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন এনডিএ সরকার। তাই দুটি সমীক্ষার মধ্যে পরিবর্তনগুলিতে, ২০১৪-১৫ পর্যন্ত অনুসৃত নীতির পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদি সরকারের নীতির প্রভাবের প্রতিফলন পাওয়া যায়। 
আগের সমীক্ষার মতোই, এনএইচএফএস-৫-এর মূল সূচকগুলি হল—জনসংখ্যা ও পরিবারের গঠন, সাক্ষরতা, বিবাহ ও উর্বরতা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, টিকাকরণ, চিকিৎসা পরিষেবার মান, রক্তাল্পতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং তামাক ও মদ খাওয়ার মতো বিষয়গুলি। সংখ্যাগুলি হল পরিসংখ্যানগত অনুমান, যা চারবছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রাপ্ত। যেহেতু সমীক্ষায় গৃহীত পদ্ধতি অভিন্ন ছিল, তাই সংখ্যার পরিবর্তন—পরিসংখ্যানবিদদের ভাষায় যা ‘ডেল্টা’—তা থেকে খুব দরকারি শিক্ষালাভ করা যায়। কিছু পরিবর্তন আমাদের গর্বিত করবে, কিছু করবে হতাশ এবং কিছু থেকে সন্দেহের উদ্রেক হবে ও প্রশ্ন উঠবে।

ভালো খবর
বিগ ‘ব্রেকিং’ নিউজ হল যে মোট প্রজনন হার ২.২ (মহিলা প্রতি শিশু উৎপাদন) থেকে ২.০-এ নেমে এসেছে। ‘প্রতিস্থাপন হার’ হল ২.১। সংখ্যাটি ২.০ হলে ভালো, তবে পাশাপাশি তার নেতিবাচক প্রভাবও সূচিত করে। সে অবশ্য এই সামান্য পরিসরে আলোচনার বিষয় নয়। অতএব, এটাই স্বস্তির খবর যে ভারতের জনসংখ্যা আপাতত উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে না এবং পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
প্রথমত, সুসংবাদ। ৮৮.৬ শতাংশ শিশু প্রসব হচ্ছে কোনও প্রতিষ্ঠানে (অর্থাৎ কোনও মেডিক্যাল কেয়ারের ভিতরে)। সংখ্যাটি আগের ৭৮.৯ শতাংশ থেকে অনেকটাই বেশি। ভারতে, বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবারগুলি খুশি মনে আরও বেশি কন্যাসন্তান নিচ্ছে। লিঙ্গ অনুপাত (প্রতি ১০০০ পুরুষে মহিলা) ৯৯১ থেকে বেড়ে ১০২০ হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে যেখানে জনসংখ্যার ৮৮.০ শতাংশ বিদ্যুৎ সংযুক্ত পরিবারে বাস করত, মোদি সরকার সেই অনুপাতটিকে বাড়িয়ে ৯৬.৮ শতাংশে নিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এই আমলে ৮.৮ শতাংশ বেশি মানুষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পরিষেবা ভোগ করছেন (রোম এক দিনে নির্মিত হয়নি, এই দাবিও করা হয়েছে)। আইনসম্মত বিয়ের বয়স ১৮ ও ২১ বছরের আগে যথাক্রমে নারী ও পুরুষের বিবাহের প্রবণতা কমেছে। তারপরেও কিন্তু ২৩.৩ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। অতএব, এই গুরুতর সমস্যার সমাধানে আমাদের এখনও অনেক পথ যেতে হবে।

খুব ভালো খবর নয়
বিগ, ‘ব্রেকিং’ ব্যাড নিউজ হল, ভারতের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ১০ বছরের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারেনি—যা মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫৯ শতাংশ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৯.৮ শতাংশ। ২১ শতকের উপযোগী চাকরি এবং ব্যবসায় নিযুক্ত হতে প্রয়োজন উচ্চশিক্ষা, উন্নত প্রযুক্তি এবং বিশেষ দক্ষতা। এর অর্থ হল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশের অর্ধেক মানুষ এগুলিতে শামিল হওয়ার উপযুক্ত হতে পারলেন না। ভারতের জনসংখ্যা এখনও তরুণ (২৬.৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে), আবার অনুপাতটি হ্রাসের অর্থ বয়স্ক মানুষের অনুপাত বাড়ছে। আমরা যে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ (জনসংখ্যার চিত্র বদলের কারণে অর্থনৈতিক প্রগতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি) নিয়ে গর্ব করি তা চিরস্থায়ী হবে না। বেশিরভাগ মহিলাই রক্তাল্পতার শিকার: ১৫-৪৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ৫৭.০ শতাংশ এবং আরও উদ্বেগজনকভাবে, ১৫-১৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ৫৯.১ শতাংশ। এনএইচএফএস-৪ থেকে দুটি অনুপাতই বেড়েছে। অন্য খারাপ খবরটি হল, ৬-২৩ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে মাত্র ১১.৩ শতাংশ পর্যাপ্ত খাবার পেয়েছে। তার পরিণাম এটাই হয়েছে যে, ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ৩২.১ শতাংশ আন্ডারওয়েট।  ৩৫.৫ শতাংশ শিশু স্টান্টেড বা সার্বিক বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯.৩ শতাংশ ওয়েস্টেড বা সার্বিক রুগ্নতার শিকার এবং ৭.৭ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে সার্বিক রুগ্নতা মারাত্মক। প্রতি এক হাজার জীবিত শিশু জন্মের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুমৃত্যুর হার (আইএমআর) ৩৫.২ এবং অনূর্ধ্ব-৫ শিশুমৃত্যুর হার (ইউ৫এমআর) ৪১.৯। দুটি সংখ্যাই এখনও অনেক বেশি এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন হারের থেকে অনেক উপরে।

যে খবর প্রশ্ন উত্থাপন করে
যে-সব তথ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে সেগুলি আরও প্রশ্ন উত্থাপন করে। মোদি সরকারের তথ্য দাবি করে যে, জনসংখ্যার ৯৫.৯ শতাংশ ‘উন্নত পানীয় জলের উৎস’ সংযুক্ত বাড়িতে বসবাস করে। এই সংক্রান্ত পাদটীকায় ‘উন্নত পানীয় জলের উৎস’ কথাটির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এইভাবে—সেখানে নলবাহিত জল দেওয়া হয়—পাবলিক ট্যাপ কিংবা টিউবওয়েলের মাধ্যমে। এসব ঠিক আছে। কিন্তু এই সংজ্ঞার ভিতরে যখন ‘একটি সুরক্ষিত খনন কূপ, একটি সুরক্ষিত ঝরনা ও বৃষ্টির জল’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন এটাই স্পষ্ট হয় যে ৯৫.৯ শতাংশের মতো চমৎকার এক ছবি তুলে ধরতে পুরনো, অরক্ষিত জলের উত্সগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করার একটি বিরাট চেষ্টা হয়েছিল। আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, লক্ষ্যবর্ষ ২০২৪-এর মধ্যে সমস্ত পরিবারে নিজস্ব ট্যাপ সংযোগ প্রদান সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সাফল্য ঘোষণা করার পূর্বে এটাই চূড়ান্ত পদক্ষেপ!
‘উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা’ প্রদানের তথ্যটিও সন্দেহজনক। উন্নত স্যানিটেশন ফেসিলিটির মধ্যে রয়েছে ফ্লাশ টু পিট ল্যাট্রিন, কোথায় ফ্লাশ করা হচ্ছে তা অজ্ঞাত, স্ল্যাব-সহ পিট ল্যাট্রিন এবং টুইন পিট/কম্পোস্টিং টয়লেট। অর্থাৎ খোলা স্থানে মলত্যাগ ছাড়া সবকিছুই, আপনার হিসেবে, উন্নত স্যানিটেশন ফেসিলিটি!
উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে হইচই ফেলা প্রচার করে শেষমেশ মাত্র ৫৮.৬ শতাংশ পরিবার (৪৩.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে) রান্নার জন্য পরিষ্কার জ্বালানি (ক্লিন ফুয়েল) ব্যবহার করছে। তাও আবার এই শতাংশের হিসেবটা দেওয়া হয়েছে আসলে এলপিজি বা পাইপযুক্ত গ্যাস সংযোগ যতটা আছে তার ভিত্তিতে, নিয়মিত এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের প্রকৃত সংখ্যা এতে প্রতিফলিত হয়নি। 
বৃদ্ধির হার বিষয়ে নিরপেক্ষ হিসেবের জন্য ধন্যবাদ, বহু লক্ষ মানুষ দরিদ্র এবং অনেকেই হয়তো চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। খাদ্য গ্রহণের মতো শুধুমাত্র একটি সূচকে চোখ রাখা যাক। একটি পরিবারের আয় থেকে প্রথম খরচের লক্ষ্য হল খাদ্য। যদি মহিলাদের একটি বড় অংশ রক্তাল্পতায় ভোগেন এবং শিশুদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ কম ওজনের কিংবা রক্তাল্পতার শিকার হয়, পাশাপাশি অনেক শিশু স্টান্টেড অথবা ওয়েস্টেড হয়, তবে তার কারণ পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব। আমার মনে হয় যে খাদ্যের অভাব হল, দারিদ্র্যের একটি নির্ধারক সূচক। একজন খুদে ভগবানের সন্তান হিসেবে ওই গরিব মানুষগুলিকে এই সরকার ভুলিয়ে দিতে চাইছে।
লেখক ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত

16th     May,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ