বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ভাগবত–ধর্ম

ভাগবত-ধর্মের ভিত্তি প্রধানতঃ ভাগবত-গ্রন্থ। ভাগবত গ্রন্থের আরম্ভ ‘জন্মাদ্যস্য যতঃ’ এই বাক্য লইয়া। বেদান্তসূত্রের দ্বিতীয় সূত্র ‘জন্মাদ্যস্য যতঃ’। ইহাতে বোঝা যায় ভাগবতগ্রন্থ বেদান্তভিত্তিক। ভাগবতগ্রন্থকে বেদবৃক্ষের গলিত ফল বলা হইয়াছে। বেদের শ্রেষ্ঠ মন্ত্র গায়ত্রী। ভাগবত সেই গায়ত্রী মন্ত্রের ভাষ্যস্বরূপ, এই কথা বলা হইয়াছে। সুতরাং ভাগবত-ধর্ম বুঝিতে হইলে বেদান্তের সঙ্গে পরিচয় আবশ্যক।
বেদান্ত বেদের নির্যাস। সনাতন বেদ হিন্দু-জাতির মূল ধর্মশাস্ত্র। হিন্দুধর্মের যত কিছু ধর্মতত্ত্ব, জীবনাদর্শ, তাহার মূল বেদ। বেদান্তের বার্তা বিশ্বমানবের জন্য। নিখিল বিশ্বের নরনারীকে বেদান্ত ডাকিতেছেন মধুময় আহ্বানে — ‘শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ’। হে অমৃতের পুত্রগণ শোনো। বেদান্ত আমাদের স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত করিয়াছেন — ‘অমৃতের পুত্রগণ’ এই সম্বোধন করিয়া। তথাপি আমাদের সকলেরই জীবনে দুঃখ আছে। এই দুঃখ কেহই চাহে না। সংসারের সকল নরনারীরই একটি জপমন্ত্র ‘দুঃখং মে মা ভূৎ, সুখং, মে ভূয়াৎ’— যেন দুঃখ না পাই, যেন সুখে থাকি। দুঃখের গ্রাহক নাই। প্রত্যেকটি মানুষই সুখার্থী, অথচ দিনরাত সুখ সুখ করিয়া সুখের পিছনে ছুটিয়াও কেহ সাক্ষ্য দিতেছে না যে, সে খুব সুখে আছে। বেদ বলেন, মানবীয় চেষ্টায় দুঃখ কিছু কমিবার নয়। কিছু কমে সাময়িকভাবে, আংশিকভাবে। শ্রুতি বলেন, আমার কথা যদি শোনো, তাহা হইলে আত্যন্তিক দুঃখ-নিবৃত্তি হইবে। সকল দুঃখ যাইবে একেবারেই। বেদ দুঃখের কারণ বাহির করিয়াছেন ও দূরীকরণের উপায় বলিয়াছেন। দুঃখের কারণ অল্পে সুখানুসন্ধান। কিন্তু বেদ বলেনঃ “যদ্বৈ ভূমা তৎ সুখং, নাল্পে সূখমস্তি, ভূমৈব সুখং, ভূমা ত্বেব বিজিজ্ঞাসিতব্য ইতি”—অল্পে সুখ নাই। ভূমাই সুখ। ভূমার সন্ধানই করিতে হইবে। ভূমার সঙ্গে যুক্ততায় সুখের উদয়, দুঃখের নিবৃত্তি। দুঃখের মূল কারণ অল্পতা ক্ষুদ্রতা। মানব যে দুঃখী তাহার কারণ এই যে, সে নিজেকে বড় ছোট করিয়াছে, অত্যন্ত গণ্ডীবদ্ধ করিয়াছে। সংকীর্ণতা সীমাবদ্ধতা সকল দুঃখের জনক।
মানব! তোমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলে তুমি হয়তো একটি পাড়ার নাম কর। তুমি যখন পাড়ায় জন্মিয়াছ তখনই একটি জেলায় একটি প্রদেশে বা একটি দেশে বা পৃথিবীতে জন্মিয়াছ। তুমি একটা পল্লী-সচেতন না হইয়া একটা দেশ-সচেতন হইতে পার। দেশ-সচেতন না হইয়া বিশ্ব-সচেতন হইতে পার। নিজেকে বড় করিয়া দেখ — নিজেকে বিশ্ববাসী বলিয়া ভাবো। নিজেকে যত ছোট করিয়া দেখিবে, ততই দুঃখে ডুবিবে। যত বড় করিয়া জানিবে, ততই দুঃখের মাত্রা কমিয়া গিয়া সুখের উদয় হইবে। আমরা স্বরূপতঃ বড়ই আছি, কিন্তু বড় চেতনায় সজাগ নাই। নিজেকে বড় করিয়া জানিবার উপায় বড়র সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তুমি যত বড়র সঙ্গে যুক্ত হইবে তত বড় হইবে। যিনি সর্বাধিক বড়, — বৃহত্তম, তিনি ভূমা। ভূমার সঙ্গে যুক্ত হইলেই ভূমা হইবে। ভূমাই সুখের নিলয়, ভূমাতেই দুঃখের নিবৃত্তি। সুতরাং দুঃখী জীবের জানিবার বস্তু— জিজ্ঞাসা করিবার বিষয় শুধু ভূমা।
ভূমার অপর নাম ব্রহ্ম। বৃহত্ত্বাদ্‌ ব্রহ্ম। যিনি সবচেয়ে বড়, যাঁহার বৃহত্ত্ব সর্বাতিশায়ী, তিনি ব্রহ্ম। শুধু তাহাতেই নহে। ব্রহ্ম শুধু বড়ই নহেন। তিনি অপরকেও বড় করেন। বৃংহণত্বাদ্‌ ব্রহ্ম। যিনি আসেন ব্রহ্মের সংস্পর্শে, তিনিও বড় হইয়া যান। ব্রহ্মের কথা বলিলে, ভাবিলে, ধ্যান করিলে, অনুধাবন করিলে, বড় হওয়া যায়। বড় হইলেই দুঃখ যায়। এই ব্রহ্মের সংবাদ লইয়াই ব্রহ্মসূত্র। ব্রহ্মসূত্রের অপর নাম বেদান্তসূত্র। 
‘শ্রীমহানামব্রত প্রবন্ধাবলী’ থেকে

28th     April,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ