বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

আত্মজ্ঞান

পার্বতী একবার প্রশ্ন করলেন—আত্মজ্ঞান লাভের উপায় কী? প্রশ্নটি করলেন লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে যাতে সাধকেরা উপকৃত হন। সাধনা সংক্রান্ত এত সূক্ষ্ম প্রশ্ন করবার মতো বৌদ্ধিক বিকাশ সে যুগের মানুষদের মধ্যে ছিল না। তবু সাধনার সূক্ষ্মতর তত্ত্ব মানুষের হাতে দিয়ে যাবার জন্যে হর-পার্বতী নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে আগম ও নিগম শাস্ত্রের প্রবর্ত্তন করলেন। পার্বতীর জিজ্ঞাসা ছিল আত্মজ্ঞানের জন্যে মানুষ উপবাস করে, কত রকমের আচার-অনুষ্ঠান করে, তথাকথিত পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ করে, নানা রকমের কৃচ্ছ্রসাধনাও করে। কিন্তু এর সঠিক পন্থাটি কী?? শিব উত্তর দিলেন— ‘‘ন মুক্তিরতর্পণাধোমাদুপবাস শতৈরপি।/ ব্রহ্মৈবাহমিতি জ্ঞানত্বমুক্তোর্ভবতি দেহভৃৎ।’’
তপ অর্থাৎ নিজেকে কষ্ট দিয়ে মুক্তিলাভ করার যে ভাবনা তা যথার্থ নয়। ঈশ্বর অন্তর্নিহিত সত্তা, বাহ্যিকতার সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? দিনের পর দিন জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা, মাসের পর মাস এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, এক হাত বা দুই হাত ওপোর তুলে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো বা বেশ কয়েকদিন নিজেকে মাটিতে প্রোথিত করে রাখা—এসবই নিরর্থক। এটা ঠিক যে এসবের জন্যে বিশেষ শারীরিক শক্তি বা সহ্যশক্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক মানুষও তো আছে যারা প্রচুর কায়িক শ্রম করতে পারে, পশুও তো অনেক পরিশ্রম করে। তাতে পশুরা কি মুক্তি পেয়ে যায়? নিশ্চয় তা নয়। দৈহিক তপের দ্বারা ঈশ্বরলাভ হয় না। হোম ও যজ্ঞের দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায় না। যদি তাই হোত তবে সব ধনী লোকেরা মুক্তি তো পেয়ে যেত আর গরীবেরা কখনও ঈশ্বরের নিকটে পৌঁছতে পারতো না। এ সমস্তই নিরর্থক আর মানবতার পশ্চাৎগমন ছাড়া আর কিছুই নয়। নিছক না খেয়ে থাকা অর্থে উপবাসও অপ্রয়োজনীয়। যদি এটা কার্যকরী হতো তবে গরীর বা অভুক্ত মানুষেরা এই রকম কষ্ট করেই ভগবানকে পেয়ে যেত। কিন্তু কেউ যদি প্রকৃত উপবাস করে তবে তাতে অনেক লাভ আছে। শাস্ত্র মতে উপবাসের অর্থ হ’ল—উপ মানে নিকট, বাস মানে থাকা। উপবাসের অর্থ তাই মনকে পরমপুরুষের নিকটে রাখা। অর্থাৎ ভৌতিক জগৎ থেকে মনকে প্রত্যাহার করে নিয়ে পরমাত্মার কাছে রেখে দেওয়া। সংস্কৃতে ফাস্টিং এর সমার্থক শব্দ অনশন। তাহলে দেখা গেল শত সহস্র বার তপ, হোম, উপবাস করলেও কেউ মুক্তি পাবে না। সে ক্ষেত্রে মানুষের করণীয় কী? সেকালে প্রচলিত বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানমূলক যজ্ঞ, স্তব-স্তুতির অসারত্বকে প্রতিপাদিত করে এবার সদাশিব এই বিষয়ের ধনাত্মক আলোচনার সূত্রপাত করলেন। শিব বললেন—‘‘ব্রহ্মৈবাহমিতি জানত্ব মুক্তোর্ভবতি দেহভৃৎ’’। অর্থাৎ যখন কেউ ‘আমি ব্রহ্ম’ এই আত্মোপলব্ধিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তখনই মুক্তিলাভ হয়। কিন্তু ‘আমি ব্রহ্ম’ শুধুমাত্র এই তাত্ত্বিক জ্ঞানে কিছুই পাওয়া যায় না। মানুষকে এই ব্রহ্মভাবনায় প্রকৃতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়।  ‘‘অনুভূতিং বিনা মূঢ়ো বৃথা ব্রহ্মনিমোদতে।/ প্রতিবিম্বিত শাখাগ্র ফলাস্যাদানমোদবৎ।।’’—মৈত্রেয়ী শ্রুতি
মানুষকে বাস্তবে কোন ফল খেয়ে তার স্বাদ গ্রহণ করতে হয়, জলে প্রতিবিম্বিত ফলের ছায়া দেখে সেই ফলের স্বাদ উপভোগ করার যে লোক দেখানো ভাব জাহির করা তার মধ্যে কতটা বাস্তবতা ও মূল্য রয়েছে তোমরা তা ভালো করেই জান। 
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্‌’ থেকে

12th     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ