বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ঈশ্বর প্রতিমার উপাসনা বিজ্ঞান

ওঁ তৎসবিতু র্বরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি (ঋগ্বেদ)। সমগ্র জগতে যত সজ্জন আছেন তাহাদিগকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়—নিরীশ্বর নৈতিক ও সেশ্বর নৈতিক। যাঁহারা পরমাত্মা আত্মা প্রভৃতি আধ্যাত্মিক তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না নিন্দাও করেন না কিন্তু মানুষের নৈতিক চরিত্র বিশুদ্ধ করিয়া সমাজে কল্যাণ করিতে সচেষ্ট এবং নিজেরা সচ্চরিত্র তাঁহারা সকলেরই বন্দনীয়। আর যাঁহারা নিজেদের ও অন্যের নৈতিক চরিত্র বিশুদ্ধ রাখার জন্য যত্নশীল এবং তৎসহ অতীন্দ্রিয় পরমেশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি-সম্পন্ন হইয়া লোকসমাজে তাঁহার কথা প্রচার করেন তাঁহারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও সকলের পূজনীয়। ঈশ্বরে বিশ্বাসী সজ্জনগণের মধ্যে একমাত্র পুণ্যভূমি ভারতবর্ষের সনাতন হিন্দুধর্ম ভিন্ন অন্য কোনও ধর্মে ঈশ্বরের আকার বা নানা অবতার স্বীকৃত হয় নাই। নিরাকার ঈশ্বরবাদী খৃষ্টান, মুসলিম শিখ ও ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ঈশ্বরকে দয়াময়, জগৎস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান্‌ ভাবিয়া মনে মনে তাঁহার উপাসনা ও নিজ নিজ ধর্মশাস্ত্র পাঠ করিয়া প্রার্থনাদি করিয়া থাকেন। তাঁহাদের মতে ঈশ্বরের কোনও মূর্ত্তি নাই এবং তিনি জগতের মঙ্গলের জন্য নিজে কখনও আসেন না, তবে ধর্ম প্রচারের দ্বারা লোকসমাজের শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন ও পাপ নাশের জন্য উচ্চস্তরের ধর্মগুরু ও সাধু সন্তকে জগতে পাঠান। জৈন ও বৌদ্ধগণ মানবজাতির বিশুদ্ধ নৈতিক চরিত্রে অত্যন্ত আগ্রহী এবং ঈশ্বর আছেন কি নাই সে বিষয়ে নীরব থাকিলেও তাঁহাদের ধর্মপ্রবর্তক তীর্থঙ্কর মহাবীর প্রভৃতিকে এবং বুদ্ধদেবকে ঈশ্বরবিশ্বাসীর ঈশ্বরের মতই ভক্তিশ্রদ্ধা ও বন্দনা করেন এবং তাঁহাদের প্রতিমূর্তির সম্মুখে প্রণত হয়েন। মহাবীর ও বুদ্ধ মূর্তির ব্যাপক পূজার প্রবর্ত্তনের দৃষ্টান্ত দেখিয়াই প্রাচীনকালের ব্রাহ্মণেরা নিরাকার পরব্রহ্মের বিবিধ দেবতার মূর্তির পূজার প্রচলন করেন এবং সেই সকল দেবদেবীর পূজার ধ্যানমন্ত্র ও উপাসনার পদ্ধতি নানা শাস্ত্রে সংস্কৃত ভাষায় রচিত হইয়াছে ইহাই প্রত্নতত্ত্ববিদ ঐতিহাসিকগণের অভিমত।
ভারতের বেদমূলক সনাতন হিন্দুধর্ম অতি পুরাতন। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল ভারতীয় দশন ও ধর্ম। অন্যান্য দেশের বহু প্রাচীন ধর্মবৃক্ষ সমূলে উৎপাটিত করিয়া সেই স্থানে অন্য ধর্মবৃক্ষ কালক্রমে রোপিত হইয়াছে, কিন্তু ভারতের সনাতন ধর্মবৃক্ষের মূল এত সুদৃঢ় যে আজ পর্যন্ত কেহ এই দৃঢ়মূল সনাতন ধর্মবৃক্ষকে সমূলে নষ্ট করতে পারে নাই। কালের গতিতে এই ধর্মের মধ্যে নানা দল উপদল সংস্কার আদাব ও মতবাদের সৃষ্টি হইলেও মূলটী ঠিক যেমন ছিল সেইরূপই অক্ষুণ্ণ থাকায় বৃক্ষটাও সঞ্জীবিত হইয়া আছে। গীতা অনাদি ব্রহ্মবৃক্ষ এই নশ্বর সংসারকে বর্ণনা করিয়াছেন পঞ্চদশ অধ্যায়ে “ঊর্দ্ধমূলমধঃ শাখমশ্বত্থং প্রাহুরব্যয়ম্‌। ছন্দাংসি যস্য পর্ণানি যস্তং বেদ স বেদবিৎ।।” বেদের মধ্যে পরমেশ্বরের বাচক ইন্দ্র, অগ্নি, মাতরিশ্বা প্রভৃতি বহু নাম আছে এবং এই সকল নামধারী বহু দেবতার উল্লেখ থাকিলেও সকল নামের লক্ষ্য সেই এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বর যাঁহারই উদ্দেশ্যে-যজ্ঞে ভিন্ন ভিন্ন নামে আহুতি প্রদত্ত হইত।
জ্যোতির্ময় নন্দ রচিত ‘উপাসনা-বিজ্ঞান’ থেকে

3rd     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ