বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শিক্ষাদান

স্বামীজীর যেন সেদিন তর সইছিল না। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ। গুরুভাইকে লিখছেন: “দাদা, এই দারুণ শীতে গাঁয়ে গাঁয়ে লেকচার করে লড়াই করে টাকার যোগাড় করছি মায়ের মঠ হবে।” পরিশ্রম তাঁর সীমা ছাড়াচ্ছে। আর কেউ হলে বোধহয় রক্তবমি করত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুটি মঠ তাঁকে করে যেতেই হবে, একটি ঠাকুরের ও আর একটি মায়ের। সম্ভব হলে মায়ের মঠটি করবেন আগে। এ কাজে চাই অর্থ। তা-ও তাঁকেই সংগ্রহ করতে হবে। এক জায়গায় তিনি লিখছেন, “এই ঘোর শীতে রাত্তির দুটো-একটা পর্যন্ত রাস্তা ঠেলে লেকচার করে দুহাজার টাকা করেছি—মা ঠাকুরানীর জন্য জায়গা কিনলেই আমি নিশ্চিন্ত!” স্ত্রীমঠ স্থাপনের এই তীব্র ইচ্ছা স্বামীজীর চিঠিপত্র, আলাপচারিতায় কতভাবেই না প্রকাশিত হত! স্বামীজী স্পষ্ট ভাষায় এমন কথাও লিখেছেন: “সন্ন্যাসীদের জন্য একটি এবং মেয়েদের জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আমার মৃত্যু হলে, আমার জীবনব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”
সুতরাং শ্রীশ্রীমার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের কয়েকজন সাক্ষাৎ শিষ্যের উপস্থিতিতে যখন নিবেদিতার বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হল, তখন সেখানে প্রধান হোতা ছিলেন স্বয়ং স্বামীজীই। স্বামীজীরই প্রত্যক্ষ প্রেরণায় সেদিন ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়িতে ভাবী শ্রীসারদা মঠের বীজ বপন করা হল। সাধারণ মানুষ অবশ্য জেনেছিল—হিন্দু মেয়েদের হিন্দু ভাবধারায় শিক্ষিত করতে রক্ষণশীল বাগবাজার পল্লিতে একটি স্কুল খোলা হচ্ছে। একাজের জন্য স্বামীজী সুদূর আয়ার্ল্যান্ড থেকে এনেছিলেন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ মিস মার্গারেট নোবলকে। তিনি জানতেন, ভারতের জন্য, বিশেষত ভারতের নারী সমাজের জন্য, প্রয়োজন একজন প্রকৃত সিংহিনীর। আইরিশ কন্যার উন্নত শিক্ষা, পবিত্রতা, অসীম ভালবাসা এবং দৃঢ়তার মধ্যে তিনি সেই বাঞ্ছিত প্রচণ্ড শক্তিমত্তার পরিচয় পেয়েছিলেন। স্বামীজী তাঁকে ব্রহ্মচর্যব্রতে দীক্ষিত করে নাম দিলেন ‘নিবেদিতা’। দায়িত্ব দিলেন ভারতীয় মেয়েদের ভারতীয় আদর্শে শিক্ষাদানের। নিবেদিতার সঙ্গে যুক্ত করলেন তাঁর আর এক বিদেশিনী কন্যা ক্রিস্টিনকে। নিবেদিতা ও ক্রিস্টিনের উন্নত জীবনচর্যায় মুগ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের কাজে যেসব বাঙালী মেয়ে যোগদান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথমেই মনে পড়ে ভগিনী সুধীরার কথা। তাঁর বৈরাগ্যদীপ্ত জীবন স্বামীজীর স্ত্রীমঠ স্থাপনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল।
সম্প্রতি প্রকাশিত নিবেদিতা বিদ্যালয়ের স্মারক পত্রিকা থেকে আপনারা জেনেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে ওই বিদ্যালয়-স্থাপন ছিল শ্রীসারদা মঠের আদিপর্ব বা সূচনা—কেবল ‘অ-আ-ক-খ’ শেখানো কখনও এর উদ্দেশ্য ছিল না। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের সর্বপ্রথম প্রকাশিত রিপোর্ট বা প্রস্পেক্টাস-এ স্বামী সারদানন্দ মহারাজও স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন: “স্বামীজীর পরিকল্পনা ছিল ভারতে একটি nunnery বা স্ত্রীমঠ স্থাপন করবেন।” সেইসঙ্গে তিনি ভেবেছিলেন, সাহায্য নেবেন কয়েকজন সুনির্বাচিত, সুযোগ্য পাশ্চাত্য-কন্যার—যাঁরা স্বামীজীর কাছেই ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করেছেন। স্বামীজীর স্বপ্ন ছিল এই ‘nunnery’-তেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার যা-কিছু শ্রেষ্ঠ ও প্রেরণাদায়ী ভাব, তাদের সমন্বয় ঘটবে এবং বীজাকারে যার সূচনা, একদিন সেটিই মহান এক শিক্ষা আন্দোলনের রূপ ধারণ করবে।
প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণার ‘মননের আলো’ থেকে

27th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ