বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

আচরণবিধির ঊর্ধ্বে কেউ নয়

এমন হাস্যকর যুক্তি বোধহয় মোদি সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব! দেশজুড়ে করোনাকালে কেন্দ্রের দেওয়া কোভিশিল্ড টিকায় ছিল প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বীজ। এমন অভিযোগ ওঠার পর টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বীকারোক্তির পরেই ভ্যাকসিনের শংসাপত্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি। এই নিয়ে শোরগোল ওঠায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যুক্তি দিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ায় ওই শংসাপত্র থেকে মোদির ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এই যুক্তি মানলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আচরণবিধি জারি হওয়ার পর কী করে দেশের কোটি কোটি জনতার মোবাইল ফোনে তাঁর বার্তা ‘বিকশিত ভারত’-এর বিজ্ঞাপন করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার? কী করে পশ্চিমবঙ্গের এক বিজেপি প্রার্থীকে তিনি বলতে পারেন, আপনি প্রচারে বেরিয়ে বলুন, এ রাজ্যে ইডি যে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে মোদিজি সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার রাস্তা খুঁজছেন? প্রশ্ন আরও, রেশন ব্যাগে ছবিসহ আরও নানা সরকারি বিজ্ঞাপনে মোদির ছবি যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়েও। আসলে এসব হচ্ছে সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা মাত্র। কোভিশিল্ডের টিকায় জীবনহানির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসায় এখন তার থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে শাসক গোষ্ঠী। কিন্তু যারা একদা এই টিকা বেচে ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে, তারাই এখন নির্বাচন আচরণবিধির ধুয়ো তুলে অজানা আশঙ্কায় দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভোটের আচরণবিধি লাগু হওয়ার পর এই ভণ্ডামির ছবি দেখা যাচ্ছে প্রায় রোজই। কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দল যে আচরণবিধিকে থোড়াই কেয়ার করে, প্রচারে বেরিয়ে তার নিদর্শন রাখছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। গত ১ মার্চ কমিশনের দেওয়া ভোটপ্রচারের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, জাত-পাত সাম্প্রদায়িক আবেগের ভিত্তিতে ভোটের আবেদন জানানো যাবে না। অভিযোগ উঠেছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই নিষেধাজ্ঞা হেলায় অমান্য করছেন। যেমন, প্রচারে তিনি বলেছেন, রামমন্দির নিয়ে বিরোধীরা ‘পাপ’ করেছেন। তাই তাদের ভোট দেবেন না। মোদির প্রচারে পার্বণের সময়ে মাছ মাংস খাওয়া নিয়েও বিরোধীদের আক্রমণ করা হয়েছে। আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে সম্প্রতি রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বিরোধী দলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, কংগ্রেস মনে করে দেশের সম্পদের উপর মুসলমানদের অধিকার সকলের আগে। দেশের সম্পদ বণ্টন করা হবে তাঁদের মধ্যে যাঁদের বেশি সন্তান আছে। আর হিন্দু মহিলাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মঙ্গলসূত্র নিয়ে নেবে। সোনার গয়নার হিসাব করে সম্পদ বিতরণ করা হবে। সংবাদে প্রকাশ, শুধু মোদির বিরুদ্ধেই এমন বিদ্বেষ ভাষণের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কমিশন তার জবাব চেয়ে পাঠিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বিরামহীনভাবে সংখ্যালঘু বিদ্বেষের প্রচার চালিয়েই যাচ্ছেন! এসব দেখে অনেকে কটাক্ষ করে বলছেন, কর্তৃপক্ষের চোখে ‘রাজা কখনওই অপরাধ করতে পারেন না।’ প্রসঙ্গত ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁকে ‘ক্লিনচিট’ দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে কি প্রধানমন্ত্রী সব আচরণবিধির ঊর্ধ্বে?
মোদির এই আচরণবিধি ভঙ্গের স্বেচ্ছাচারিতায় লাগাম পরানোর লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। অন্তত এখনও পর্যন্ত। আর এই কারণেই নির্বাচন এলে তাঁর কথা মনে পড়ে আম জনতার। টি এন শেষন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬—এই সময়ে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থেকে তিনি পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সংবিধান স্বীকৃত একটি স্বাধীন সংস্থার কীভাবে অকুতোভয় হয়ে কাজ করতে হয়। বিধিভঙ্গ করলে জেল জরিমানা এমনকী প্রার্থী পদ বাতিলের কথা বলা আছে আইনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও দেখা যাচ্ছে, অবাধ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট পরিচালনার দায় যে সংস্থার উপর ন্যস্ত সেই নির্বাচন কমিশনই বারবার পক্ষপাতের অভিযোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কি তাদের চোখে প্রধানমন্ত্রী যাবতীয় বিধিনিষেধের ঊর্ধ্বে? ঘটনা হল, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এমন ধারণা কিন্তু ডালপালা মেলছে দ্রুতগতিতে। যা আদৌ প্রত্যাশিত নয়।

4th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ