বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

কমিশনের নজরদারি জরুরি

‘দেশ কে গদ্দারোঁ কো গোলি মারো সালো কো।’—এই হিন্দি স্লোগানের বাংলা মানে, ‘দেশদ্রোহীদের গুলি করে মেরে দাও।’ ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিরুদ্ধে এই স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নালিশ যায় নির্বাচন কমিশনে। সে-বছর ১ মার্চ নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই হেট স্পিচ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয় একাধিক মিডিয়ার প্রশ্নের মুখে পড়েন। জবাবে এই দায় অস্বীকারই করেন তিনি। তবে তাতেই ক্ষান্ত দেননি অনুরাগ, উল্টে সাংবাদিকদেরই ‘মিথ্যাবাদী’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। অনুরাগের দাবি ছিল, ‘আপনারাই মিথ্যে বলছেন। এই কথা আমি কখনোই বলিনি। ঠিক এই কারণেই আমি বলি যে, মিডিয়ার জ্ঞানগম্যি একটু বাড়ানো উচিত।’ ২৭ জানুয়ারির ভাষণ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন তাঁকে এক শোকজ নোটিসে বলে যে, ‘উপর্যুক্ত বিবৃতি থেকে সাম্প‍্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে যেসব বৈষম্য ইতিমধ্যেই আছে, তা আরও বেড়ে যেতে পারে। এই কথার মাধ্যমে আপনি আদর্শ আচরণ বিধি এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন লঙ্ঘন করেছেন।’ জবাবে অনুরাগ ফের দাবি করেন, ‘গোলি মারো সালো কো’ (গুলি করে মেরে দাও) তিনি বলেননি, মন্ত্রী মহোদয় শুধু বলেছিলেন, ‘দেশ কে গদ্দারোঁ কো’ (দেশদ্রোহীদের)। এই কথা বলে তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, বিশাল জনতাই স্লোগানটি দিয়েছিল, অতএব তার দায় তাঁর নয়। পরবর্তীকালে নির্ভরযোগ্য মিডিয়া এই ইস্যুতে যেসব ভিডিও প্রকাশ করে, তাতে পরিষ্কার দেখা যায়, অনুরাগ ঠাকুরের নেতৃত্বেই বিশাল জনতা ওই স্লোগান দিচ্ছে। সেখানে তিনি বলে চলেছেন, ‘দেশ কে গদ্দারোঁ কো’ (স্লোগানের প্রথমাংশ) এবং শেষাংশে ‘গোলি মারো সালো কো’ বলে উৎফুল্ল জনতা অগ্নিবর্ষী স্লোগানটির বৃত্ত সম্পূর্ণ করছে। সুতরাং এই স্লোগান নিয়ে মিডিয়ার সামনে যতই ভালো সাজার এবং সাংবাদিকদের ছোট করার চেষ্টা করুন, তিনি যে সচেতভাবেই ঘৃণার ভাষণটি দিয়েছিলেন তাতে কোনও সংশয় নেই। 
এই কারণে কমিশনও নির্দেশ দিয়েছিল, দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে অনুরাগ ঠাকুরকে বাদ দিতে হবে। একইভাবে সতর্ক করা হয় বিজেপির অপর এক বড় নেতা পরবেশ ভার্মাকে। এই কুখ্যাত স্লোগানটি অবশ্য গেরুয়া রাজনীতিতে তখনও আনকোরা নয়। রাজনীতির গবেষকদের অনুসন্ধান অনুসারে, স্লোগানটি অন্তত ২০১৬ সাল থেকে চলে আসছে। সে-বছর ফেব্রুয়ারিতে, দিল্লিতে এবিভিপির একটি মিছিলে আওয়াজটি শোনা যায়। আরএসএস-বিজেপি অনুগামীদের অভিযোগ, জেএনইউ ক্যাম্পাসে নাকি একটি মহল ‘দেশ-বিরোধী’ স্লোগান দিয়েছে। গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের মিছিলটি ছিল তারই প্রতিবাদে। ওখানেই শেষ নয়, ২০১৯-এর ২০ ডিসেম্বর সিএএ’র সমর্থনে আয়োজিত এক মিছিলে গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের মুখেও উঠে আসে স্লোগানটি। অতঃপর দেশের একাধিক প্রান্তে অশান্তির আবহ সৃষ্টি হওয়ার পরেও বিজেপির লোকজন সংযত হয়নি। ২০২০-র ১ মার্চ কলকাতায় একটি পদযাত্রা থেকেও একইরকম ঘৃণা বর্ষিত হয়। দুর্ভাগ্য এই যে, ওই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্টার অ্যাট্রাকশন ছিলেন অমিত শাহ! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্য সেদিন বাংলার ‘তোষণকারী’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেখানে বিরতি নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুরু করলেন যেন সেখান থেকেই—চলতি নির্বাচন পর্বে দিন তিনেক আগে রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশবাসীর সম্পদ কেড়ে নিয়ে যাদের বেশি সন্তান হয়, সেই সম্প্রদায়ের মধ্যে তা বিলি করে দেবে।’ পরে আরও যোগ করেন, ‘মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রও থাকবে না, কংগ্রেস কেড়ে নেবে।’ বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চললেও লজ্জাবোধ বা সংযম দূর, মোদি নিজ অবস্থানেই অনড়! অন্ধ মেরুকরণের রাজনীতিতে শান দিয়ে মঙ্গলবার আরও বুক বাজিয়েছেন তিনি, ‘যা বলেছি, ঠিক বলেছি!’ এরপর বুঝতে বাকি থাকে কি, গেরুয়া শিবিরের একটি অংশ কোত্থেকে এত আশকারা পাচ্ছে? কেন অযোধ্যা কিংবা গোধরাতেই শেষ হয়নি ভারতের লজ্জা। লজ্জার তালিকা দীর্ঘতর হয়েছে দাদরি, হাতরাস, মথুরা, বুলন্দশহর, সুলতানপুর, আলিগড় প্রভৃতি একের পর এক নামে। খাদ্য, পোশাক নিয়েও জারি রয়েছে নানাবিধ ফরমান। সঙ্গে আছে যোগীরাজ্যের মতো কোথাও কোথাও ‘বুলডোজ’ প্রশাসন পরিচালনার জন্য নির্বোধের হাততালি! গণতন্ত্রের মান নিয়ে আফশোস এখন মুলতুবি থাক, আপাতত সাধারণ নির্বাচনে শান্তি এবং স্বচ্ছতার দিকেই নজর দিক ইসিআই। তার জন্য ‘মহান’ নেতাদের গরমাগরম ভাষা প্রয়োগ ও ভাষণের দিকে তারা সর্বক্ষণ খেয়াল রাখুক যথেষ্ট সাহসের সঙ্গে। কারও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য দেশকে যেন চরম মূল্য দিতে না-হয়।

25th     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ