বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

কণ্ঠস্বরে কীসের ইঙ্গিত?

ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিতে তত বেলাগাম হয়ে উঠছেন নরেন্দ্র মোদি! এতদিন তবু দেখা গিয়েছে, হিন্দুধর্ম, তার সনাতনী ঐতিহ্য, রামমন্দিরের মতো বিষয়গুলিকে নিয়ে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন মোদি। আবার পাকিস্তান বিরোধী জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগকে উস্কে দিতে ধর্মীয় মেরুকরণের মোড়কে প্রচারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ আনছেন তিনি। এবার কোনও রাখঢাক না রেখে মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও সেই মেরুকরণের পথেই হাঁটলেন! সরাসরি বললেন, রামনবমীর আগে চৈত্র মাসের নবরাত্রির সময়ে, বিজয়া দশমীর আগে নবরাত্রি বা দুর্গাপুজোর সময়ে অথবা শ্রাবণ মাসে যাঁরা আমিষ খান, তাঁদের মানসিকতা মুঘলদের মতো। হিন্দুদের পুজোপার্বণের সময়ে আমিষ খাওয়ার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই প্রচার চালাচ্ছে গেরুয়াবাহিনীর লোকেরা। আগেই আমিষ খাবারের উপরে হিন্দুত্ববাদীদের ফরমানের সাক্ষী থেকেছে দেশ। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা তো বটেই, অতীতে দিল্লি পুরসভা রাজধানীতে চৈত্র মাসের নবরাত্রি উপলক্ষে বন্ধ করে দেয় মাছ-মাংসের বিক্রি। মোদির রাজ্য গুজরাতের আমেদাবাদ, ভাবনগর, জামনগরে আমিষ খাবারের স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকী দিল্লিতে দুর্গাপুজোর প্রাঙ্গণে আমিষ খাবারের দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এই জমানায়। শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরের এক সভায় আমিষ খাবারের বিরুদ্ধে ব্যাট ধরে নরেন্দ্র মোদি সেই খাদ্য নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিতে সিলমোহর দিলেন। তাঁর কথায়, ‘দেশের আইন কাউকে কিছু খেতে বাধা দেয় না। এই মোদিও কাউকে আটকায় না। আমিষ বা নিরামিষ খাওয়ার স্বাধীনতা সকলের রয়েছে। কিন্তু নবরাত্রির সময়ে বিরোধীরা (লক্ষ্য রাহুল গান্ধী, লালুপ্রসাদ যাদব, তেজস্বী যাদব) মাছ মাংস খাওয়ার ভিডিও প্রকাশ করে দেশের মানুষকে ব্যঙ্গ করেছে। এদের মানসিকতা মুঘলদের মতো। এরা হিন্দুদের অপমান করেছে, ভাবাবেগে আঘাত করছে।’ প্রশ্ন হল, দেশে নানা জ্বলন্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এবার কি প্রধানমন্ত্রীকে আমিষ নিরামিষ ইস্যুতে মাথা ঘামাতে হচ্ছে? এ কেমন মানসিকতা? 
হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আরএসএস বিজেপি যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগতে চাইছে, মোদির এই বক্তব্য তারই প্রতিফলন। এ কথা ঠিক যে, নবরাত্রি বা বিভিন্ন পুজোপার্বণে হিন্দুদের একটি অংশ নিরামিষ খান। কিন্তু সেই পথ ধরে বাকি অংশের মানুষকেও নিরামিষ খেতে হবে— মোদির বক্তব্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, খাদ্যের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মুছে দিয়ে নিজেদের পছন্দের রুচি-অভ্যাস জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর প্রতিভূরা। এটা ‘তালিবানি’ কণ্ঠস্বর। অনেকেরই আশঙ্কা, তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিবর্তে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পথে হাঁটবেন মোদি। পরের ধাপে এক রাষ্ট্র, এক দল, এক নির্বাচনের আইন হবে। দেশে বিরোধী বলে কিছু থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই ইতিহাস বদলে ফেলা হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় এই দেশে খাদ্যাভ্যাস ও পরিধানেও কি এবার হুলিয়া জারির চেষ্টা চালাবেন দেশশাসক? সেই আশঙ্কা অমূলক নয়। 
কিন্তু মোদি বা আরএসএস-বিজেপি যা চান, দেশের অধিকাংশ মানুষ কিন্তু তা চান না। তাঁরা বরং মানুষের রুচি ও অভ্যাসের উপর সবটা ছেড়ে দিতে আগ্রহী। মোদিবাহিনী যে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার চালাচ্ছে তাও না-পসন্দ দেশের অধিকাংশ নাগরিকের। কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত সিএসডিএস-লোকনীতির সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ভারতের ১০ জন হিন্দুর মধ্যে ৮ জনই ধর্মীয় সহাবস্থানে বিশ্বাসী। প্রবীণদের ৭৩ শতাংশ এবং নবীন প্রজন্মের ৮১ শতাংশ ধর্মীয় বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। আবার উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মনে করেন, দেশের সব ধর্মের মানুষের সমান মর্যাদা পাওয়া উচিত। মোদি হয়তো চান, হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবধারা মেনে দেশের মানুষ আমিষ পরিত্যাগ করুক। কিন্তু তাঁর সরকারের করা সমীক্ষাই বলছে, দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন আমিষ খান। কেউ প্রতিদিন, কেউ সপ্তাহে একদিন, কেউ সুযোগ মতো মাছ, মাংস খান। সমীক্ষা আরও বলছে, মহিলাদের ২৯ শতাংশ এবং পুরুষদের ১৭ শতাংশ কোনও দিন আমিষ খাননি। এঁদের সিংহভাগ হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতের মতো হিন্দিভাষী রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ছবিটা ঠিক উল্টো। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে গড়ে ৯৯ শতাংশ মানুষ আমিষাশী। এই বঙ্গেও ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের পছন্দ আমিষ। এও দেখা গিয়েছে, আমিষ খাওয়ার চল বেশি এমন রাজ্যগুলিতে দুর্গাপুজোর মতো উৎসব পার্বণের সময়ে মাছ-মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে মোদির সওয়াল যে ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন এই, তবে কি আবার ক্ষমতায় এলে নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দিতে হাতে বেত তুলে নেবেন মোদি?

14th     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ