বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

আদালতের দায়িত্ব বৃদ্ধি

প্রতিষ্ঠার তিনবছরের মধ্যে একটি কোম্পানি কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান বা চাঁদা দিতে পারবে না। ভারতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে প্রায় চার দশক যাবৎ। কোম্পানির তরফে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা প্রদানের নিষেধাজ্ঞা কিছু শর্তসাপেক্ষে তুলে দিতে ১৯৮৫ সালে সংসদে ধারা ২৯৩এ সংশোধন করা হয়। ওই শর্তগুলির মধ্যে দুটি হল—(এক) সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটি সরকারের মালিকানাধীন নয় এবং (দুই) তার বয়স তিনবছরের কম নয়। ২০১৩ সালে প্রণীত কোম্পানি আইনের ১৮২ ধারার অধীনে এই শর্ত বহাল রয়েছে। নির্বাচনী বন্ড চালু করার রাস্তা সাফ করতে ২০১৭ সালের ফিনান্স অ্যাক্টের মাধ্যমে ভারতের নির্বাচনী আইন, কোম্পানি আইন এবং আয়কর আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তারপরেও সংশোধিত ১৮২ ধারা ওই শর্তটি ফের বহাল রাখে। যাই হোক, ওই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম শর্তটি মুছে গিয়েছে যাতে বলা ছিল, একটি কোম্পানির রাজনৈতিক চাঁদার পরিমাণ তার পূর্ববর্তী তিনটি অর্থবর্ষের গড় নিট লাভের ৭.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। তবে প্রথম তিনবছরে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা প্রদানের পুরনো নিষেধাজ্ঞাই সংস্থাগুলির উপর বহাল রয়েছে। পূর্বোক্ত ১৮২ ধারা অনুযায়ী, কোনও সংস্থা এই আইন ভেঙে রাজনৈতিক চাঁদা দিলে কঠোর সাজার মুখে পড়বে। ওই সংস্থাকে দেওয়া হবে অর্থদণ্ড। জরিমানার পরিমাণ হতে পারে প্রদত্ত চাঁদার পাঁচগুণ পর্যন্ত। এমনকী, ওই কোম্পানির দায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তাকেও কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। কারাবাসের মেয়াদ হতে পারে ছ’মাস পর্যন্ত। ওইসঙ্গে হতে পারে প্রদত্ত রাজনৈতিক চাঁদার পাঁচগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডও!
এই কঠোর আইনের পাশাপাশি সামনে এল বেপরোয়াভাবে তা লঙ্ঘনেরও  তথ্য: ২০টি নতুন কোম্পানি রাজনৈতিক দলগুলিকে ১০৩ কোটি টাকার চাঁদা দিয়েছে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে পাঁচটির বয়স তখন একবছরেরও কম। সাতটি কোম্পানির বয়স একবছর। বাকি আটটি কোম্পানি দু’বছর পূর্ণ করেছে সবে। আরও লক্ষণীয় বিষয় হল, এই কোম্পানিগুলির হাঁটি হাঁটি পা পা’র শুরু ২০১৯-এর টালমাটাল আর্থিক পরিমণ্ডলে কিংবা বেনজির করোনা দুর্যোগ পর্বে। আরও অবাক হতে হয় যে, এমন এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলি ভূমিষ্ঠ হয়েই কোটি কোটি টাকার বন্ড কিনেছে ‘প্রিয়’ রাজনৈতিক দলগুলির ভাণ্ডার ভরে দেওয়ার জন্য! স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এগুলি আদৌ কোনও সত্যিকার কোম্পানি, নাকি শুধুই কাগুজে? নির্বাচনী বন্ড যেন পেঁয়াজের খোসা! একটির পর একটি স্তর উন্মোচিত হয়ে চলেছে ক্রমেই। শীর্ষ আদালতের গুঁতোয় বন্ডের নাড়ি-নক্ষত্র ফাঁস হতেই বিস্ফোরণের সিরিজ দেখে চলেছে দেশবাসী। সামনে আসছে বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা প্রদান এবং বিনিময়ে প্রতিদান লাভেরও ভূরি ভূরি অভিযোগ।
 এই ধারাবাহিক তথ্য ফাঁসের নবতম সংযোজনের নাম শেল কোম্পানি। বাস্তবে অস্তিত্বহীন এই কোম্পানিগুলির জন্মরহস্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ড নামক আজগুবি স্বচ্ছতার আবিষ্কার। এই মহান আবিষ্কর্তার নাম মোদি সরকার, যার ৫৬ ইঞ্চি চওড়া গর্ব—‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’! কিন্তু নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থার মুখোশ খুলে পড়তেই দিনে দিনে পরিষ্কার হচ্ছে, এই সরকারকে সামনে রেখে শাসক দল বিজেপি কব্জি ডুবিয়েই খেয়েছে! আর তাড়াহুড়ো করে চোখের খিদে মেটাতে গিয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়েও ফেলেছে কিছু। সেসবই কম-বেশি পেয়েছে কয়েকটি বিরোধী দল। এত পাপ মুছে ফেলতে বিরোধী দলগুলির প্রাপ্তিযোগকে রুমালের মতোই ব্যবহার করতে চাইছে মোদির পার্টি। কিন্তু মানুষ যা বোঝার ঝুঝে গিয়েছে। তারা বরং আরও অধীর হয়ে উঠেছে ফর্দার পিছনে আর কী কী দেখা বাকি, সেসব উপভোগের জন্য। কিন্তু শুধু কৌতূহলী জনতার আমোদ মিটিয়েই ক্ষান্ত দিতে পারে না একটি গণতান্ত্রিক সিস্টেম। সংগত প্রশ্ন এই যে—এত সংখ্যক শেল কোম্পানি গজাল কাদের গাফিলতিতে কিংবা ইন্ধনে? কাগুজে কোম্পানিগুলি বহাল তবিয়তে তাদের রাজনৈতিক প্রভুদের সেবা দিল কোন জাদুতে? এসব কোম্পানির আড়ালে আসলে রয়েছেন কোন প্রভাবশালীরা? সেবা প্রদানের বিনিময়ে তাঁরা কী কী ফায়দা ঘরে তুলেছেন? এই ব্যবস্থায় বঞ্চনা ঘটেছে কাদের সঙ্গে? রাজকোষের ক্ষতির পরিমাণই-বা কত? সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্নের লম্বা মালা। এসবের সদুত্তর নিয়ে দোষীদের চিহ্নিতকরণসহ উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার এখনই। বস্তুত ইলেক্টোরাল বন্ড নামক সুবৃহৎ কেলেঙ্কারি ফাঁস করেই বিচার বিভাগের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না, বরং আরও বড় চ্যালেঞ্জ জয়ের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তারা।

12th     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ