বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

প্রতিশ্রুতির অভ্যাস

বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করতে না পারলে অথবা না চাইলে তাঁকে কী বলে? উত্তরটা খুবই সহজ, নরেন্দ্র মোদি। ইতিমধ্যে দু’বার ভোটে জিতে দশ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন। দু’বারই ভোটের মুখে অকাতরে প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, কুর্সি দখলের জন্য এই ‘ব্রহ্মাস্ত্রটি’ প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু কুর্সি দখলের পর প্রতিশ্রুতি পূরণের দায় নেওয়ার কোনও দরকার নেই। বরং এই নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন, ক্ষোভের জবাবে নীরব থাকাই কৌশল হিসেবে বেছে নিতে হবে। পরের ভোটে ফের প্রতিশ্রুতির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রয়োগ করতে হবে। পিছনে ফেরা যাক। ২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরাব। সেই টাকায় প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। সেবার আরও একটা চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। বছরে ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেবে সরকার। তারপরে দশ বছর কেটেছে। এই সময়কালে কেন্দ্র বা রাজ্যের যে কোনও ভোটে মোদিকে তাঁর দুই ‘ব্লকবাস্টার’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে কম কটাক্ষ, বিদ্রুপ, উপহাস শুনতে হয়নি। তবু তাঁর মুখ দিয়ে এনিয়ে একটি শব্দও বের করা যায়নি। ধরা যাক, ২০১৯-এর কথা। সেই কালো টাকা উদ্ধারের গল্প শুনিয়েই রাতারাতি নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রতিশ্রুতির পরিণতির কথা শোনা যাক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্নের মুখে। ৯৮ শতাংশ বাতিল নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরে গেলে কালো টাকা নির্মূল হল কোথায়! ‘আমার ধারণা, এটা কালো টাকাকে সাদা করে ফেলার একটা ভালো পন্থা ছিল।’ ভোটের মুখে এতে বিজেপির অস্বস্তি বাড়লেও প্রতিশ্রুতি বিলিতে মোদি অবশ্য অবিচল! এবার আর দেশ নয়, তাঁর প্রতিশ্রুতির টার্গেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। 
এবার লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজমাতা। কয়েকদিন আগে তাঁকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেন, ‘বাংলায় ৩ হাজার কোটি টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে। এই টাকা গরিব মানুষের। তাঁদের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ ক্লার্ক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। নতুন সরকার গঠন হলে আইনের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে চাই। আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। যাঁরা এই টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে চাই। আপনি বাংলার মানুষকে একথা বলুন।’ কোনও দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা এমন প্রতিশ্রুতি দিলে কেউ তা গায়ে মাখত না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি ঘিরে একরাশ প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। কারণ, নিয়ম হল, বাজেয়াপ্ত টাকা আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল হেড অফিসে জমা রাখতে হয়। প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা পিএমএলএ আইন অনুযায়ী মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত টাকা ব্যবহার করা যায় না। সুতরাং সব মামলার নিষ্পত্তি হয়ে অভিযোগ প্রমাণের আগে কী করে সেই অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী? তাছাড়া ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পাওয়াটাও একটি অপরাধ। যিনি ঘুষ দেন, আইনের চোখে তিনি কি অপরাধী নন? সুতরাং কোন যুক্তিতে তাঁকে টাকা ফেরত দিতে পারে রাষ্ট্র? তাই ভোটের মুখে এও একরকম ‘জুমলা’ বলে মনে করছে বিরোধীরা। মোদি সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে নানা প্রতিশ্রুতির মোড়কে মানুষের আস্থা অর্জনের মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন নমো। 
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, কোনও একটা পদ্ধতি-নিয়ম-আইন করে বাংলায় ইডির বাজেয়াপ্ত করা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন মোদি। তাহলেও প্রশ্ন ওঠে, ইডি কি শুধুই পশ্চিমবঙ্গে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে? তাঁর সরকারের মন্ত্রী গতবছর সংসদে তথ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৩-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। তাহলে কেন এই সব টাকাই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন না মোদি? বিরোধীদের অভিযোগ, একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে সরকারি প্রকল্পের বরাত পেতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ অর্থ ‘কাটমানি’ হিসেবে আদায় করে শাসকগোষ্ঠী। মোদি কি এই বিপুল অর্থ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন? অথবা কোটি কোটি টাকা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত যাঁরা বিজেপিতে নাম লিখিয়ে ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের থেকে সেই অর্থ বাজেয়াপ্ত করে তিনি কি তা ফেরানোর ব্যবস্থা করবেন? এসবের উত্তর সকলেরই জানা। আসলে আমাদের ‘ধর্মভীরু’ প্রধানমন্ত্রী রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও নিজে এসব ধর্মের কথা শুনতে নারাজ। ঘটনা পরম্পরা বলছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। সেই অভ্যাস তিনি বদলাবেন, এমনটা আশা করলে আবার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

2nd     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ