বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

‘ম্যাজিক’ প্রত্যাখ্যান

কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে তাঁর দীর্ঘ কনভয় রাজপথ ধরে এগিয়ে চলেছে। হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি দু’দিকের জনতার উদ্দেশে হাত নেড়েই চলেছেন। এমন সুসজ্জিত শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারের ব্যারিকেডের ওপারে ঠায় দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ। তাঁদের অনেকে ফুল ছুড়ছেন, মোবাইলে ছবিও তুলছেন। এমন উষ্ণ অভ্যর্থনায় আপ্লুত তিনি মোট পাঁচটি ‘রোড শো’ করে ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেললেন। তবু শেষরক্ষা হল না। কর্ণাটকের ভোটের ফলাফল বুঝিয়ে দিল, মোদি-ম্যাজিক ধরা পড়ে গিয়েছে। তার আর কোনও আকর্ষণ নেই। গত বছরের শেষের দিকে পাহাড়ি রাজ্য হিমাচলে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়ে ক্ষমতা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপি’র। শনিবার লোকসভার ‘সেমি ফাইনাল’ ম্যাচে হাতছাড়া হল কর্ণাটক। দু’টি রাজ্যেই কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেরুয়া শিবিরের কফিনে পেরেক পুঁতে দিয়েছে। দক্ষিণের একমাত্র এই রাজ্যে নিজেদের সরকার ধরে রাখতে সবরকম তাস খেলেছিল মোদির দল। কিন্তু কর্ণাটকের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দক্ষিণ ভারত থেকে মুছে গেল তারা। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে চলতি বছরেই নির্বাচন রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মিজোরামে। কর্ণাটকের ভোটের ফলাফলের প্রভাব এইসব রাজ্যে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিজেপিকে কেন হারতে হল কর্ণাটকে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যে কোনও সরকারি কাজে চল্লিশ শতাংশ ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। পাশাপাশি ছিল সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কদর্য বহিঃপ্রকাশ, যা গেরুয়া শিবিরের নিজস্ব এজেন্ডা। কর্ণাটকের বিজেপি সরকার স্কুল-কলেজে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে, আবার ‘হালাল’ মাংস বাজারে বিক্রির উপর বিধিনিষেধ জারি করে। বোম্মাই সরকারের শেষ পদক্ষেপ ছিল, রাজ্যের চার শতাংশ মুসলিম ভোট বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা। বিজেপি চেয়েছিল, রাজ্যের দুই প্রধান হিন্দু জনগোষ্ঠী লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগাদের মধ্যে মুসলিম বিরোধিতার আবেগ উস্কে দিয়ে সব হিন্দু ভোট পেতে। কিন্তু বিভাজনের সেই অঙ্ক মেলেনি।
কথায় আছে, সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। কর্ণাটকের ভোট গণনার শুরু থেকেই সেই আপ্তবাক্যকে মনে করিয়ে দিয়েছে। দেখা গিয়েছে, সময় যত গড়িয়েছে এগিয়ে থাকার নিরিখে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি’র আসনের ব্যবধান তত বেড়েছে। বস্তুত এদিন সকাল থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী কংগ্রেস কর্মীরা দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু সর্বত্র আবির খেলায় মেতে ওঠেন। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে গতবারের চেয়ে অনেকটাই আসন কমেছে বিজেপি’র। তবে তাদের ভোটের হার কম-বেশি একই রয়েছে। অন্যদিকে, আসন ও ভোটের হার অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। ভোটের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হলে ‘কিংমেকার’-এর ভূমিকায় দেখা যেত রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি জনতা দল (সেকুলার)-কে। সেক্ষেত্রে কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছেড়ে দিয়ে সমঝোতার পথে হাঁটতে হতো কংগ্রেস বা বিজেপিকে। কিন্তু কংগ্রেস একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় সেই সম্ভাবনা আর নেই। যদিও টাকার বিনিময়ে দল ভাঙিয়ে ভবিষ্যতে কর্ণাটকের গদি দখলের চেষ্টা যে করবে না গেরুয়াবাহিনী, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ এই কাজে যথেষ্ট পারদর্শী পদ্মশিবির।
কর্ণাটকের ফলাফল যদি বিজেপি’র কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয় তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেসকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। দেশজুড়ে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো আন্দোলন কর্ণাটকের ফলাফলে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানও কাজ করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘কংগ্রেস মুক্ত’ ভারত গঠনের স্বপ্নও অধরা থেকে গেল। নিঃসন্দেহে এই ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস দলের গুরুত্বকে ফের সামনে আনতে সাহায্য করবে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, কর্ণাটকের ফলাফলে ভালোবাসার জয় হয়েছে, ঘৃণার নয়। ’২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির পরাজয় চাইছে প্রায় সব বিরোধী দল। গেরুয়াবাহিনীকে হারাতে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী দেওয়া নিয়েও বিরোধী পরিসরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস, বামেদের মতো জাতীয় দলগুলির সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা আঞ্চলিক দলগুলির এক হয়ে একটা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প মঞ্চ তৈরি করতে হবে। কাজটা কঠিন সন্দেহ নেই। কিন্তু মোদি সরকারের জনবিরোধী নীতি, বিভাজনের রাজনীতি এবং দুর্নীতির কারণে গোটা দেশে যে একটা বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তার আভাসও মিলছে। এই পরিস্থিতিটাকে কাজে লাগাতে হবে। কর্ণাটকের ফলাফল সেই পথেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

14th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ