বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বিজেপির রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান

বিপ্লবের তত্ত্বকথায় গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার কথা বলা হয়। কিন্তু এর উল্টোপথে হেঁটে শিলিগুড়িতে শহরের পর গ্রামও দখল করে নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। সেইসঙ্গে উপরি পাওনার মতো পাহাড়ে এই প্রথম শক্ত জমির উপর পা রাখল ঘাসফুল। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রের জেলা দার্জিলিং পাহাড়, শহর ও গ্রাম সর্বত্র সবুজের বিচরণ। সেখানে উধাও বিজেপি। আর একদা শাসক বাম-কংগ্রেসকে খুঁজতে হচ্ছে দূরবীন দিয়ে। পাহাড়ের জিটিএ, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ছাড়াও বুধবার ছিল রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার ৬টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন। গোটা রাজ্যের বিচারে হয়তো তা এমন কিছুই নয়। কিন্তু এই যৎসামান্য ভোটের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে বাম অথবা বিজেপি অর্থাৎ রাজ্যের বিরোধী দলগুলির দুর্গ একে একে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের ফলাফল। তথ্য বলছে, এই মহকুমা পরিষদ এলাকায় দুটি বিধানসভায় গত ভোটে জিতেছিল বিজেপি। আবার ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হলেও এই মহকুমা পরিষদ দখলে রেখেছিল বাম-কংগ্রেস। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে পাল্টে দিয়ে সেখানে ঘাসফুলের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে এবছর। গত ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়ি পুরসভা বাম-কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। এবার সমতলের নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়ার মতো দুর্ভেদ্য গ্রামীণ এলাকাতেও রাম-বামকে হটিয়ে ঘাসফুল ফুটল সর্বত্র। ভোটের ফলাফল বলছে, ত্রিস্তরের মহকুমা পরিষদে ৯টির মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৮টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬৬টি আসনের মধ্যে ৫৫টি এবং ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি দখল করেছে মমতার দল। পাহাড়েও চমকপ্রদ সাফল্য তৃণমূলের। সুভাস ঘিসিং থেকে বিমল গুরুং—সব আমলেই জিটিএতে ছিল একদলীয় শাসন। দশবছর পর সেখানকার নির্বাচনের মাত্র ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে পাঁচটি দখল করেছে তৃণমূল। যে অনীত থাপার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় গোর্খা গণতান্ত্রিক মোর্চা এবার জিটিএ দখল করেছে, তাদের সঙ্গেও মমতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সুতরাং এটা পরিষ্কার, উত্তরবঙ্গের পাহাড় থেকে সমতলে এবার পূর্ণমাত্রায় তৃণমূলের রাজত্ব শুরু হল। আর উত্তরবঙ্গের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে গেরুয়া শিবির। কারণ তাদের তথাকথিত গড়েই ধূলিসাৎ হয়েছে পদ্মপার্টি। তাই পাহাড়ে জিটিএ এবং সমতলের শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ফলাফলকে একটু বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হবে ’২৪-এর লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গকে গেরুয়া শূন্য করার লক্ষ্য নিয়েই এগচ্ছে তৃণমূল। অন্যদিকে পুরসভার উপ নির্বাচনগুলিতেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে তৃণমূল। প্রমাণ হচ্ছে বাংলার মানুষের আস্থা সেই মমতাতেই।
দেখা গিয়েছে, গত কয়েকবছর ধরে বিজেপির কোনও কোনও নেতা, জনপ্রতিনিধি বাংলাভাগের জোরালো দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে বিজেপির গড় থেকেই এই দাবি সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে আলাদা রাজ্য গঠনের দাবিও তুলেছিল বিজেপি। প্রতিবারই এই দাবির বিরোধিতা করে মমতা বলেছেন, শরীরে রক্ত থাকতে তিনি বাংলা ভাগ হতে দেবেন না। এই স্বল্প পরিসরের নির্বাচনেও যেন মমতার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সেই বার্তা আরও জোরালোভাবে ছিল। জিটিএ এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের ফলই ‘ভাগের রাজনীতি’ খারিজ করে দিল। এই প্রথম শক্তি বাড়িয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে ক্ষমতায় এল তৃণমূল। ঘটনা হল, শুধু পাহাড় বা সমতল নয়, ৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ভোটের ফলাফলেও বিজেপির শোচনীয় হাল—তারা তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে।
ইতিহাস বলছে, ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে গেরুয়া বাহিনী ১৮ জন সাংসদকে জিতিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তৃণমূলের গায়ে তকমা ফেলার চেষ্টা হয়েছিল ‘দক্ষিণবঙ্গে’র দল বলে। তারপর থেকে এরাজ্যে যত নির্বাচন হয়েছে তার সব ক’টিতেই বিজেপির গ্রাফ নিম্নমুখী। এতেই স্পষ্ট, যারা বিচ্ছিন্নতার কথা বলে তাদের বাংলার মানুষই প্রত্যাখ্যান করে। তাই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে গেরুয়াবাহিনীর। আর বামেরা যেন অস্তিত্ব হারিয়ে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। সেইসঙ্গে মমতার দলের জনভিত্তি বেড়েই চলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না তৃণমূল দক্ষিণবঙ্গে বরাবরই শক্তিশালী। দক্ষিণবঙ্গের ভাটপাড়া, দক্ষিণ দমদম, দমদম, পানিহাটি—এই পুরসভাগুলির ৪টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে ৪টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। আর পুর উপনির্বাচনে ৬টি ওয়ার্ডেই হয়েছে বিজেপির জামানত জব্দ। ব্যতিক্রম আছে। ৩২ বছর পর খাতা খুলে চন্দননগর পুরনিগমের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বামেদের দখলে গিয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গে ৬টি পুরসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল ৪টি, কংগ্রেস ও সিপিএম ১টি করে ওয়ার্ড দখল করেছে। এই ফলাফল ফের প্রমাণ করল বাংলার মানুষ হানাহানি, বিভাজন চায় না, চায় উন্নয়ন। আর এই উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই মমতার সরকার এগিয়ে চলেছে। তাই জনতার রায় তাদের পক্ষেই থাকল।

1st     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ