বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

চোর-পুলিস খেলা আর কত?

সবচেয়ে দূষণ সৃষ্টিকারী দেশগুলির একটি হল ভারত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লুএইচও) মতে, সর্বাধিক দূষিত পরিবেশের দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান পঞ্চম। ২০২১-এ প্রস্তুত তালিকা অনুসারে, তবে দিল্লিই হল সবচেয়ে ভয়াবহ দূষণের শিকার রাজধানী শহর! বায়ু, শব্দ, মাটি, জল প‍্রভৃতি দিক থেকে দূষণ পরিমাপ করা হয়। বাতাস দূষণের কারণ গাড়ির ধোঁয়া (তার মধ্যে সর্বাধিক দায় ব্যক্তিগত গাড়ির, ৭২ শতাংশ), রান্নায় ব্যবহৃত জ্বালানি, কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক মিশ্রিত ধোঁয়া, পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পগুলির ধুলো, আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া ইত্যাদি। মাটি এবং জল দূষণের জন্য মূলত দায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এবং মাটিতে মিশে যাওয়ার পক্ষে অনুপযুক্ত নানা ধরনের জিনিস—তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্লাস্টিক ও ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য। জনজীবনের ব্যস্ততা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল করোনার ভয়ে দেশজুড়ে জারি করা লকডাউনের সময়। আনলকের প্রথম দিকের পর্বগুলিতেও জনজীবনে স্বাভাবিকতার ছাপ ছিল না। ২০২০ ও ২০২১ সালের কয়েক মাসের সঙ্গে, তার আগে-পরের বাকি সময়ের পরিবেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের রিপোর্ট আমাদের সকলের জন্যই এক বিস্ময়—করোনা পর্বে ভারতের বাতাস এবং জল ছিল বেশ স্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে, স্বাভাবিক সময়ে ভারতবাসীকে বাঁচতে হয় নরকতুল্য এক পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই পরিবেশে সবচেয়ে অসহায় শিশুরা এবং বয়স্ক অসুস্থ মানুষগুলি। 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ভারতের বিষয়টি নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের পক্ষে করণীয় কিছু পরামর্শও দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল। দুর্ভাগ্য এই যে, সরকার তাতে কতটা কর্ণপাত করে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে পরিবেশ কর্মীদের। সবচেয়ে অবাক করে ভারতের রাজনীতি। কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে পরিবেশ বিষয়টি এমনকিছু গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না। দলগুলি মূলত ব্যস্ত থাকে ধর্ম আর জাতপাতের অঙ্ক নিয়েই। বিপন্নপ্রায় পরিবেশের বিষয়টি সব পার্টির নির্বাচনী ইস্তাহারে অগ্রাধিকারের জায়গা করে নিতে ব্যর্থই হয়েছে। তবে, একটি জিনিস অস্বীকার করা যাবে না যে মাঝেমধ্যেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বর্জনের হুঙ্কার শোনা যায় দেশজুড়ে। যেমন এবার হুকুম জারি হয়েছে, ১ জুলাই থেকে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, তৎসহ অনুরূপ অন্যসকল জিনিসপত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। অবশ্য এমন উদ্যোগকে সরকার বাহাদুরের সচেতন বিবেকের ডাক বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। গ্রিন ট্রাইব্যুনালের গুঁতো সামলাতে না পেরেই মোদি সরকারের এই নড়েচড়ে বসা। নিন্দুকেরা বলেন, তাও যথেষ্ঠ বিলম্বে এবং নিতান্ত নিমরাজি হয়েই। 
সরকারের এই পদক্ষেপ অবশ্যই স্বাগত। কোনও পক্ষের নৈতিক বিরোধ কিছু নেই, কারণ আপন ভালো পাগলেও বোঝে, যদিও স্বতঃসিদ্ধ নয় যে ভারতবাসী পাগলের থেকে উত্তম! তবে, এখানেই জিজ্ঞাসা, এমন হুকুম বা নিষেধাজ্ঞা অতীতেও অনেক বার জারি হয়েও নীরবে থমকে যেতে হয়েছে কেন? কেন প্রশাসন তার সিদ্ধান্তে অনড় ও কঠোর থাকতে পারেনি? এর উত্তরটি সোজা—হুকুম বা সিদ্ধান্তের গোড়ায় রয়েছে গলদ। গত কয়েক দশকের জনজীবন প্লাস্টিকের নানা ধরনের জিনিস ব্যবহারে নিবিড়ভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এসব জিনিসের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চাহিদা জন্ম দিয়েছে একটি পৃথক অর্থনীতির। শিল্পমহলের হিসেবে, এই অর্থনীতির বহর প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার। মানুষের এই বিপুল চাহিদা মেটাতে দেশজুড়ে হাজার হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। সেসব সংস্থায় কয়েক লক্ষ মানুষ কাজ করেন। প্লাস্টিক শিল্প পরোক্ষভাবেও আরও বহু পরিবারের রুটিরুজির ভরসা হয়ে উঠেছে। ভারতের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির পক্ষে এই আর্থিক কর্মকাণ্ড কোনওভাবেই হেলাফেলার নয়। অতএব, অতীতে এমন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা চলেছে, তা কখনওই ছোট ছেলেমেয়েদের চোর-পুলিস খেলার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। বিপদ জেনেও মানুষ ধীরে ধীরে ফিরে গিয়েছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহারে, এবং বার বার। অন্যদিকে, সরকারও নিখুঁত অভিনয় করে চলেছে ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায়। নীরব সমঝোতা নামক এই অসততা থেকে ভারতকে বাঁচাবার প্রকৃত রাস্তা খুঁজতে হবে সরকারকে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের উপযুক্ত বিকল্পের সন্ধান দিতে হবে দ্রুত। তার জন্য পরিবেশবিদ, আন্তর্জাতিক মহল এবং শিল্প-অর্থনীতির পণ্ডিতদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। অন্যথায়, ভারত খুব তাড়াতাড়ি বসবাসের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।                

29th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ