বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অগ্নিপথে তরজা

নরেন্দ্র মোদিদের আসল উদ্দেশ্যটা বোধহয় সর্বসমক্ষে বলেই ফেললেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন কৈলাস। মধ্যপ্রদেশের এই ডাকসাইটে গেরুয়া নেতা ইন্দোরে বসে রবিবাসরীয় সাংবাদিক বৈঠকে মোদির সাধের ‘অগ্নিপথের’ গুণাগুণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘মোদি-শাহের’ আসল উদ্দেশ্যটাই কার্যত জানিয়ে দিলেন। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘অগ্নিবীর’ নামে যেন ‘ঠিকা সেনা’ নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে মোদি সরকার। নিয়োগ মাত্র চার বছরের জন্য। তারপর ২৫ শতাংশকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। বাকি ৭৫ শতাংশের হাতে থাকবে শুধুই পেন্সিল! এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গত ক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে এবার হুঁশিয়ারি দেওয়াও শুরু করল! যাঁরা বিক্ষোভ আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন, তাঁরা অগ্নিবীরের জন্য আবেদন করতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না। দেশের যুবশক্তির একটা অংশ প্রতিদিন রাস্তায়, রেললাইনে নেমে অগ্নিপথে আগুন ধরাচ্ছে। এই প্রকল্প ঘোষণার দিন থেকে হাজারো প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম হল, চার বছর পরে ‘ঠিকা সেনাদের’ ভবিষ্যৎ কী হবে? কৈলাস যেন সেই মোক্ষম প্রশ্নের জবাবটাই দিয়ে দিলেন। বললেন, বিজেপি কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন অগ্নিবীররা। সহজ বাংলায় মানেটা দাঁড়ায়, চার বছর বাদে অবসর গ্রহণের পর অগ্নিবীররা বিজেপির পার্টি অফিসের দারোয়ান পদে কাজ পাবেন। তিনি সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন, যাঁরা মোদির স্বপ্নের মিশন সফল করতে দেশসেবার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাতে যোগ দিয়ে অগ্নিবীর হবেন জনমানসে তাঁদের স্থান অনেক উঁচুতে। তাঁরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন না, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য দেশসেবা। আর ভারতীয় সেনাদের বীরত্বকে দেশবাসী সবসময়েই কুর্নিশ জানায়। বলাই বাহুল্য, তাঁরা ভবিষ্যতে বিজেপি অফিসে গার্ড দেওয়ার বা বিজেপির ক্যাডার হওয়ার বাসনায় দেশসেবার মহান ব্রত নিচ্ছেন না। তাই বিজয়বর্গীয় এহেন মন্তব্য দেশের যুবসমাজ, পাশাপাশি সেনাদের জন্য অসম্মানজনক, আপত্তিকর। এমন বেফাঁস মন্তব্য করার আগে বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উচিত ছিল সেনাদের প্রাপ্য সম্মান নিয়ে একবার ভাবা।
‘অগ্নিপথ’ নিয়ে প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা আগুন নেভাতে যখন কেন্দ্রের নাজেহাল দশা তখন বিজয়বর্গীয় মন্তব্য যেন সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিল। তাই যুবসমাজ ও সেনার অসম্মান নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। স্পষ্টতই বিজেপিও খানিক অস্বস্তিতে বেকায়দায়। তবে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে চূড়ান্ত ব্যর্থ এই গেরুয়া শাসকের মনের কথাটাই জানিয়ে কৈলাস পরোক্ষে যেন বিরোধীদের অভিযোগকেই মান্যতা দিলেন। শুধু তিনি নন, বিজেপিরই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিতর্ক উস্কে দিয়ে যা বলেছেন তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। কী বলেছেন তিনি? বলেছেন, অগ্নিপথে দক্ষতা বৃদ্ধির পথে হাঁটবে কেন্দ্র। নাপিত, ধোপা, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভারের কাজ শেখানো হবে। চার বছর ট্রেনিংয়ের পর সেইসব তাঁদের কাজে লাগবে। একথা ঠিক, সেনাবাহিনীকে যাঁরা যোগদান করেন তাঁদের আধুনিক অস্ত্রসজ্জার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রাত্যহিক জরুরি কিছু কাজও শিখতে হয়। তার মানে কি অগ্নিপথ প্রকল্পে থাকাকালীন যাবতীয় আধুনিক অস্ত্রসজ্জায় অগ্নিবীররা প্রশিক্ষিত হওয়ার পর মন্ত্রীমশাইয়ের পরামর্শ মতো পরবর্তীকালে তাঁদের ধোপা, নাপিত, ড্রাইভার ইত্যাদি পেশা বেছে নিতে হবে? নাকি অগ্নিবীরের চার বছরের মেয়াদ শেষে সঙ্ঘ পরিবার ওই যুবশক্তিকে ক্যাডারে রূপান্তরিত করে তাদের নিজস্ব কাজে লাগাবে? আরও আশঙ্কা থাকছে, আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারদর্শীরা পরবর্তীকালে বেকারত্বের জ্বালায় হত্যাশাগ্রস্ত হয়ে পাড়ায় পাড়ায় বানর সেনার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না তো? এদেরই হয়তো গেরুয়া বাহিনীর বাহুবলী শক্তি করতে চাইছে বিজেপি। দলীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগে অগ্রাধিকারের কথা বলে যেন বিজেপি নেতা কৈলাস সেই পরিকল্পনাকে ফাঁস করে দিয়েছেন! কিন্তু যাঁরা দেশসেবার মহান ব্রত নেন তাঁদের স্বপ্ন কখনও বিজেপি অফিসের দ্বাররক্ষী হওয়া হতে পারে না। এই সহজ সত্যটা গেরুয়া নেতৃত্ব ভুলে গিয়েছেন। বিতর্কের ঝড় ওঠায় শেষপর্যন্ত কৈলাস বিজয়বর্গীয় ঢোঁক গিলে তাঁর মন্তব্যকে ভুলভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে বলে দায় সেরেছেন। যদিও তাঁর দুঃখপ্রকাশ করাই উচিত ছিল। 
মোদি জমানায় এত দিন পর্যন্ত দেশের যুবসমাজের সামনে ছিল চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি। দেশের ‘চৌকিদার’(তাঁর দাবি) নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি চাকরির। কিন্তু আট বছরে ১৬ কোটি চাকরি দূরঅস্ত। তাঁর জমানায় কাজ হারিয়েছেন অনেকে। নতুন করে বেকার হয়েছেন। এবার অগ্নিপথ প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদে ‘ঠিকা সেনার’ নিয়োগের খুড়োর কলটি ঝুলিয়ে দিল কেন্দ্র। মেয়াদ শেষে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী তা কেউ জানে না। তাই সঙ্গত কারণেই অগ্নিপথ ইস্যুতে তরজা চলছে। ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফুঁসছে যুবশক্তি। এরই মাঝে অবমাননাকর মন্তব্য করে চলেছেন গেরুয়া নেতারা। আর অতীতের মতোই নেতাদের সংযত না করে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী! তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই বক্তব্যে তাঁরও সায় আছে।

21st     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ