বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অসার প্রতিশ্রুতি

তিনি, নরেন্দ্র মোদি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন, এমন কথা কে বলবে? প্রধানমন্ত্রী পদে আট বছর ক্ষমতায় রয়েছেন মোদি। এই সময়ে একমাত্র রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি রক্ষা আর হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির এজেন্ডাকে সুকৌশলে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কথা দিয়ে কথা রাখার খেলাপের বিষয়ে তিনি রেকর্ড করে ফেলেছেন। যেমন তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বছরে দু’কোটি লোকের চাকরি হবে। পা পিছলে এখন নতুন মোড়কে তাঁর গল্প, আগামী দেড় বছরে চাকরি পাবেন দশ লক্ষ ছেলেমেয়ে! প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের অখণ্ড সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করবেন। ঘটনা হল, তাঁর আমলেই রাজপথ প্রতিনিয়ত কলঙ্কিত হচ্ছে বিভেদ তৈরির পরিকল্পিত চেষ্টায়। সাধারণ মানুষকে ‘ভালো’ রাখার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল মোদির প্রচারে। অথচ মানুষ ভালো নেই। তাঁর জমানায় এই আট বছরে পাইকারি ও খুচরো বাজারে জিনিসপত্রের দাম সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। পেট্রপণ্য ও গ্যাসের দামবৃদ্ধির জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে গরিব মানুষের। মোদি জমানা শুরুর আগে তাঁর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করা হবে একশো দিনের মধ্যে। তা দিয়ে দেশের মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় কী! বস্তুত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কালো টাকা উদ্ধারের ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিন তিনি সেই সময়ের ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে আক্রমণ করতেন। অদৃষ্টের চরম পরিহাস হল, পরপর দু’বার ক্ষমতায় এলেও তাঁর সরকার এক টাকাও কালো টাকা বিদেশ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। উল্টে গত ১৪ বছরের মধ্যে রেকর্ড করে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমা টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা যায়, করোনাকালে অর্থাৎ গত দু’বছর দেশের মানুষের চরমতম দুর্ভোগের সময় ভারতীয় কতিপয় শিল্পপতি-রাজনীতিবিদদের গচ্ছিত টাকার অঙ্ক একলাফে বেড়েছে অনেকটাই। ২০২০ সালে অঙ্কটা ছিল ভারতীয় টাকায় ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০২১-এ তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ৫০ শতাংশ বেশি। আর প্রাক-করোনা পর্বের (২০১৯) তুলনায় যা ১৮৩ শতাংশ বেশি। এই পরিসংখ্যান আরও একবার প্রমাণ করে দেশের মুষ্টিমেয় ধনী সম্প্রদায়ের সম্পত্তি বৃদ্ধিকেই পাখির চোখ করে এগচ্ছে মোদি সরকার। সেই লক্ষ্যেই কয়েকটি বাছাই করা শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য দেশে বিদেশে সরকারের তৎপরতাও লক্ষণীয়। এদেরই কেউ আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পরে বিদেশে গা ঢাকা দেয়! তাদের বিরুদ্ধে সরকার কিছু করে উঠতে পারে না। নেয় নীরবতার আশ্রয়।
আসলে গোড়া থেকেই এই সরকার বড়লোকের বন্ধু। গরিবের স্বার্থরক্ষার কথা ভাবে না। মুখে কালো টাকা উদ্ধারের হম্বিতম্বি করলেও নেয় না প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তাই দেশেও ফেরে না কালো টাকা। উল্টে কালো টাকা উদ্ধারের গল্প ফেঁদে আচমকাই হয় নোটবন্দি। দুর্ভোগে পড়েন দেশবাসী। আর সুইস ব্যাঙ্কে মুষ্টিমেয় কিছু ভারতীয়ের গচ্ছিত আমানত ফুলেফেঁপে ওঠে। বলা যায়, কালো টাকা উদ্ধারে মোদি সরকার সম্পূর্ণভাবেই ব্যর্থ।
প্রশ্ন হল, গোটা বিশ্বের দরবারে কেন এত রমরমা সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাঙ্কের? আসলে নাম পরিচয় গোপন রেখে, ন্যূনতম পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকলেই যে কোনও বিদেশি সেখানে গ্রাহক হতে পারেন। সেখানে সাদা টাকার পাশাপাশি ‘কালো’ টাকা জমা রাখার সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হন একশ্রেণির ধনী মানুষ। অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য ধনীদের স্বর্গরাজ্য সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কগুলি। নিজের দেশের ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে মোটা অঙ্কের ট্যাক্স অর্থাৎ করের বোঝা চাপে। সেখানে রাখলে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আছে। সেই কারণেই ভারত বাংলাদেশ-সহ উন্নয়নশীল দেশে সুইস ব্যাঙ্ক অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ, সেখানে টাকা রাখার জন্য সেভাবে কৈফিয়তও দিতে হয় না। তবে ২০১৮ সালে সুইস সরকার জানায়, বিদেশি নাগরিকদের কারা কারা কত টাকা সেখানে রাখছেন সেই তথ্য পাবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার। মোদি সরকার সেই তথ্য সংগ্রহে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নিয়েছে কি? নিয়েছে কি কালো টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ? যদি নিত তাহলে নিশ্চয়ই কালো টাকা উদ্ধার হতো। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। কিন্তু তা হয়নি। বরং কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি যে ‘নোটবন্দির’ ঘোষণা করেছিলেন তা অসার প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ‘বন্ধুদের’ বাঁচাতেই কি কালো টাকা নিয়ে চুপচাপ তাঁর সরকার? সুইস ব্যাঙ্কে জমা থাকা সব টাকাই যে কালো টাকা তা নিশ্চয়ই নয়। তবু সেখানে যদি কালো টাকা থাকে তাহলে তা উদ্ধারে সরকারের এত অনীহা কেন? এবার অন্তত সুইস ব্যাঙ্কে এদেশের কাদের গচ্ছিত অর্থ রেকর্ড পরিমাণ বাড়ল তা খতিয়ে দেখুক সরকার। দেশে কালো টাকা ফেরাতে এই উদ্যোগ নেওয়াটা ভীষণই জরুরি।

19th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ