বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মাদক বাজারের লক্ষ্য 

অটলবিহারী বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনবার। তাঁর প্রথম দু’দফার সরকারের অকাল পতন হয়। বাজপেয়িজির পূর্ণ মেয়াদের এনডিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৯ থেকে ২২ মে, ২০০৪ পর্যন্ত। ভারতীয় সমাজের উপর নিষিদ্ধ ড্রাগের প্রভাব কেমন? এ সম্পর্কে যৌথভাবে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম এবং ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক। কিন্তু রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও তার প্রকাশ দেড় বছর আটকে ছিল। বিজেপি সরকার রিপোর্টটি প্রকাশের অনুমতি দেয়নি। কারণ, রিপোর্টে এই সত্য বেরিয়ে এসেছিল যে নিষিদ্ধ ড্রাগ বা মাদকের প্রভাব ভারতীয় সমাজের গভীরে বাসা বেঁধেছে! ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভেতেও কমবেশি একইরকম তথ্য সামনে এসেছিল। বিশেষজ্ঞদের এমন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসক শ্রেণি একমত হতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই তথ্য কোনওভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি যথেষ্ট অস্বস্তিকর। মাস কয়েক পরে ক্ষমতাসীন হয় মনমোহন সিংয়ের ইউপিএ সরকার। নতুন সরকার খোলা মনেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে। সংশ্লিষ্ট বছরে ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভেতে ১২-৬০ বছরের মধ্যেকার ৪০ হাজার পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এছাড়া অন্যভাবে সমীক্ষার আওতায় আনা হয় মহিলা, জেলবন্দি এবং গ্রামীণ ও সীমান্ত এলাকার লোকজনকে। তাতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভারতে মদ, গাঁজা, ভাং, আফিম এবং হেরোইনের নেশা মারাত্মক আকার নিয়েছে। ইঞ্জেকশন আকারে নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণের চলও রয়েছে এই সমাজে। সমীক্ষার সময় ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটির কিছু বেশি। তার ভিত্তিতে রিপোর্টের বক্তব্য: দেশে মদ্যে আসক্ত মানুষের সংখ্যা সওয়া ৬ কোটি, ৮৭ লক্ষাধিক মানুষ গাঁজা-ভাংয়ের নেশা করে, ২০ লক্ষের মতো মানুষ আফিমসেবী, ৬ লক্ষের মতো লোক যন্ত্রণা উপশমের নেশাদ্রব্য নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে ১৭-২৬ শতাংশ এইসমস্ত নেশার দ্রব্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের অবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসা জরুরি।
‘ড্রাগ একান্তই একটি শহুরে সমস্যা’—এই মিথ ভেঙে দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং ভারত সরকারের যৌথ সমীক্ষা। ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম-এ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক প্রতিনিধি গ্যারি লিউসের বক্তব্য, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেওয়া এবং নেশা সংক্রান্ত ভয়ানক ঝুঁকির ব্যাপার-স্যাপারে শহরে-গ্রামে প্রভেদ নেই। ইঞ্জেকশনের প্রশ্নে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বদনাম আছে বটে, কিন্তু সমস্যাটি কমবেশি সারা দেশেরই। বরং অবাক করা ঘটনা এটাই যে হেরোইন এবং ইঞ্জেক্টিং ড্রাগ ইউজার্সের সন্ধান গ্রামাঞ্চলেও যথেষ্ট পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি এক স্টারপুত্রকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়ার পর নিষিদ্ধ মাদকগ্রহণের অভিশাপটি আবার সর্বসমক্ষে এসেছে। জানা যাচ্ছে, বিনোদন জগতের অনেক জনপ্রিয় মুখই আসলে কালো। তাঁরা এইসব মাদক গ্রহণ করেন এবং অন্ধকার জগতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক রয়েছে। সমস্যা এই যে, এই কুঅভ্যাস ও অপরাধ শুধু তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তাঁরা নানাভাবে সাধারণ যুবসমাজকে প্রভাবিত করে ফেলেন। তার ফলে বিনোদন জগতের সঙ্গে বাস্তব জীবনের ফারাকটা দ্রুত মুছে যাচ্ছে।  
ভারত সরকারের একটি হিসেব অনুসারে, গত দু-দশকে নানাবিধ নেশাখোরের সংখ্যা হ্রাসের বদলে অনেক বেড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হেরোইন নেওয়ার ঝোঁক। ২০০৪ সালে হেরোইনখোর চিহ্নিত হয়েছিল ৯ হাজারের মতো। ২০১৮ সালে সেটা বেড়ে হয় আড়াই লক্ষ প্রায়। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিস স্টাডি অনুসারে, শুধু ২০১৭ সালেই সারা পৃথিবীতে নিষিদ্ধ মাদকের বলি হয় সাড়ে ৭ লক্ষ নরনারী। তাদের মধ্যে ভারতীয়ের সংখ্যা ছিল ২২ হাজারের মতো। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ মাদকের যে বাণিজ্য চলে তার পরিমাণ ৬৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার! সহজ কথায়, ভারত এখন নিষিদ্ধ মাদক বাজারেরও টার্গেট। পশ্চিমবঙ্গকেও আর আলাদাভাবে আগলে রাখার সুযোগ নেই। ড্রাগ কারবারিদের শ্যেনদৃষ্টিতে আজ বাংলাও। তাই সাধু সাবধান! নিজেদের ঘর নিজেদেরই সামলাতে। নিষিদ্ধ ড্রাগ মানচিত্রে ঢুকে পড়ল এবার শান্ত মফস্সল বর্ধমান শহরও। সেখানে শুধু ট্রেডিং হয় না, ওই শহরে তৈরি হয়েছে আস্ত এক হেরোইন কারখানাও! এই দুষ্কৃতীদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতে পারে তার ব্যবস্থাই সরকারকে করতে হবে। শুধু বর্ধমান নয়, খোঁজ নিতে হবে বাংলার আর কোন কোন জায়গায় এই পাপ কারবার শিকড় গাড়বার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রয়োজনে অন্য সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েই এই আন্তর্জাতিক চক্রের বিরুদ্ধে অল আউট অভিযানে নামতে হবে। এই ব্যাপারে কোনও তরফের সামান্যতম দুর্বলতাও ভারতীয় যুবসমাজের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলতে পারে।

12th     January,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ