বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

কথা রাখার পাঠ 

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরই বামফ্রন্ট সরকার স্লোগান তুলেছিল—‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। প্রথম পাঁচটা টার্মে, জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে, বাংলায় শিল্পের বারোটা বাজিয়েছিল বাম সরকার। শেষ দুই টার্মে শিল্পায়নের ধুয়ো তুলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার কৃষির গঙ্গাযাত্রার ব্যবস্থাটা পাকা করে। সব মিলিয়ে কৃষি এবং শিল্প—দু’টোরই সাড়ে সর্বনাশ করে রাইটার্স থেকে বিদায় হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। তারা প্রমাণ করে দিয়ে গিয়েছে, নিছক পপুলার রাজনৈতিক স্লোগানের শক্তি ও মূল্য কিছু নেই। আসল হল আন্তরিকতা। স্লোগান নির্মাণের নেপথ্যে আন্তরিকতা না থাকলে তা দিয়ে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয় না। ব্যর্থ স্লোগানটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অবশ্য একটা চেতাবনির মতো রয়ে যায়। বাংলার মসনদ থেকে ‘ঐতিহাসিক’ বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়টাকে রাজনীতির পণ্ডিতরা সামান্য একটা প্রাদেশিক ঘটনা হিসেবে লঘু করে দেখেন না। জাতীয় প্রেক্ষাপটে ঘটনাটির গুরুত্ব সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নেননি নরেন্দ্র মোদি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির তরীতে চেপেই বৈতরণী পেরনোর ফন্দি তাঁর মাথায় সবসময়। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট পর্যন্ত একটা অভিন্ন ধারার প্রবর্তক গেরুয়া শিবিরের প্রধান মুখ। বছরে দুই-আড়াই কোটি চাকরির ব্যবস্থা, প্রত্যেক নাগরিকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ ‍‍টাকা জমা করা থেকে সোনার বাংলা নির্মাণ—এক গতে বাঁধা। কোনও ব্যত্যয় নেই। সব ভালো, যার শেষ ভালো। বাংলার সৌভাগ্য যে এখানকার মানুষ মোদির ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণের মিথ্যাচারে মজেনি। 
দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতী, তার সাক্ষ্য তিনি বার বার রেখেছেন। তাঁর চোখকান বরাবর খোলা। তিনি দেখে শেখেন। তাঁর জন্য কয়েকটা উল্লেখযোগ্য শিক্ষা হল: রাজনীতির মূলে হল মানুষ, তাই মানুষের সঙ্গে অন্যায় করতে নেই। উপরে ওঠার পর সিঁড়িকে ভুলে যেতে নেই। কথা দিতে হয় রাখার জন্যে। আমরা দেখেছি, সিপিএমের ক্ষমতার উৎস ছিল মানুষ। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল কৃষক শ্রেণির। কিন্তু সিপিএম সরকার যত পুরনো হয়েছে তারা তত ক্ষমতার দালাল হয়ে পড়েছিল। দূরে সরিয়ে দিয়েছিল মানুষকে। শেষদিকে তারা চরমভাবে কৃষক-বিরোধী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। অন্যদিকে, বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির প্রতি মানুষের দ্রুত মোহভঙ্গের কারণ কথার খেলাপে তাঁর রেকর্ড সৃষ্টি।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে তৃণমূল কংগ্রেস দু’টো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল: ‘দুয়ারে রেশন’ এবং ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি। তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দু’সপ্তাহের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করে দিয়েছেন ‘দুয়ারে রেশন’-এর পাইলট প্রজেক্ট। এটাকে বাংলার সর্বত্র দ্রুত সম্প্রসারণ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। দেশবাসী ইতিমধ্যেই দেখেছে, ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের ঘোর বিরোধী হল মোদি সরকার। তারা আইনি ফ্যাকড়া তুলে দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের ‘দুয়ারে রেশন’ দেওয়ার উদ্যোগ বানচাল করে দিয়েছে। কিন্তু মমতার সরকার প্রকল্পটা রপায়ণ করছে রাজ্যের কোষাগারের জোরে। তাই মোদিবাবুরা বাংলাতেও বিরোধিতা করে এখনও সুবিধে করতে পারেনি। মোদি সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের কাছে মানুষের খিদের চেয়ে নিষ্প্রাণ আইন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠিন্য অধিক মূল্য বহন করে। যাই হোক, মমতার সরকার এবার তার দ্বিতীয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করল। এবার থেকে এক একরের বেশি জমির মালিকরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে বছরে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাবেন। অঙ্কটা এতদিন ৬ হাজার ছিল। তারও আগে ছিল ৫ হাজার। অন্যদিকে, এক একরের কম জমির মালিককে সরকার এই অনুদান দেবে ৪ হাজার টাকা করে। এতদিন এটা দেওয়া হতো ৩ হাজার টাকা হারে। তার আগে ছিল ২ হাজার টাকা। যখন মোদি সরকার ‘অন্নদাতাদের’ পথে বসানোর জন্য একাধিক আইন হাতে নিয়ে লাগাতার শক্তিপ্রদর্শন করে চলেছে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মানবিক মুখের তুলনা তিনিই স্বয়ং। মোদিবাবুরা ভালো কিছু শেখার বান্দা নন। কিন্তু সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে অবশ্যই অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকছে এই কৃষক দরদি ব্যবস্থা।

12th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ