বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
খেলা
 

ত্রিমুকুটের মোহনায় মোহন বাগান, আজ ৬০ হাজার উমাকান্ত বনাম মুম্বইয়ের লড়াই

সোমনাথ বসু, কলকাতা: শুক্রবারের দুপুর। কাঠফাটা রোদ। পাঁচিলের গায়ে নুইয়ে পড়া টগর গাছের ডালে শান্তিতে বসে দু-তিনটে কাক। নীল গেটে ঝুলছে কাঠের ডাকবাক্স। তবে ঠিকানা মুছে গিয়েছে কালের নিয়মে। একটি চিঠি উঁকি মারছে সেখানে। প্রেরকের নাম জানা নেই। তবে ৪২ই, সাউথ সিঁথি রোডের এই বাড়ির সঙ্গে মোহন বাগানের সম্পর্ক নিবিড়। প্রায় পঞ্চাশ বছর (১৯৭৫) আগে প্রিয় দলের হার সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন উমাকান্ত পালোধি। তাঁর চেয়ে আন্তরিক সমর্থক পালতোলা নৌকা কখনও দেখেনি। দেখবেও না। জীবনের পথে ফুলস্টপ দেওয়ার আগে সুইসাইড নোটে উমাকান্ত লিখে গিয়েছিলেন, ‘পরের জন্মে যেন মোহন মায়ের কোলেই আমার জন্ম হয় আর এই অপমানের বদলা নিতে পারি।’
আজ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নিশ্চয়ই থাকবেন ক্লাব অন্ত প্রাণ উমাকান্ত। এই জন্মেও তাঁর গায়ে লেপটে রয়েছে সবুজ-মেরুন জার্সি। পরজন্মে বিশ্বাস না থাকলে ক্ষতি নেই। এই যুগের মোহন সমর্থকদের মধ্যেই তিনি রয়েছেন। বাবলু ভট্টাচার্য-প্রসূন ব্যানার্জিদের পরিবর্তে এখন মোহন বাগানের ব্যাটন রয়েছে দিমিত্রি পেত্রাতোস-শুভাশিস বসুদের হাতে। বদলেছে অনেক কিছু। কিন্তু উমাকান্ত বদলাননি। জীবনের কাছে হার মানলেও তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়! 
শনিবার আইএসএল ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি’কে হারাতে পারলেই খিলখিল করে হেসে উঠবেন উমাকান্ত। ত্রিমুকুটের স্বাদই যে আলাদা। পাড়ার কমবয়সিদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণেই যে তাঁর আনন্দ সম্পূর্ণতা পায়। ম্যাচ শুরুর পর শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত বিশাল কাইথ থেকে জেসন কামিংস— প্রত্যেকের ঘামরক্তের মধ্যে তাঁর ক্লাবপ্রেম মিশে থাকতে বাধ্য। 
মরশুমের শেষ ম্যাচে মোহন বাগানের সামনে অবশ্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। উল্টোদিকে পিটার ক্র্যাটকির মুম্বই সিটি। লিগ-শিল্ড খুইয়ে যারা বদলা নিতে মরিয়া। ছাংতের দৌড়, নোগুয়েরা ও আপুইয়ার লড়াই, পেরেরা ডিয়াজের গোলক্ষুধা এবং তিরির ফুটবলসেন্স অবশ্যই বাণিজ্যনগরীর দলটির সম্পদ। মোহন বাগানের বিরুদ্ধে ‘হেড টু হেড’ পরিসংখ্যানেও তারা এগিয়ে। কিন্তু ঘরের মাঠে দর্শক ঠাসা গ্যালারি যে উমাকান্তকে চেনে। তাঁর আবেগের বিস্ফোরণ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে র‌্যাম্পের কোণায় কোণায়। কোচ হাবাস কিংবা মরশুমের সেরা দিমিত্রি নয়, শনিবার মুম্বই সবচেয়ে বেশি সমীহ করছে পালোধিদেরই। 
মরশুমের শুরুতে মোহন বাগানের দায়িত্বে ছিলেন হুয়ান ফেরান্দো। বোমাস-পেত্রাতোসদের নিয়ে শুরু হয় তাঁর পথ চলা। ডুরান্ড কাপ জিতে একালের উমাকান্তদের আনন্দ দেন তিনি। কিন্তু তারপরেই ছন্দপতন। আইএসএলে টানা তিনটি ম্যাচ হারের পর রাশভারী হাবাসকেই নিয়ে আসা হয় কোচের পদে। বাকিটা সবুজ-মেরুনের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। আর শনিবার জিতলে? সোনায় সোহাগা। 
জয়ের জন্য কী করতে হবে মোহন বাগানকে? দলের শক্তি এবং দুর্বলতা কোথায়? জীবনমরণের সীমানা ছাড়িয়ে উমাকান্তের বিশ্লেষণ, ‘চোটের জন্য আকাশ মিশ্র না থাকায় মুম্বইয়ের দুই উইং ব্যাকই দুর্বল। মেহতাব-রাহুল ভেকেদের সমস্যায় ফেলবে লিস্টন ও মনবীর। মাঝমাঠে জনি কাউকো চেনা ছন্দে থাকলে তো কথাই নেই। দিমিত্রি দারুণ খেলছে। কামিংস গোলটা চেনে। তবে মিসের বহর কমাতে হবে। রক্ষণে ইউস্তে ঠান্ডা মাথার প্লেয়ার। কিন্তু শুভাশিস মাঝেমধ্যেই তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। ছাংতেকে গতি বাড়াতে না দিলেই শনিবার মুম্বই নিষ্প্রভ।’
শুক্রবার রাত থেকেই টেনশনে রয়েছেন মোহন বাগান প্রিয় পালোধি। শিরদাঁড়ায় উষ্ণ প্রস্রবণ খেলে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তারপরেই মন্দিরে পুজো দেওয়া। বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়তে হবে যুবভারতীর উদ্দেশে। সিঁথি থেকে শ্যামবাজার-খান্না হয়ে উল্টোডাঙা। তারপরেই ম্যাটাডোরের মাথায় রাখা চোংয়ে সবুজ-মেরুন গানে গা ভাসাতে হবে যে, ‘চিরকাল রেলায় আছে, থাকবে মোহন বাগান’। এ যুগের সমর্থকদের সঙ্গে তাল মেলাতে মরিয়া উমাকান্ত। 

4th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ