সঞ্জয় সরকার, কলকাতা: মধুর প্রতিশোধ মোহন বাগানের। আইএসএল সেমি-ফাইনালে প্রথম লেগে হেরেও ঘরের মাঠে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন হাবাস-ব্রিগেডের। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সংযোজিত সময়ে ‘সুপার সাব’ সাহাল আব্দুল সামাদ গোল করতেই উচ্ছ্বাসে ভাসল ৬২ হাজারের গ্যালারি। ঘরের মাঠে আরও এক দুরন্ত কামব্যাকের সাক্ষী থাকল ফুটবলের মক্কা। রবিবার ওড়িশা এফসি’কে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ আইএসএলের ফাইনালে পৌঁছল মোহন বাগান। মরশুমের তৃতীয় ট্রফি জয় থেকে আর এক কদম দূরে দিমিত্রিরা। সাহালের পাশাপাশি স্কোরশিটে নাম তোলেন জেসন কামিংস। দু’লেগ মিলিয়ে স্কোর ৩-২।
১৩ দিন আগেই মুম্বই সিটি’কে হারিয়ে লিগ-শিল্ড খেতাব ঘরে তোলে মোহন বাগান। রবিবার মাস্ট উইন ম্যাচে ফুল-হাউস যুবভারতীতে হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোপুরি কাজে লাগালেন দিমিত্রি-কামিংসরা। তাঁদের উদ্দীপ্ত করতে খামতি রাখেননি সমর্থকরাও। ম্যাচের প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক আগেই যুবভারতীতে দেখা গেল জনজোয়ার। সরাসরি ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে এদিন অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততে হতো মোহন বাগানকে। এক গোল হলে খেলা গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। তবে ৯০ মিনিটে খেলা শেষ করার লক্ষ্যে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল মেলে ধরেন লিস্টনরা। দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের সুযোগ চলে এসেছিল অনিরুদ্ধ থাপার সামনে। বক্সের মধ্যে থেকে আহমেদ জাহুর মিস-কিক সোজা পেয়ে যান বাগান মিডিও। তবে তা গোলে রাখতে ব্যর্থ তিনি। এরপর ২০ মিনিটে দিমিত্রির সেন্টার থেকে হেক্টর ইউস্তের হেড কোনওক্রমে রুখে ওড়িশার পতন আটকান গোলরক্ষক অমরিন্দর। তবে দু’মিনিট বাদেই তাঁর ভুলেই গোল হজম করে লোবেরা-ব্রিগেড। বক্সের বাইরে থেকে দিমিত্রির শট ঠিকঠাক বিপন্মুক্ত করতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল ঠান্ডা মাথায় জালে জড়ান জেসন কামিংস (১-০)।
গ্যালারির শব্দব্রহ্মে তখন রীতিমতো দিশাহারা দেখায় ওড়িশাকে। তাদের মাঝমাঠের ইঞ্জিন আহমেদ জাহু এদিন একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। একা কৃষ্ণাই লড়াই চালালেন। তাঁর সাজিয়ে দেওয়া পাস থেকে ডিয়েগো মরিসিও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে গোল হজমের চার মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরতে পারত ওড়িশা। প্রথম লেগে শুরুতে লিড নিয়েও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল মোহন বাগান। রবিবার অবশ্য অনেক বেশি সংঘবদ্ধ দেখায় আনোয়ারদের। প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়ে ইসাকের হেড গোললাইন সেভ করেন ইউস্তে।
আগের ম্যাচে উইং থেকে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে মোহন বাগান ডিফেন্সে চাপ বাড়িয়েছিলেন ইসাক ও জেরি। তবে এদিন তার ছিটেফোঁটাও নজরে পড়েনি। বরং মনবীর-লিস্টনদের মধ্যে অনেক বেশি তাগিদ দেখা গেল। ৫৫ মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে সুযোগ এসেছিল ম্যাচের সেরা মনবীরের সামনে। তবে নিজে গোলে শট না নিয়ে কামিংসকে পাস বাড়ালে তা অনেক বেশি কার্যকর হতো। ৭৫ মিনিটে হেক্টর ইউস্তের ব্যাক হেড দুরন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রুখে দেন অমরিন্দর। তবে সংযোজিত সময়ে সাহাল জাল কাঁপাতেই ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত হয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন মোহন বাগানের (২-০)। আগামী ৪ মে যুবভারতীতেই খেতাবরক্ষার লড়াইয়ে নামবেন হাবাসের ছেলেরা।
মোহন বাগান: বিশাল, আনোয়ার (দীপ্যেন্দু), ইউস্তে, শুভাশিস, মনবীর, অনিরুদ্ধ (সাহাল), দীপক (অভিষেক), কাউকো, লিস্টন (কিয়ান), দিমিত্রি ও কামিংস (হামিল)।