মুম্বই: ‘আজই ম্যাচ শেষ করো। কাল আমাদের স্কুল আছে’। রবিবার ওয়াংখেড়ের গ্যালারি থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে কোহলিদের উদ্দেশে আকুল প্রার্থনা এক কিশোরীর। তবে তার মনস্কামনা পূর্ণ হল না। টিম ইন্ডিয়ার জয়ের প্রতীক্ষা গড়াল চতুর্থ দিনে। ৫৪০ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে কিউয়িরা। যদিও কোমায় চলে যাওয়া রোগীর মতোই অবস্থা এখন নিউজিল্যান্ডের। অলৌকিক কিছু না ঘটলে দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। দ্বিতীয় টেস্টে জিতছে টিম ইন্ডিয়া। দরকার আর পাঁচটি উইকেট।
বল যেভাবে টার্ন করছে, তাতে লাঞ্চের আগে খেলা শেষ হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রশংসা প্রাপ্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাচ্ছেন তিনি। এই ম্যাচে এখনও পর্যন্ত তাঁর ঝুলিতে উঠেছে সাত উইকেট। তার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি। সেই সঙ্গে ২০২১ সালে শিকার সংখ্যার হিসেবে ‘হাফ-সেঞ্চুরি’ হাঁকালেন ভারতীয় স্পিনারটি। কিউয়ি ক্যাপ্টেন টম লাথামকে ৬ রানে ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে জোর ধাক্কা দেন অশ্বিন। এরপর উইল ইয়ং ও ড্যারিল মিচেল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ইয়ংকে ২০ রানে তুলে নেন ‘অ্যাশ’। তবে রস টেলর যেভাবে উইকেট ‘উপহার’ দিয়েছেন, তা বড়ই দৃষ্টিকটু লেগেছে। উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে তাঁর মতো সিনিয়র ব্যাটসম্যানের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। অশ্বিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে ৬ রানে পূজারার হাতে ধরা পড়েন টেলর। ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে যায় ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ ব্রিগেড। তবে হেনরি নিকোলসকে সঙ্গে নিয়ে মিচেল পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁরা ৭৩ রান যোগ না করলে ম্যাচের যবনিকা হয়তো আরও আগেই লেখা হতো।
মুম্বই টেস্টে জাদেজার অভাব ঢেকে দিতে অনেকটাই সফল অক্ষর প্যাটেল। তাঁর মতো অলরাউন্ডারকে আগলে রাখতে পারলে, লাভ টিম ইন্ডিয়ারই। কঠিন সময়ে উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। যেমনটা দেখা গেল তৃতীয় দিন বিকেলে। মিচেল-নিকোলস জুটিকে যখন অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল, তখন ক্যাপ্টেন কোহলির মুখে হাসি ফেরান অক্ষরই। ৬০ রানে মিচলকে সাজঘরে ফেরান তিনি। রান আউট হন টম ব্লান্ডেল (০)। ক্রিজে আছেন নিকোলস (৩৬) ও রাচীন (২)। তৃতীয় দিনের শেষে নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৪০ রান।
ভারত এদিন শুরু করে বিনা উইকেটে ৬৯ রানে। মায়াঙ্ক ৩৮ ও পূজারা ছিলেন ২৯ রানে অপরাজিত। দ্রুত গতিতে রান তুলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মায়াঙ্ক। শেষ পর্যন্ত তুলে মারতে গিয়ে তিনি ৬২ রানে আউট হন আজাজের বলে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ডের স্পিনারটি গতকালই ইনিংসে দশ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সাফল্যের সেই ফল্গুধারা অব্যাহত রইল রবিবারও। আরও চারটি উইকেট যোগ হয়েছে তাঁর নামের পাশে। ম্যাচে তাঁর মোট শিকার সংখ্যা ১৪, যা ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাধিক। আজাজ ভেঙে দিলেন বোথামের ৪১ বছরের পুরানো রেকর্ড (১৩-১০৬)।
টিম ইন্ডিয়া চাইলে আরও আগেই দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে পারত। কিন্তু কোচ দ্রাবিড় হয়তো চাইছিলেন, চাপে থাকা পূজারা, কোহলিরা বড় রান করার সুযোগটা কাজে লাগাক। পূজারা ৪৭ করলেন বটে, তবে তাঁর ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট। আজাজের বলে রিভিউ নিয়ে লেগ বিফোর থেকে বাঁচলেও, কিছুক্ষণ পরেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন পূজি। তবে শুভমান গিল (৪৭ ) ও অক্ষরের (২৬ বলে অপরাজিত ৪১) জুটি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। ১৪ রানে শ্রেয়স ও ঋদ্ধিমান ১৩ রানে আউট হন। জয়ন্ত ৬ রানে আজাজের বলে ফিরতেই দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত (২৭৬/৭)।
কিন্তু মন ভরেনি কোহলির খেলায়। দু’বছরের বেশি সময় সেঞ্চুরি নেই তাঁর ব্যাটে। নবাগতরা ঝুড়ি ঝুড়ি রান করছেন, সেখানে দুই ইনিংসে কোহলির সংগ্রহ (০ ও ৩৬)। শতরান তো দূরে থাক, হাফ-সেঞ্চুরির গণ্ডি টপকাতেও তাঁর কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। ভারতের সিরিজ জয়ের সাফল্যে কোহলির অফ ফর্মই যেন ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে।
তৃতীয় দিনের স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস ৩২৫
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৬২
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (গতদিনের বিনা উইকেটে ৬৯ রানের পর): মায়াঙ্ক ক ইয়ং বো আজাজ ৬২, পূজারা ক টেলর বো আজাজ ৪৭, গিল ক লাথাম বো রাচীন ৪৭, কোহলি বো রাচীন ৩৬, শ্রেয়স স্টাঃ ব্লান্ডেল বো আজাজ ১৪, ঋদ্ধিমান ক জেমিসন বো রাচীন ১৩, অক্ষর অপরাজিত ৪১, জয়ন্ত ক ও বো আজাজ ৬, অতিরিক্ত ১০, মোট (৭০ ওভারে) ২৭৬-৭ (ডিঃ)। উইকেট পতন: ১-১০৭, ২-১১৫, ৩-১৯৭, ৪-২১১, ৫-২১৭, ৬-২৩৮, ৭-২৭৬। বোলিং: সাউদি ১৩-২-৩১-০, আজাজ ২৬-৩-১০৬-৪, জেমিসন ৮-২-১৫-০, সোমেরভিলে ১০-০-৫৯-০, রাচীন ১৩-২-৫৬-৩।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস (টার্গেট ৫৪০ রান): লাথাম এলবিডব্লু বো অশ্বিন ৬, ইয়ং ক পরিবর্ত (সূর্যকুমার) বো অশ্বিন ২০, মিচেল ক জয়ন্ত বো অক্ষর ৬০, টেলর ক পূজারা বো অশ্বিন ৬, নিকলস অপরাজিত ৩৬, ব্লান্ডেল রান আউট ০, রাচীন অপরাজিত ২, অতিরিক্ত ১০, মোট (৪৫ ওভারে) ১৪০-৫। উইকেট পতন: ১-১৩, ২-৪৫, ৩-৫৫, ৪-১২৮, ৫-১২৯। বোলিং: সিরাজ ৫-২-১৩-০, অশ্বিন ১৭-৭-২৭-৩, অক্ষর ১০-২-৪২-১, জয়ন্ত ৮-২-৩০-০, উমেশ ৫-১-১৯-০।