বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
খেলা
 

ঐতিহ্য রক্ষার্থে চুক্তিপত্রে
সই না করাই উচিত

অমরেশ চৌধুরী : ১৯২০ সালের ১ আগস্ট। জোড়াবাগানে আমাদের বাড়িতেই পথ চলা শুরু হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের। ঠাকুরদা সুরেশ চৌধুরী ছিলেন যার প্রধান কারিগর। গত শতাব্দীর দুইয়ের দশকে ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ওঁকে সাহায্য করেছিলেন সন্তোষের মহারাজা এবং কুমারটুলির বানোয়ারিলাল রায়। দ্বিতীয়জন প্রয়াত ক্রিকেটার পঙ্কজ রায়ের নিকটাত্মীয়। প্রথম ২০ বছর কলকাতার ফুটবলে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ব্যাপারে প্রতিটি পদক্ষেপে লড়াই করতে হয়েছে ইস্ট বেঙ্গলকে। তখন বাংলার ফুটবলের দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোহন বাগান, এরিয়ান। তবে আমাদের লড়াই বৃথা যায়নি। চারের দশকের পর লাল-হলুদ ব্রিগেডকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মনে রাখবেন, মোহন বাগানের ৩১ বছর পর প্রতিষ্ঠা ইস্ট বেঙ্গলের। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ড কিংবা কলকাতা লিগে মোট জয়ের পরিসংখ্যানে আমরাই এগিয়ে। বড় ম্যাচের পরিসংখ্যানেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলেছে ইস্ট বেঙ্গল। ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে ত্রিমুকুট জয়ের নজিরও লাল-হলুদের। যা অত্যন্ত গর্বের। প্রাণের প্রিয় ক্লাবকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই জেসি গুহ, ডাঃ নৃপেন দাস, অজয় শ্রীমানি, পল্টু দাসদের। যাঁদের অক্লান্ত লড়াই ইস্ট বেঙ্গলের পাথেয়। 
সংবাদমাধ্যমের থেকে জেনেছি, লগ্নিকারী সংস্থার পাঠানো চুক্তিপত্রে ‘নিউ এনটিটি’ (নতুন সত্ত্বা) শব্দটি রয়েছে। তাই এই চুক্তি কার্যকর হলে এক লহমায় শেষ হয়ে যাবে ১০০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ঐতিহ্য। ইস্ট বেঙ্গল শুধু একটি ক্লাব নয়, সাতের দশকে ওপার বাংলা থেকে ছিন্নমূল অবস্থায় বাংলা আসা অগণিত শরনার্থীর লড়াই করার মঞ্চও বটে। এই নামটি আঁকড়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছে যাদবপুর কিংবা দমদমের কলোনিতে থাকা অনেক পরিবার। আশা করি, এই ব্যাপারগুলি নিশ্চয়ই এখনকার কর্তারা মাথায় রাখবেন। ফুটবল দলের নাম হয়েছে এসসি ইস্ট বেঙ্গল। গত আইএসএলে সাদা-কালো জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলতে হয়েছে আমাদের ক্লাবের ফুটবলারদের! যা মেনে নিতে পারছি না। বুকের ভিতর চাপা কষ্ট অনুভব করছি। তাই ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে সভাপতি ও সচিবকে চুক্তিতে সই না করার অনুরোধ জানিয়েছি। আমার ধারণা, গর্বের ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চয়ই ওঁরা বিক্রি করবেন না। 
লাল-হলুদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর প্রচারের আলোয় ভেসে গিয়েছিল কোয়েস। কিন্তু এখন ওই সংস্থার নাম মানুষের স্মৃতিপটেও নেই। এটা নিশ্চয়ই মাথায় রাখবেন শ্রী সিমেন্টের কর্তাব্যক্তিরা। গত ছ’মাসে এই সংস্থা প্রচুর মাইলেজ পেয়েছে। বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের নাম। তাই ৪৯ কিংবা ৫০ শতাংশ শেয়ার শ্রী সিমেন্ট রাখতেই পারে। জার্মানির প্রায় সব ক্লাবই এরকমভাবেই চলে। কিন্তু ক্লাবের দখল নেওয়ার জন্য এই সংস্থা যেভাবে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগচ্ছে, তা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়।  আবার বলছি, ‘নিউ এনটিটি’ শব্দটি সত্যিই ভয়ঙ্কর। ক্লাবের কথা ভেবে আমাদের পরিবারও দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে ইস্ট বেঙ্গলের সোনায় মোড়া ইতিহাস নষ্ট করে দেওয়া যাবে না। কর্তাদের বলব, প্রবীণ আইনজীবীদের মতামত নিন। আমার ধারণা, এই ধরনের চুক্তিপত্রে কর্তাদের সই না করাই উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে লাল-হলুদ মশালের অহঙ্কার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। এটা নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল কর্তারা মাথায় রাখবেন। 
(লেখক ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চৌধুরীর বংশধর)

12th     May,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ