বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

দারিদ্রের জাল ছিঁড়ে বেরতে পড়াশোনাকেই হাতিয়ার করেছেন ডোমকলের অনেক পড়ুয়া

তামিম ইসলাম, ডোমকল: সূর্য পশ্চিমে হেলতেই অন্ধকারে ডুবে যায় চারিদিক। জোনাকির মিছিল আর ঝিঁঝিঁর শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁশ-টিনের বাড়িগুলির ফাঁক গলে ভেসে আসতে থাকে পড়ার শব্দ। রাত গভীর হয়। চোখ ঢুলুঢুলু করে। তারপরেও থেমে থাকেন না আক্তার, সুমাইয়া, রুবিনা, পারভিনারা। দু’ চোখে একরাশ স্বপ্ন আর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য জেদ নিয়ে জারি থাকে তাদের বছরভর লড়াই। আর এই লড়াইয়ের ঢাল-তরোয়াল সবটাই  পড়াশোনা। 
বোমা, বারুদ, অবৈধ পাচারের জন্য কুখ্যাত ডোমকলের সীমান্ত এলাকাগুলির ছেলেমেয়েদের এখন লড়াই পড়াশোনাকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়ার। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মহামারী, দুর্যোগ, দারিদ্রের মতো বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে জীবনের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষাগুলিতে সফল ওরা। কোনওবারে মেধা তালিকায় ঠাঁই মিলেছে, কোনওবারে প্রথম তিরিশের গন্ডি ছুঁতে পারেনি ওরা। টেলিভিশনের পর্দা, সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা মেলেনি। তবুও থেমে থাকেনি ওরা। দাঁতে দাঁত চেপে জারি রেখেছে লড়াই। সে লড়াই কোনও অংশেই কম নয় ।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ড থেকে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন রানিনগরের রামিজ পারভেজ। এক চিলতে ঘরে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া রামিজ ৯৬.৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ডোমকলের মেমরি মিম জাহান উচ্চ মাধ্যমিকে সারা রাজ্যে ১৪ নম্বরে স্থান পেয়েছেন। জলঙ্গির ঘোষপাড়া সর্বপল্লি বিদ্যা নিকেতনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আতিক পারভেজ মাধ্যমিকে ৬৬২ নম্বর পেয়েছে। ছোট থেকেই ডান হাত নেই সাগরপাড়ার সবুজ সর্দারের। সীমান্তঘেঁষা বামনাবাদের একটি স্কুল থেকে বাঁ হাতে লিখেই উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৭ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে। এগুলি কয়েকটা উদাহরণ মাত্র। সীমান্তের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, স্কুলগুলিতে পাশের হার ভালোই। পাশপাশি  মেধা তালিকায় স্থান না পেলেও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে অনেকেই খুব ভালো নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে ডাক্তারি পড়ুয়া খুব একটা ছিল না। কিন্তু বছর কয়েকের ব্যবধানে সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো থেকেও এখন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এমবিবিএস পড়ছেন কয়েকজন। এমনকী অনেকেই এখন চিকিৎসক হিসেবে ইন্টার্নও করছেন। রানিনগরের কাতলামারির আজিজ আলি যেমন। ২০১৬ সালের মাধ্যমিকে ডোমকল মহকুমায় প্রথম হয়েছিলেন আজিজ। বর্তমানে  উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে কর্মরত তিনি। আজিজের কথায়, আমাদের সময়টা কঠিন ছিল অনেকখানি। বাবার আটা ভাঙানো মিলে সারাদিন খাটাখাটনির পর সন্ধ্যায় পড়ার সময় পাওয়া যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাত জেগে পড়শোনা করার পর আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। লড়াইটা সহজ ছিল না। আজিজ শুধু একটা উদাহরণ মাত্র। বর্তমানে ওই কাতলামারি থেকেই জনা সাতেক পড়ুয়া বিভিন্ন সরকারি কলেজে ডাক্তারি পড়ছেন। শুধু ডাক্তারি নয়, বিভিন্ন কম্পিটিটিভ পরীক্ষাতেও উৎসাহ বাড়ছে সীমান্তের ছেলেমেয়েদের। চোখে পুলিস কিংবা আমলা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই বছরভর পড়ালেখার যুদ্ধ জারি রাখছে সীমান্তের ছেলেমেয়েরা।
তাদের কথায়, অভাব, দারিদ্র, সীমান্তের কষ্টের জাল ছিঁড়ে বেরতে হলে একমাত্র পথ পড়শোনা। হয় লেখাপড়া করে এগিয়ে যেতে হবে নইলে বাপ-ঠাকুর্দার মতো দায়িত্বের গ্যাড়াকলে পড়ে পাড়ি দিতে হবে ভিন জেলা-ভিনরাজ্য-ভিন দেশে।

20th     May,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ