বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

রক্তাক্ত অবস্থাতেই সোনামুখীর বাড়িতে ছোটভাইকে ফোন, ‘আমি আর বাঁচব না’

সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ক্রিকেটের ভক্ত ছিলেন। কিন্তু সেনাছাউনিতে থাকায় খেলা দেখার সুযোগ পাননি। রাত ১১টা ১৯ মিনিট নাগাদ ছোট ভাইকে ফোন করে কেকেআরের হারের কথা শুনে মন খারাপ হয়। তাই বেশি কথা না বলে ফোন কেটে দেন। ১২টা ২৫ মিনিট নাগাদ আবার ফোন। এবার একেবারে আর্তকণ্ঠে ভাইকে বলেন, আমি বোধহয় আর বাঁচব না। জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড বোমায় গুরুতর আঘাত পেয়েছি। তারপর ধীরে ধীরে কণ্ঠ মিলিয়ে যায়। মণিপুরে কুকি জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর আগে সোনামুখীর পাঁচাল গ্রামের বাসিন্দা অরূপ সাইনি ঠিক এই কথাগুলোই বলে যান তাঁর ছোট ভাই ধনঞ্জয় সাইনিকে। 
ধনঞ্জয়বাবু ছত্তিশগড়ের হোটেল কর্মী। শনিবার তিনি বাড়ির ফেরার পথে ফোনে বলেন, দাদা মণিপুরে সিআরপির ফাঁড়িতে অস্ত্রাগারে ডিউটিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও সাত-আটজন ছিলেন। গ্রেনেড হামলায় জখম দাদা মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়েই আমাকে ফোনে বলেন, ডিউটি চলাকালীন হঠাৎ করে ১৫-২০ জনের জঙ্গির একটি দল ফাঁড়িকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। পরিস্থিতি দেখে ফাঁড়ির সামনের দিকের লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়। 
তারপর একটি চৌকির আড়াল থেকে পাল্টা গুলি চালান। কয়েক মিনিট বাদেই চৌকির উপর একটি বড়ো বোমা পড়ে। মূহূর্তের মধ্যে তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা ছিটকে পড়েন। 
গুরুতর আঘাত পেয়ে জখম অবস্থায় তিনি প্রথমে আমাকেই ফোন করেন। আস্তে আস্তে তাঁর কথা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট বাদে আমি পুনরায় ফোন করলে তা রিসিভ করা হয়। কিন্তু ওপ্রান্ত থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তারপর আমি দাদার অন্যান্য বন্ধুদের ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সকালে দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি কর্মস্থল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। 
অরূপবাবু ছোটবেলাতেই তাঁর মাকে হারান। সেই সময় তাঁর বাবা রমাকান্ত সাইনি লোকের দোকানে জল বয়ে তিন ছেলেকে মানুষ করেন। তাঁর তিন ছেলেই এখন স্বাবলম্বী। বড়ো ছেলে অরূপ সেনা জওয়ান। 
আর বাকি দুই ছেলে নামি হোটেলের কর্মী। একসময়ের অভাবের সংসার পিছনে ফেলে তাঁরা এখন পাকা বাড়িও তৈরি করেছেন। বাড়িতে বৌমা আর দুই নাতি ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন। অরূপের দুই শিশু সন্তানের দেখভাল তাঁকেই করতে হতো। তাই অরূপের এভাবে চলে যাওয়াটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রমাকান্তবাবু।  
অরূপবাবুর গ্রামের বন্ধুরা বলেন, দেশ রক্ষার গুরুদায়িত্বের পাশাপাশি অবসর সময়ে অরূপদা গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন। লোকগান এবং রবিঠাকুরের কবিতা তাঁর খুব পছন্দের ছিল। 
ডিউটির ফাঁকে কীর্তন গানের চর্চাও করতেন। এবং তা নিজের ফেসবুক পেজে আপলোড করতেন। গ্রামে এলে সকলের সঙ্গে আনন্দ করে কাটাতেন। ছুটিতে গ্রামে ফিরলে গানে, কবিতায় সকলকে মাতিয়ে রাখতেন। কিছুদিন আগেও হোলিতে পাড়ার কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে রং খেলেন। গ্রামে এলে ক্রিকেটও খেলতেন।
 নিহত জওয়ানের শোকার্ত পরিবার।-নিজস্ব চিত্র

28th     April,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ