সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: এবার বারোদোলের অন্যতম আকর্ষণ ছিল আফগানিস্তানের শুকনো খাবার। কাঠাবাদাম, পেস্তা, কিশমিশ, আলুবখরা, বাডন খেজুর, শুকনো পাইনাপল, আলোক খাঁড়া, আখরোট, আনজির, ব্ল্যাক বেরি, জাফরান, হিং, ড্রাই কিউই, ড্রাই ম্যাঙ্গো, শুখা আলুবখরা, ড্রাই স্ট্রবেরি ইত্যাদি প্রায় ৩০ রকমের শুকনো খাবারের বিপুল সম্ভার ছিল সামিউল্লার স্টলে। এখানে ১৬০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা কেজির ড্রাই ফ্রুটস পাওয়া যাচ্ছে। সবথেকে বেশি দাম লোগেরি বাদামের। যার দাম ৫৫০০ টাকা কেজি।
আফগানিস্তানের শুকনো খাবার নিয়ে এদেশের খাদ্য রসিকদের কৌতূহলের শেষ নেই। তাই একসঙ্গে এত ধরনের শুকনো খাবারের সাজানো ডালি দেখে চোখ ফেরানো কষ্ট। কলকাতায় এইসব শুকনো খাবার পাওয়া যায়। তবে এত টাটকা এত রকমের আইটেম থাকায় বারোদোলে কৃষ্ণনগরবাসী মজেছে আফগানিস্তানের শুকনো খাবারে। জানা যায়, ১৭৪৪ সালে আদরের রানি ছোটনের মান ভাঙাতে গোটা একটা মেলা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় রাজবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে বসিয়েছিলেন। সেই মেলাই বিখ্যাত বারোদোল মেলা নামে। বারোদোল মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নদীয়াবাসীর আবেগ উচ্ছ্বাস। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা মেলাকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ছোট-বড় পসরা নিয়ে গ্রাম বাংলার দোকানিরা এখানে আসেন। এই মেলায় তিনদিন কৃষ্ণের বারোটি বিগ্রহ দেখার সুযোগ মেলে দর্শনার্থীদের। প্রথমদিন রাজবেশ, দ্বিতীয়দিন ফুলবেশ, তৃতীয় দিন রাখালবেশ। রানির অভিমান ভাঙানোকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া মেলা ধীরে ধীরে ধর্মীয় ভাবাবেগেও জারিত হয়েছে। এই মেলা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একটি মিলনক্ষেত্রও বটে। রাজবাড়ি সূত্রে জানা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজকার্যে ব্যস্ত থাকায় উলা মেলায় রানি ছোটনকে নিয়ে যেতে পারেননি। অভিমানী রানির মান ভাঙাতে আস্ত একটা মেলা মহারাজা রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে বসান। সেই মেলাতে ড্রাই ফ্রুটের সম্ভারে খুশি খাদ্যরসিকরা। এমনিতেই দেশের ডাইফ্রুটের বাজারজুড়ে রয়েছে আফগানিস্তান। কাঠবাদাম, পেস্তা, কিশমিশ, খুবানি, আনজির, মুরাক্কা কাবুল থেকে আসে। এ ছাড়া সে দেশের মূল্যবান হিং, পোস্ত, জাফরানও এদেশের রেস্তরাঁগুলোতে খাদ্যের স্বাদ বাড়ায়। তার জেরেই বারোদোলে এই স্টলে ক্রেতাদের ভিড় জমে উঠছে। ১ গ্রাম জাফরানের দাম ৫০০ টাকা। ২৫ গ্রাম হিংয়ের কৌটোর দাম ৫০০ টাকা। জানা গিয়েছে, এখানে আফগানিস্তানের লোগারে থেকে এসেছেন সামিউল্লা দাস্তানি। বারোদোলে থাকা তাঁর স্টলে কিশমিশ ১৮০০ টাকা কেজি, ব্ল্যাক কিশমিশ ১৬০০ টাকা কেজি, মদিনা খেজুর ১৮০০ টাকা কেজি, পীরজোয়ালা ১৬০০ টাকা কেজি, আখরোট ২২০০ টাকা কেজি, ড্রাই কিউই ১৬০০ টাকা, ড্রাই ম্যাংগো ১৮০০ টাকা কেজি, ব্ল্যাকবেরি ২২০০ টাকা কেজি, আমণ্ড ২০০০ টাকা কেজি সুইট মামরা ৫৫০০ টাকা কেজি, ক্যালিফোর্নিয়া পেস্তা ২২০০ টাকা কেজি। এই শুকনো খাবার সম্বন্ধে বিক্রেতা বছর পঁয়ত্রিশের সামিউল্লার দাস্তানি বলেন, সমস্ত প্রোডাক্ট প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি। প্রোটিন আয়রন বেশি। এই ড্রাই ফ্রুটস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। রুটিন মাফিক এসব খেতে হয়। সব থেকে বেশি চলে বাদাম, আখরোট, পেস্তা, খেজুর। এতে শরীর ভালো থাকে। বারদোলের মেলায় আফগানিস্তানের ড্রাইফ্রুট।-নিজস্ব চিত্র