সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: এক মাস ধরে গভীর নলকূপে জল উঠছে না। চাষের জমিতে জল সেচ বন্ধ। ক্ষতির মুখে পড়েছেন নবদ্বীপ ব্লকের চরব্রহ্মনগর এলাকার চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, এখানে চাষের কাজে ব্যবহার করা গভীর নলকূপের পাম্পটির ট্রান্সফরমারের সঙ্গে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ করা রয়েছে। সে কারণে পাম্পের মোটরের ক্ষতি হচ্ছে। জল তোলা যাচ্ছে না। আর জলের অভাবে নষ্ট হচ্ছে এলাকার প্রায় চারশো বিঘা জমির ধান, পাট সহ অন্যান্য ফসল। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে ওই ট্রান্সফরমারের চেঞ্জার নামিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ক্ষুব্ধ চাষিরা। ফলে ওই ট্রান্সফরমার থেকে দেওয়া প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়ির এবং একটি পাওয়ার লুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ভোটের মুখে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে এলাকায়। চাষিদের আশা, এই ক্ষোভ দেখে যদি নেতাদের টনক নড়ে। তাঁদের দাবি, ওই ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে শুধুমাত্র চাষের জমিতে জল সরবরাহ করা হোক।
এই পাম্পে নাইট গার্ডের কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা বিধান অধিকারী। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে এই গভীর নলকূপের পাম্পটা আমি চালাই। এই পাম্প হাউসের মাধ্যমে এখান থেকে এলাকার প্রায় চারশো বিঘা জমিতে জল সরবরাহ করা হয়। এক মাস ধরে এটি খারাপ হয়ে রয়েছে। এই ট্রান্সফরমার থেকে অন্যান্য লাইন গিয়েছে বলেই এই সমস্যা। মোটর খারাপ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ নিমাই অধিকারী বলেন, এই ডিপ টিউবওয়েলের পেছনে চরব্রহ্মনগর মৌজায় আমার পাঁচ বিঘা জমি আছে। এখন বোরো ধান লাগানো আছে। এই যে ট্রান্সফরমার থেকে আগে শুধু পাম্প চলত। পরবর্তী সময়ে এখানে বড় ক্যাপাসিটির ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৩৫টি বাড়ি এবং একটি পাওয়ার লুমে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৬ মাসে চারবার মোটর পুড়ে গিয়েছে। এখানে যাঁরা চাষ করেন তাঁদের প্রত্যেককেই বিঘা প্রতি পয়সা দিতে হয়। সব চাষি এক সঙ্গে টাকা জমা করে বিডিও অফিসে জমা দিই। হাই পাওয়ারের ট্রান্সফরমারের কারণে একমাস ধরে এই সমস্যা চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ অধিকারী বলেন, চাষিদের মূল দাবি এদের ২৫ কিলোওয়াটের যে পুরনো ট্রান্সফরমার ছিল সেই ট্রান্সফরমার এখানে বসাতে হবে। কেন না এখানে ৬৩ কিলোওয়াটের ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। অন্য লাইন দেওয়া হয়েছে। আর এই ট্রান্সফরমার বসানোর ফলেই মোটর পুড়ে যাচ্ছে। জল তুলতে না পারার কারণে ধানের জমিও ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ওরা এই ট্রান্সফরমারে চেঞ্জার নামানোর ফলে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল ।
অন্যের ৮ বিঘা জমিতে ভাগে চাষ করেন গীতা বিশ্বাস। তিনি বলেন, জলের অভাবে জমিতে ধান নষ্ট হচ্ছে। আর জলের জন্য পাট লাগানো যাচ্ছে না। এক বিঘা জমিতে যদি ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। তাহলে চার বিঘে জমিতে আমার ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টা সব নেতাকেই বলেছি, তারাও জানেন। নবদ্বীপ চরমাজদিয়া চরব্রহ্মনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন দেবনাথ বলেন, বিডিওর চেম্বারে এগ্রি ইরিগেশনের আধিকারিক, স্থানীয় বিদ্যুৎ পর্ষদের আধিকারিক এবং চাষিদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।