বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

সর্বধর্ম সমন্বয়ের মন্ত্রেই পথচলা শুরু মেদিনীপুর
শহরের খ্রিস্টান হিন্দু মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের

 

পিনাকী ধোলে, মেদিনীপুর: যতবার দেশে দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সাম্প্রদায়িক শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়েছে, ততবারই উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুর শহরের খ্রিস্টান হিন্দু মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন। এই ক্লাব মনুষ্যত্বের কথা বলে, সকল ধর্মের সম্প্রীতির কথা বলে। কোনও ব্যক্তিকে তার ধর্ম পরিচয়ে নয়, মানুষ হিসেবে চিনতে শেখায় এই ক্লাব। 
মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজারে যেখানে ক্লাবটি রয়েছে, সেই এলাকায় হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করেন। ক্লাবের পাশেই রয়েছে খ্রিস্টানদের চার্চ। সেই চার্চের পাশে রয়েছে শনিমন্দির। আবার ক্লাবের বাঁদিকে রয়েছে মসজিদ। ফলে এই এলাকার মানুষ ছোট থেকেই হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মের সহবস্থান দেখতে অভ্যস্ত। সেই সময় মূলত কিছু শিক্ষিত বেকার আড্ডাবাজ যুবক মিলে একটি ক্লাব তৈরির কথা ভাবেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে শুরু হয় খ্রিস্টান হিন্দু মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের পথ চলা। এর প্রতীকে রয়েছে খ্রিস্টানদের ক্রস, মুসলিমদের চাঁদ তারা এবং হিন্দুদের ওম চিহ্ন। ক্লাবের প্রথম সম্পাদক ছিলেন ভুজঙ্গ মান্ডি, সভাপতি ছিলেন প্রদীপ রায়। বর্তমানে ক্লাবের সভাপতি নির্মল চক্রবর্তী, সহ সভাপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক জয়ন্ত মাইতি, যুগ্ম সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কোষাধ্যক্ষ শিবেশ চক্রবর্তী। ক্রীড়া সম্পাদক শেখ আব্দুল সৈয়ুব। 
খ্রিস্টান হিন্দু মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যেমন ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো করা হয়, তেমনই ক্লাবের সদস্যরা মেতে ওঠেন ঈদের উৎসবে। বড়দিনে গা ভাসান শহরের বিভিন্ন চার্চে। ক্লাবের পক্ষ থেকে ঈদের সময় গরিব দুঃস্থ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন কাপড়। বড়দিনের সময় গরিব দুঃস্থ খ্রিস্টানদের নতুন কাপড়ের পাশাপাশি দেওয়া হয় কেক। একইভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় গরিব হিন্দু ভাইবোনেদের নতুন কাপড় বিতরণ করা হয় ক্লাবের তরফে। ক্লাবের সদস্যরা বন্যার সময় ত্রাণ নিয়ে যান ঘাটালে। করোনা কালে যে সমস্ত গরিব মানুষের কপালে দু’বেলা ভাত জুটছিল না, তাঁদের কাছে ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ক্লাব। 
এই ক্লাবের পক্ষ থেকে যেমন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়, দুঃস্থ মানুষদের চক্ষুছানি অপারেশনের ব্যবস্থাও করে এই ক্লাব। শিশুদের বিনোদনের জন্য ক্লাবের তরফে টানা সাতদিন ধরে শিশুমেলার আয়োজন করা হয়। এই ক্লাবের মূল উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এই পুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নচিকেতা সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি খেলাধুলায় একাধিক রেকর্ড রয়েছে এই ক্লাবের। মেদিনীপুর শহরে যত ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো, অধিকাংশই কখনও না কখনও জিতেছে এই ক্লাব। ক্লাবের রয়েছে নিজস্ব পাঠাগার ও জিম। জাতপাতের বিরুদ্ধে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘হে ভারত, ভুলিও না- নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই। হে বীর সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল- আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল- মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই।’ বিবেকানন্দের এই বাণীকে মূলমন্ত্র করে আজও গর্বের সঙ্গে হেঁটে চলেছে খ্রিস্টান হিন্দু মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন।

7th     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ