বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

অমরাবতীর স্বপ্ন ‘ফিরে পাওয়ার’ আশায় অন্ধ্রের জমিহারা কৃষকরা

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, বিজয়ওয়াড়া: থুল্লুরু গ্রাম থেকে বাসে বিজয়ওয়াড়া এসেছেন সুরেন্দ্র। সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে। যাবেন ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়াম। প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দেখতে। কিন্তু রাস্তাই যে বন্ধ! বাস নেই। সুযোগ বুঝে অটোও সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে। অগত্যা হাঁটা ছাড়া গতি নেই। ডান হাতে একটা বড় বোর্ড, প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া। নীচে বাঁশের সরু লাঠি। কী আছে ওতে? মোদির ছবি? মাথা নাড়লেন সুরেন্দ্র, ‘অমরাবতী থেকে ঢিলছোড়া দূরেই আমাদের গ্রাম। রাজধানী হবে বলে ২০ একর জমি দিয়েছিলাম। রাজধানীটা যেন অমরাবতীই হয়, সেই আর্জি নিয়ে মেয়ে পোস্টার বানিয়েছে। ওটাই দেখাব।’ বলেই পা চালালেন সুরেন্দ্র। বুধবারের রোড শোতে তাঁর পোস্টার অবশ্য দেখতে পাননি প্রধানমন্ত্রী। নিরাপত্তা বলয়ে আটকে যায় জমিদাতা কৃষকের দাবি। অনুনয় বিনয় করে কোনওমতে প্রথম গেট পেরোতে পারলেও সেকেন্ড গেটে ছাড় মেলেনি। দুটো মেটাল ডিটেক্টর গেটের কিছুটা দূরে ডাঁই করে রাখা জলের বোতল, মোদি-চন্দ্রবাবু-পবন কল্যাণদের ফ্লেক্স, কাট আউটের সঙ্গে ঠাঁই হল সেই পোস্টারটির। প্যাকেট জড়ানো অবস্থাতেই।
আসলে এবারের ভোটে অমরাবতী আর কোনও ইস্যুই নয়, বলছিলেন বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা অনিল রেড্ডি। তাঁর কথায়, রাজ্য ভাগের পর ১০ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও রাজধানী নেই অন্ধ্রের। কিন্তু ঘুরে দেখুন, কারও মুখে রাজধানী ইস্যু নিয়ে কোনও কথা নেই। 
অন্ধ্র ভাগের পর ২০১৫ সালে রাজধানী শহর অমরাবতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তেলুগু দেশম পার্টি সুপ্রিমো এন চন্দ্রবাবু নাইডু তখন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের আর্থিক উন্নতির জন্য তিনি একটি ‘গ্রিনফিল্ড রাজধানী শহর’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঠিক হয়, কৃষ্ণা নদীর তীরে ৩৩ হাজার একর উর্বর চাষের জমিতে গড়ে উঠবে রাজধানী অমরাবতী। কিন্তু চার বছর পরে তিনি নির্বাচনে হেরে যান। বদলে যায় ছবিটা। 
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই নাইডুর পরিকল্পনা বাতিল করে দেন জগন্মোহন। পরিবর্তে তুলে ধরে তিন রাজধানীর ভাবনা। কিন্তু তীব্র বিতর্কের জেরে ২০২২ সালের নভেম্বরে সেই নয়া আইন প্রত্যাহার করে জগন সরকার। জানানো হয়, এবার অমরাবতী থেকে রাজধানী যাবে বিশাখাপত্তনমে। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। ফের আন্দোলনে নামেন কৃষকরা। যদিও স্থানীয় রাজনীতিকদের মতে, অমরাবতীর আশপাশের ২০টি আসনে রাজধানী ইস্যুর প্রভাব পড়তে পারে। তার বেশি না।
প্রভাব যাতে পড়ে, সেই চেষ্টায় অবশ্য কসুর করছেন না চন্দ্রবাবু। টিডিপি-বিজেপি জনসেনা জোট ক্ষমতায় ফিরলে অমরাবতীই রাজধানী হবে বলে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার জেরে চন্দ্রবাবুদের জোটকেই ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অমরাবতীর অমর লিঙ্গেশ্বর মন্দিরের কাছেই ছোট্ট একটা দোকান চালান বৃদ্ধ সচিন রেড্ডি। পাশের চেয়ারে বসা নাতনিকে দেখিয়ে বললেন, ‘রাজধানী হলে এই জায়গাটার চেহারাই বদলে যেত। আমাদের তো জীবন কেটে গেল। ওদের জীবনটা অন্যরকম যাতে হয় সেই জন্যই সাইকেলে (টিডিপির প্রতীক) ভোট দেব।’
চন্দ্রবাবুকে মিথ্যাবাদী বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন জগনও। ওয়াইএসআর কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘সমীকরণটা জানেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই জন্যই জাতপাতের হিসেব কষে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। যেমন মঙ্গলগিরিতে টিডিপির নারা লোকেশের পাল্টা ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের মুরুগুরু লাবণ্যকে প্রার্থী করা হয়েছে। কারণ এই আসনে একটা বড় অংশের ভোটার তাঁতি সম্প্রদায়ের।’ 
আগাছায় ঢাকা অর্ধসমাপ্ত বাড়িগুলি দেখতে আর ভালো লাগে না সুরেন্দ্ররও। মোদিকে এদিন পোস্টার দেখাতে না পারলেও ভোট দেবেন ‘নাইডু গারু’কেই। রাজধানী ফিরে পাওয়ার আশায়!

10th     May,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ