বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

জিতলে দেশ বেচে দেবেন মোদি, ফুঁসছে নাসিক

সমৃদ্ধ দত্ত, নাসিক: ভগবন্ত নেতারে বললেন, ‘আরও একবার জয়ী হয়ে আসতে দিন নরেন্দ্র মোদিকে। এবার ভারতকে বিক্রি করে দেবে।’ এত রাগ কীসের? পিম্পি গ্রাম থেকে মান্ডিতে পেঁয়াজ নিতে আসা সব্জি বিক্রেতা ভগবন্ত বললেন, ‘এই যে ভোটের আগে বাজার চড়িয়ে দেওয়া হল। অনেকেই মনে করবে, কৃষকদের বোধহয় অনেক মুনাফা হবে। আমাদের মতো ব্যাপারীদের লাভ হবে। কিচ্ছু হবে না। লাভ হবে মোদির বন্ধু ব্যবসায়ীদের।’ কিন্তু রপ্তানির দরজা আবার খুলে গেলে তো ভালোই। আবার পেঁয়াজের দাম কৃষকরা পাবেন। কৃষকদের তো এটা‌ই দাবি ছিল গত বছর থেকে? ভগবন্ত দাঁড়িয়ে আছেন দিন্দোরি নাকা থেকে একটু আগে লাসালগাঁও সব্জি মান্ডির এন্ট্রি পয়েন্টে। বললেন, ‘যান এগিয়ে যান। ওই যে দূরে ডানদিকে পরপর সব লরি দাঁড়িয়ে আছে, ওটাই পেঁয়াজ মান্ডি। দেখে আসুন, জেনে আসুন, চাষিরা খুশি কি না। তার কী দাম পাচ্ছে দেখুন।’ কিন্তু মানুষের কাছে যাতে কম দামে পেঁয়াজ পৌঁছয়, সেই কারণেই তো রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে কেন্দ্র? ভুল কোথায়? ভগবন্ত করুণা মিশ্রিত চোখে তাকালেন। বললেন, ‘তাই নাকি? আপনারা জানেন যে, নাসিকের লাল পেঁয়াজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে। অথচ গুজরাতের সাদা পেঁয়াজে নিষেধাজ্ঞা নেই! আপনারা খোঁজ রাখেন, গুজরাতের সাদা পেঁয়াজের রপ্তানিকারী ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো সব বিজেপির কাছের মানুষ? গত সেপ্টেম্বর থেকে নাসিকের পেঁয়াজ চাষিদের অন্ধকারে রেখে গুজরাত একতরফা সাদা পেঁয়াজ রপ্তানি করে বিপুল লাভ করে নিয়েছে। এই হল আচ্ছে দিন, সব কা সাথ সবকা বিশ্বাস!’ গজগজ করতে করতে মান্ডি ছেড়ে চলে গেলেন ভগবন্ত! 
ওই যে হারসুল গ্রাম থেকে আসা সঞ্জয় কারকে বসে আছেন। ১৫ কুইন্টাল পেঁয়াজ এনেছেন। মান্ডিতে বিক্রি করবেন ভেবে। তিনদিন হল কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজের উপর রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। এখন কেন? কারণ লোকসভা ভোট। শেষ বেলায় কৃষকদের মন পাওয়ার মরিয়া তাগিদ। সেপ্টেম্বর মাসে আরোপ করা হয়েছিল ৪০ শতাংশ ট্যাক্স। অর্থাৎ রপ্তানি করলে ৪০ শতাংশ বাড়তি ট্যাক্স দিতে হবে। আর ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। নাসিক জেলাজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ। কৃষকদের। তাঁদের কাছে হিমঘরে রাখার জন্য এত টাকা কোথায়! ধনী ব্যাপারীরা কিন্তু সব রেখে দিতে পেরেছে। আর কৃষকরা বাধ্য হয়েছে সস্তায় হাজার হাজার কুইন্টাল ছেড়ে দিতে। সঞ্জয় কারকে বললেন, ‘২ একর চাষ করেছি। ৭০ হাজার টাকা লগ্নি। এত মাস পর রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও মুনাফা কোথায়? সোমবারও দাম পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ টাকা কুইন্টাল। অথচ রপ্তানির জন্য মিডলম্যান এই পেঁয়াজ বিক্রি করবে দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ দামে। অন্তত ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা না হলে আমাদের লাভ নেই। এসব ভোটের হুজুগ। চাষিদের কথা মোদি সরকার ভাবলে নাসিকে পেঁয়াজ চাষ ও সাপ্লাইয়ের নীতি তৈরি করত। করে না। প্রতি বছর এক কাহিনি। দাম না পাওয়া। আত্মহত্যা। তারপর রপ্তানির দরজা খোলা। এরপরই দেশে দাম বাড়বে। সব লাভ ধনী ব্যাপারীদের।’
নাসিক শহরের কেন্দ্রস্থল রামঘাট। বয়ে চলেছে গোদাবরী। রামচন্দ্র এখানেই রাজা দশরথের পিণ্ডদান করেছিলেন। সেখানে চলছে যথারীতি পিণ্ডদান, শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া। সোমবার ভরদুপুরে হঠাৎ হাজির রাজাভাও ওয়াজে। উদ্ধব থ্যাকারের শিবসেনা প্রার্থী। দোকানে দোকানে ঘুরছেন। রামঘাটে নেমে গোদাবরী স্পর্শ করলেন। ৪০ বছর ধরে রামঘাট লাগোয়া মার্কেটের দোকানী সুরেশ তালপাড়ের কাছে গিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ প্রার্থী বললেন, ‘আমাদের কথা মনে রেখো কিন্তু!’ সুরেশ বেরিয়ে এসে বললেন, ‘বালাসাহেবের সঙ্গে যারা গদ্দারি করেছে, তাদের সঙ্গে আমরা নেই।’ সঙ্গে সঙ্গে অন্য দোকানীরা জয় শিবাজি মহারাজ কী জয় বলে হুঙ্কার দিয়ে সমর্থন করল। ঘিরে থাকা মিডিয়াকে রাজভাউ ওয়াজে বললেন, ‘আমাদের কিছু বলতে হচ্ছে না। বিজেপি বেইমানির রাজনীতি আমদানি করছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রে ভুল করেছে। বালাসাহেবের কাঁধে চেপে যে বিজেপির উত্থান হল, আজ সেই বালাসাহেবের দলকে ভেঙে দিয়েছে। এবার শিক্ষা পাবে।’ দুবারের শিবসেনা এমপি হেমন্ত গডসে শিন্ধে গোষ্ঠীর প্রার্থী। এত বছর ধরে যারা পরস্পরের রাজনৈতিক সহকর্মী, সেই শিবসেনা বনাম শিবসেনার লড়াইয়ে প্রবল আগ্রহ নাসিকে।
দল ভাঙার খেলা। প্রবল কৃষক বিক্ষোভ। মারাঠাদের ওবিসি সংরক্ষণ এবং বালাসাহেব! তিনি নেই। অথচ আজও তিনিই মারাঠা মানসের ম্যাজিশিয়ান। বালাসাহেবের অডিও ভিডিও বাজছে! মোদি ফ্যাক্টর বনাম থ্যাকারে লিজেন্ড! নরেন্দ্র মোদির মারাঠা অভিযান মসৃণ হচ্ছে না! 

8th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ