বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

কর্ণাটক: হাভেরির গ্রামে বসেই টেলিস্কোপে মহাকাশের পাঠ, ছায়াপথ-দর্শনে মগ্ন যুবক নিরঞ্জনগৌড়া

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, হাভেরি: বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হয় হয়। কান্নুরের আকাশজুড়ে ছড়িয়ে লালচে আভা। কিছুটা দূরে ধুলোর কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠেছে। একটু ভালো করে তাকাতেই বোঝা গেল, দ্রুতগতিতে একটা গাড়ি আসছে। থামল বাজারের তিন মাথার মোড়ে, একটা চায়ের দোকানের সামনে। সাদা এসইউভিতে কন্নড়ভূমের লালচে ধুলোর আস্তরণ! অফ রোড ড্রাইভিংয়ের ফল। আকাশের রং যেন গাড়িতে মিশে একাকার। ড্রাইভিং সিটের জানলার কাচ নামিয়ে মুখ বের করলেন এক তরুণ। কন্নড় ভাষায় কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। মানে না বুঝলেও প্রশ্ন করার ধরনে বুঝলাম, রাস্তা জানতে চাইছেন। বেঞ্চের এক কোণে বসা মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক পাল্টা কিছু প্রশ্ন করলেন। উত্তর শুনে আঙুল উঠল ওই দূরে... গ্রাম ছেড়ে সে রাস্তা মিশেছে প্রকৃতিতে।
‘ওদিকে কী আছে?’ প্রশ্ন শুনে হাসলেন সেই ভদ্রলোক। নাম উন্নিকৃষ্ণণ। স্থানীয় বাসিন্দা। বললেন, ‘আমাদের গ্রামের ইন্টাস্টেলার অ্যাস্ট্রোনমি ফার্ম তো ওদিকেই। সেটা দেখার জন্যই এরা গাড়ি নিয়ে এসেছে হুবলি থেকে।’ অ্যাস্ট্রোনমি ফার্ম! তাও এরকম জায়গায়! অবাক হতেও অবাক লাগল। হাভেরির শিগ্গাও তালুকের কান্নুর গ্রাম দেশের আর পাঁচটা গ্রামের মতোই। অতীব সাধারণ। সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। ভোট নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আছে আইপিএলের ম্যাচ দেখার তাড়াও। তাই বলে অ্যাস্ট্রোনমি ফার্ম! উন্নিকৃষ্ণণ জানালেন, এই ইন্টাস্টেলার অ্যাস্ট্রোনমি ফার্ম তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন গ্রামেরই এক যুবক। নিরঞ্জনগৌড়া খানগৌড়া। হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে স্নাতকোত্তরের পর গ্রামে ফিরে তিনি এই ফার্ম তৈরি করেছেন।
পড়াশুনো এক ব্যাপার। তার বাস্তব প্রয়োগও সাধুবাদের যোগ্য। কিন্তু পড়াশুনো ও বাস্তব প্রয়োগের ফল অ্যাস্ট্রোনমি ফার্ম! এ তো র‌্যাঞ্চোর (Rancho) সেই স্কুলের মতো। রিয়াল লাইফে নিরঞ্জনগৌড়ার কীর্তিও কম চমকপ্রদ নয়। গ্রামের বাইরে পারিবারিক জমি ছিল। ৬০ একর জমিতে দিব্য চাষবাস হতো। কিন্তু পড়াশুনোর সময় থেকে রাতভর আকাশ দেখার যে টান, সেটার তো কোনও সুরাহা হল না! আগ্রহ ও আগ্রহী নিজেদের রাস্তা ঠিকই খুঁজে নেয়। ফার্মের ভাবনাটাও সেখান থেকেই। সেই শুরু। কান্নুরের রাতের আকাশ বটল-২ স্কাই লেভেল ক্যাটিগরিতে পড়ে। মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সেরা লাদাখের ঠিক একধাপ নীচেই। আর সেই দৌড়ে বেঙ্গালুরুর মতো শহর রয়েছে বটল ৮ বা বটল ৯ ক্যাটিগরিতে। শহুরে এলাকার থেকে এখানে দূষণ অনেক কম হওয়ায় এটা মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত সুবিধার।
জানা গেল, আগ্রহীদের জন্য এখানে আটটি বড় টেলিস্কোপ বসিয়েছেন নিরঞ্জন। ক্যাম্পে রাতে থাকার জন্য বসানো হয়েছে টেন্ট। গোটা পর্বটি শুরু হয় বিকেল থেকে। আগে থেকে রেজিস্টার করা আগ্রহীদের ক্যাম্পে চলে আসতে বিকেলের মধ্যেই। সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত রয়েছে আর্চারি ও শ্যুটিংয়ে হাত পাকানোর সুযোগ। এর পরে টেলিস্কোপ সম্পর্কে বিশদে বোঝানোর পরেই শুরু হয় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ। চাঁদ, নানান গ্যালাক্সি, ছায়াপথ দেখার পর নৈশভোজ। এরপর ফের রাতভর চলবে টেলিস্কোপে চোখ রেখে আকাশ দেখা। ভোররাতে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। সকালে টেলিস্কোপে সূর্য-দর্শন। এরপর প্রাতঃরাশ করে বিদায়।
স্টারগেজিং বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ভারতে, বিশেষ করে কর্ণাটকে এখনও এনিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই। তবে ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ছবিটা বদলাবে, আশায় নিরঞ্জন।

6th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ