বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

দ্বন্দ্বের চোরাস্রোতে উধাও রাজকীয় ঔদ্ধত্য

সমৃদ্ধ দত্ত, গোয়ালিয়র: ‘এখন বিকেল ৪টে। এই অংশটায় আগে ছিল খাজাঞ্চি, নায়েব, গোমস্তা, কেরানি, সিপাহসালার এবং হিসেবরক্ষকদের থাকার জায়গা। কর্মচারীদের আবাসন। সিন্ধিয়া প্রাসাদের রাজকর্মচারীরা পরিবার নিয়ে এখানেই থাকতেন। রাজমাতা বিজয় রাজে সিন্ধিয়াকে ইন্দিরা গান্ধী জেলে পাঠানোর পর থেকে ধীরে ধীরে সিন্ধিয়া পরিবারের কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক কার্যকলাপ আরও বেড়ে যায়। তারপর তো বাজপেয়িজি আর আদবানিজি দলই গঠন করলেন। সেই থেকে রাজমাতা এই অংশটায় বসতেন। ভিড় বেড়ে চলল প্রাক্তন জনসঙ্ঘ এবং পরে বিজেপি হওয়া নেতা-কর্মীদের। কিন্তু তিনি ইন্দিরা-বিরোধী হলে কী হবে! একমাত্র ছেলে যে কখন রাজীব গান্ধীর বন্ধু, আর কংগ্রেসের ঘরের লোক হয়ে গেল, রাজমাতা প্রথমে বুঝতে পারেননি। বুঝলেন অনেক দেরিতে। সেই থেকেই এই শ্বেতশুভ্র প্রাসাদে দু’টি সমান্তরাল রাজনীতির স্রোত। কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কখনও রাজমাতার মহলে, কখনও আবার পুত্র মাধবরাওয়ের দপ্তরে সারাক্ষণ ভিড় উপচে পড়াই ছিল দস্তুর। স্ট্র্যাটেজি মিটিং থেকে নির্বাচনের স্লোগান রচনা—ইতিহাসের কত উত্থান-পতনের সাক্ষী এই ঘরগুলি। সিন্ধিয়া রাজপ্রাসাদের পিছনের দরজার বাঁদিকে এই অফিস আপাতত প্রায় জনশূন্য।’ এই পর্যন্ত বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সর্বেন্দ্র সিং। ৪৬ বছর হয়ে গেল প্রাসাদে। রাজমাতা, মহারাজ মাধবরাও সিন্ধিয়া, যুবরাজ জ্যোতিরাদিত্য কিংবা ‘মহারাজা’ জ্যোতিরাদিত্য। সিন্ধিয়া পরিবারের প্রত্যেকের মুশকিল আসান এই আশি ছুঁইছুঁই সর্বেন্দ্র। লোকসভা ভোট এলে যাঁর নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকত না, আজ সেই মানুষের হাতে অঢেল ফুরসৎ। কারণ গোয়ালিয়রে তাঁর রাজপাট, প্রাসাদ, সদর কার্যালয় থাকলেও মহারাজা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া গুনা লোকসভা থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আর তাই রানিমা, যুবরাজ, রাজকুমারী সকলেই সেখানে। ছুটছেন তাঁরা। ঘামছেন তাঁরা। গরিবের ঘরে খাচ্ছেন। ছবি তুলছেন। জ্যোতিরাদিত্যর জীবনের অগ্নিপরীক্ষা এই ভোট। গোয়ালিয়ার লোকসভা তাই আপাতত নির্জন, একাকী, নিস্তরঙ্গ। এতকাল নিজে অন্যত্র প্রার্থী হলেও সিন্ধিয়া প্রাসাদই হতো নির্বাচনী সদর দপ্তর। সিন্ধিয়া তাঁর একদা পারিবারিক রিয়াসতের মধ্যে থাকা চম্বল এলাকার তাবৎ লোকসভা কেন্দ্রেই ছুটে বেড়াতেন। সব প্রার্থী তাঁর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন। পরিবারে মহারাজা, পার্টিতেও। কিন্তু এবার আর অন্য লোকসভার দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই তাঁর। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। তাই গোয়ালিয়রের বিজেপি প্রার্থীকে জেতানোর তাড়না নেই তাঁর। কেন? প্রথম কারণ, আগে গুনায় নিজে জিতবেন কীভাবে, অঙ্ক সেটাই। আর দ্বিতীয় কারণ, বিজেপির অন্দরের ঝগড়া। রাজপ্রাসাদ তাই এই প্রথম ভোটের উত্তাপ থেকে বহু দূরে। সর্বেন্দ্র সিং অফিস কেয়ারটেকারকে বললেন, ‘চেয়ারগুলো ঢুকিয়ে আনো। কেউ আসবে না। কেউ আসে  না।’ কারণ কী? গোয়ালিয়রে এখন দু’রকম বিজেপি। সরগরম কাম্পু পার্টি অফিসে নির্বাচনের জন্য যাঁরা প্রবল ব্যস্ত, এঁরা সকলেই আদি বিজেপি। নরেন্দ্র সিং তোমারের গোষ্ঠী। তারাই এতকাল ছিল দলের সর্বেসর্বা। কংগ্রেসের কর্মী-বিধায়কদের নিয়ে আচমকা মহারাজা নিজেই যে বিজেপিতে যোগ দেবেন, গেরুয়া নেতা-কর্মীদের কাছে এ আজও অবিশ্বাস্য। মহেন্দ্র কুশওয়া নিজে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। অথচ ভাবলেশহীন হয়ে বললেন, ‘আমাদের দল তো রাজা মহারাজা দেখে চলে না। আমরা সাধারণ মানুষের পার্টি। মহারাজা ব্যস্ত গুনায়। তাতে কী! মোদিজির গ্যারান্টি তো আছে।’ বস্তুত সিন্ধিয়া ক্যাম্পের কেউ গোয়ালিয়রে প্রচার করছেন না। বরং তোমারের প্রভাব কমুক, এটাই চান তাঁরা। অতএব বিজেপি প্রার্থী ভরত সিং কুশওয়ার শ্যাম রাখি না কুল অবস্থা। সিন্ধিয়া যদি এবার গুনায় জিতে যান, তিনি আগামী দিনে শক্তিশালী বিজেপি নেতা হবেন। অতএব তাঁকে উপেক্ষা করা যায় না। আবার নরেন্দ্র সিং তোমার তাঁর গডফাদার। তাঁকেও অশ্রদ্ধা করা যাবে না। বিজেপি বনাম বিজেপির এই গোপন লড়াইয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস কোথায়? গ্যালারিতে বসে ভোট দেখছে। এই সেদিন বিধানসভা ভোটে  হেরে যাওয়া প্রবীণ পাঠককে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁকে গোয়ালিয়র শহরের বাইরে কেউ চেনেও না। জানেও না। কীসের ভরসায় লড়ছেন তিনি? যাদব ভোটের ভরসায়। শিল্প নেই। চাকরি নেই। উন্নয়ন নেই। মলিন গোয়ালিয়রের মনই নেই ভোটে।

4th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ