বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

বিস্ফোরণের আতঙ্ক ভুলেও ভুলছে না রামেশ্বরম কাফে

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, বেঙ্গালুরু: ভরদুপুর। চড়া রোদে পুড়ছে ব্রুকফিল্ডের আইটিপিএল মেইন রোড। গাড়ির সংখ্যা বেশ কম। বেঙ্গালুরু শহরের চেনা জ্যাম উধাও। তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া সরকারি বাসগুলোকে পাশ কাটাতেই সামনে গ্রিন অ্যাভিনিউয়ের প্লট নম্বর ওয়ান। ফুটপাতে হলুদ রেলিং, পিছনে কালো গেটের ওপারে দেখা যাচ্ছে ঠিক দু’মাস আগে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা ‘দ্য রামেশ্বরম কাফে’-র ব্রুকফিল্ড শাখা।
একটানা টি টি শব্দ আসছে প্রবেশদ্বারে বসানো দুটো ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর থেকে। সামনে জনাপনেরো ছেলেমেয়ের লাইন। বেশিরভাগের গলায় ঝুলছে আই-কার্ড। ব্রুকফিল্ড আসলে বেঙ্গালুরুর আইটি অফিস পাড়া। এটা লাঞ্চ ব্রেকের ভিড়। প্রবেশ পথটা ফানেলের মতো। মেইন গেটটাকে কিছুটা জায়গা পর্যন্ত টেনে এই বন্দোবস্ত, যাতে কেউ সাইড দিয়ে না ঢুকতে পারে। মেটাল ডিটেক্টরের দরজা পেরলে আরও একটা সুরক্ষা বলয়। মেটাল ডিটেক্টর হাতে আগাপাশতলা খুঁটিয়ে দেখছেন নিরাপত্তারক্ষী। মোবাইল ফোন, খুচরো কয়েন হোক বা ব্লুটুথ ইয়ারপিস—একে একে পকেট থেকে বার করতে হচ্ছে সব। নিরাপত্তারক্ষী নিশ্চিন্ত হলে মিলছে প্রবেশের অনুমতি।
এরইমধ্যে লাইনের শেষপ্রান্তে ৫০ লিটারের রুকস্যাক কাঁধে আগন্তুককে দেখে উত্তেজনা বাড়ল। কর্তব্যরত কর্মী চেঁচিয়ে আরেকজনকে ডাকলেন। ইশারায় নির্দেশ এল, ব্যাগ পরীক্ষা হবে। মেটাল ডিটেক্টর একবারও আওয়াজ না করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ওই কমবয়সি রক্ষী। কলকাতা থেকে এসেছি শুনে হেসে বললেন, ‘বোঝেনই তো সবটা। বিস্ফোরণটাও এরকম দুপুরেই হয়েছিল। তখন তো সব খোলামেলা ছিল। ওই সুযোগেই...।’ কথা শেষ করলেন না। দরকারও পড়ল না। বাকিটা তো সবারই জানা। 
গত ১ মার্চ, শুক্রবার দুপুরেই আচমকা রান্নাঘরের দিক থেকে ধোঁয়া দেখে হইচই শুরু হয়েছিল এই রামেশ্বরম কাফেতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তীব্র বিস্ফোরণ। জখম হন প্রায় ১০ জন। তারপর অ্যাম্বুলেন্স, পুলিসে পুলিসে ছয়লাপ। গত মাসে নিউ দীঘা থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে সেই বিস্ফোরণকাণ্ডের দুই মূল অভিযুক্তকে। সেই ভেঙে যাওয়া দেওয়াল, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা এখন আগের মতোই ঝাঁ চকচকে। নিরাপত্তার দুই বলয় আর তিনটে সিঁড়ি পেরিয়ে ভিতরে ঢোকার আগেই নাকে এল মাখনের গন্ধ। মাঝে দাঁড়িয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা। ডান দিকে কোণায় বসার টেবিল। পাশে কাউন্টার, ডিসপ্লে বোর্ডে ১০ রকমের ধোসা, পাঁচ রকমের ইডলি, স্পেশাল রাইসের মেনু। বাঁ দিকে যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল, ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তিনজন। উল্টোদিকে বাঁধানো কালো পাথরের উপর বসে অনেকেই হাতে ফিল্টার কফি, আড্ডা দিচ্ছেন। আতঙ্ক? কোথাও লেশমাত্র নেই।
ধোসা অর্ডার দিয়ে বসেছিলাম কোণার শেষ টেবিলে। উল্টোদিকে এসে বসলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। সঙ্গে বছর দশেকের এক খুদে। পাশের ঢাউস ব্যাগ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোথা থেকে?’ কলকাতা থেকে আসার কারণ শুনে বললেন, ‘বেশ করেছেন। আমরাই যদি ভয় পাই, তাহলে তো মানুষের স্পিরিট বলে আর কিছু থাকবে না। এই দেখুন না, নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ছেলে-বউমা বলে কী দরকার। আমি বলেছি, দরকার আছে। ভয়কে জয় করার।’ কিছু বলার আগেই হাতে থাকা ইলেকট্রনিক নাম্বার বোর্ডটা ভাইব্রেট করা শুরু করেছে। সঙ্গে যান্ত্রিক আওয়াজ। এখানে অর্ডার রেডি হলে ডাকার এই ব্যবস্থা। আচমকা সেই খুদে বলল, ‘এটা একদম ফিনিক্সের মতো। তাই না দাদু?’
খাবার সময় কথাটা মাথায় ঘুরছিল। একদম ঠিক বলেছে তো! ফিনিক্স, ধ্বংস থেকেই যার পুনর্জন্ম।

3rd     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ