সংবাদদাতা, বোলপুর: অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের জবাব তাচ্ছিল্য সহকারেই দিলেন অমর্ত্য সেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের সন্ধ্যায় বিশেষ উপাসনা শেষে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, উপাচার্য হিসেবে বিশ্বভারতীর জমি উদ্ধার করা ওঁর নৈতিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অমর্ত্য সেনকে চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য ওঁকে অপমান করা নয়। উনি নমস্য। কিন্তু নোবেল বিজয়ী নন। কারণ নোবেলের ডিডে লেখা আছে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, মেডিসিন, সাহিত্য ও বিশ্বশান্তি, এই পাঁচটি বিষয়েই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে সুইডেন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে অর্থনীতিতে পুরস্কার চালু করে। সেটিকে বলা হয়, ‘ব্যাঙ্ক অব সুইডের প্রাইজ ইবন ইকনমিক সায়েন্স ইন মেমোরি অব আলফ্রে নোবেল’। তাই তথ্যের দিক থেকে কেউ যদি দাবি করেন উনি নোবেল প্রাপক, তাহলে তিনি ভুল করবেন। আমি ওঁকে বলব, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে বিশ্বভারতীর যে ১৩ ডেসিমেল জমি কব্জা করে রেখেছেন আলোচনার মাধ্যমে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
এরপর শুক্রবার দুপুরে সাংবাদকিদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপাচার্যের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, উনি যত ইচ্ছা দাবি করতে পারেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। জমি বিতর্ক প্রসঙ্গে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছিলেন, অমর্ত্য সেন আদালতে যাচ্ছেন না। সেই প্রসঙ্গ তুলতে অর্থনীতিবিদ হাসতে হাসতে বলেন, হ্যাঁ, আমি সত্যিই আদালতে যাচ্ছি না। তবে আমি ভয়ে আদালতে যাচ্ছি না এটা উপাচার্য যদি মনে করেন তাহলে তাঁর চিন্তাশক্তি নিয়ে আমাদের ভাববার কারণ আছে। ১৩ ডেসিমেল জমি বিতর্কে তিনি বলেন, লিজের বাইরে বেশ কিছু পরিমাণ জমি আমার বাবা (প্রয়াত আশুতোষ সেন) কিনেছিলেন। সেই জমিতেই বাড়ি তৈরি হয়। ওই পরিমাণ জমির বাইরে যাওয়ার কোনওরকম কোনও কারণ ছিল না, এখনও নেই। উপাচার্য যদি মাথা খাটিয়ে নতুন তথ্য বের করেন তাহলে সেটা কোথা থেকে এল, সেই জবাব তাঁকেই দিতে হবে। আমিও তো উপাচার্যের বাড়ি দেখিয়ে বলতে পারি, এখানে আমার ছোটমামা থাকতেন। উপাচার্যকে প্রশ্ন করতে পারি, উপাচার্য আপনি আসুন, দেখান এ জমি আপনার, আমার ছোটমামার নয়। সুতরাং, যে কোনও বিষয়ে কথা বাড়াতে চাইলে বাড়ানো যায়। এমন লোক যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় আসেন, যিনি সত্য মিথ্যার তফাৎ করতে পারেন না, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কেন খারাপ, সেই নিয়ে আলোচনার অবকাশ খুব কম।
তিনি এখন শান্তিনিকেতনে, কয়েকদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও আসছেন বোলপুরে, দেখা কি হতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। উপাচার্যের আক্রমণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে কেন উনি টার্গেট করছেন আমি জানি না। এরপর ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা বসতে আমি অত্যন্ত উৎসুক। ওঁর সঙ্গে আলোচনা করলে আমার বুদ্ধির বিকাশ হবে।