বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

প্রতিমা মণ্ডপে তোলা থেকে বিসর্জন,
দড়ি-বাঁশ দিয়ে কামাল করেন সুবলরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ওঁদের পুজোর আনন্দ শুরু হয় দুর্গা গঙ্গায় পড়ার  পর। পুজো শুরুর আগে ওঁরা পটুয়াপাড়ায় চিৎকার করেন, ‘বাবু ঠাকুর নিয়ে যাবেন?’ তারপর রফা হয়। শেষে ঢাউস ঢাউস নৌকা বাঁধার কাচি দড়ি দিয়ে বেঁধে, বাঁশ ঠেলে প্রতিমা গাড়িতে তোলেন। পৌঁছে দেন প্যান্ডেলে। ওঁরাই পুজো শেষে মন্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে যান গঙ্গায়। বিসর্জনের পর ওঁদের ছুটি। এই ক’দিনের অর্জিত সামান্য কিছু টাকা দিয়ে শহরের ফুটপাথ বা গ্রামের হাটবাজার থেকে স্ত্রী-সন্তানের জামাকাপড় কেনেন। তারপর বাড়ি ফেরা। নতুন জামা আর বাড়ি ফেরার আনন্দে পুজো শুরু হয় তাঁদের। অনেকটা ঢাকিদের মতই পুজো শেষের পর শুরু হয় তাঁদের উৎসব। ওঁরা বাংলার গ্রামগুলো থেকে এসে থাকেন কুমোরটুলি, কালীঘাট ও অন্যান্য কুমোরপাড়ার আশপাশে। তাঁরা সস্তার হোটেলে খান। ফুটপাথে বা রোয়াকে ঘুমোন। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘুরে বেড়ান। কোনও পুজো কমিটির কর্তাকে দেখলে আশপাশে ঘুরঘুর করেন। তারপর প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার বরাত পেলে নিশ্চিন্ত হয়ে দড়ি-বাঁশ কাঁধে নিয়ে নেন। 
এঁদের চারজনের একটি দল রবীন্দ্র সরণির একটি রকে পুজোর সময় রাত কাটাচ্ছিল। দলটিতে রয়েছেন সন্ন্যাসী সরদার, রূপকুমার মণ্ডল, দুখীরাম হাজরা ও প্রণব পাঠক। সন্ন্যাসী ও রূপকুমার থাকেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে। আর দুখীরাম ও প্রণবের বাড়ি  ক্যানিং (২)তে। তাঁরা সারা বছর অন্যের জমিতে ঠিকা খাটেন। তাতে সংসার চালানো মুশকিল। বললেন, পুজোর কটা দিন আমরা দুটো টাকার মুখ দেখতে পাই। মহালয়ার দু-একদিন আগে কলকাতায় চলে আসি। একাদশীর দিন ফিরে যাই গ্রামে। আবার কালীপুজোর দু-তিন দিন আগে আবার কলকাতায় আসি। কালীপুজো মিটলে ফিরে গিয়ে আবার চাষবাস শুরু করি। বছর আটত্রিশের দুখিরাম বললেন, ‘ঠাকুর তোলার টাকা দিয়ে বাড়ির জন্য জামাকাপড়, খাবারদাবার কিনি। পরিবারের মুখে আনন্দ দেখলে আর কোনও কষ্ট থাকে না। কিছু টাকা হাতে রেখে দি। তা দিয়ে ধার দেনা মেটাই।’
কুমোরটুলির এক ঘিঞ্জি গলির মধ্যে দেখা মিলল বসিরহাট থেকে আসা তপন মাজি, সুবল সামন্তের সঙ্গে।  দু’জনেই চল্লিশ ছুঁইছুই। তাঁরা বললেন, ‘আমরা বাড়ি তৈরির জোগাড়ের কাজ করি। ভ্যানও চালাই। পুজোর সময় এখানে আসি। বাড়তি কিছু রোজগার হয় এ সময়। তপন মাজি বললেন, ‘গত দু’বছর করোনার জন্য বাজার খুব খারাপ ছিল। আগেরবার জামাকাপড় কেনাও হয়নি। এবার মোটামুটি টাকা হাতে এসেছে। তবে এবারে অনেকে মুটের কাজ করতে কুমোরটুলি এসেছে। ফলে তেমন রোজগার হয়নি।’ 
তবে এঁদের সবারই মুখে অল্পবিস্তর হাসি ফুটেছে। এঁদের কেউ কেউ শহর ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এখনও থেকে গিয়েছেন। তাঁরা সবাই বাড়ি ফিরলে তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে। এই মানুষগুলোর উৎসব এবার শুরু হবে।

7th     October,   2022
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ