ময়নাগুড়ি সদর থেকে মাত্র ৫ কিমি হাঁটা পথ। পথে পড়বে দুটো সেতু। প্রথমে জরদা নদী, তারপর আমগুড়ির আগে মরাখাওয়া নদী পেরলেই পেটকাটি গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে ‘দেবী পেটকাটি’-র মন্দির।
কেউ বলেন তুসু, কেউ বা টুসু। রাঢ় বাংলার লোকশিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে একমাস ব্যাপী এই পরব। যার মূল বৈশিষ্ট্যই হল গান। গানের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে মানভূমের আদিবাসী জীবনের সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, স্বপ্ন।
এ কথা শুনলে হয়তো তিড়িং করে লাফিয়ে উঠবে বৈষ্ণব সমাজের একটা বড় অংশ! কিন্তু অনেক গোঁসাই-ই জানেন—চৈতন্য-নিত্যানন্দ যুগ থেকে আজও এই বঙ্গে সমানে চলে আসছে বৈষ্ণবদের মৎস্য মেলা!
‘আউনি বাউনি চাউনি/তিন দিন কোথাও না যেও/ ঘরে বসে পিঠে-ভাত খেও।’ পৌষ সংক্রান্তিতে গ্রামবাংলার গেরস্তবাড়িতে কান পাতলেই শোনা যায় এই প্রচলিত ছড়া।
একেবারেই ‘ছেলের হাতের’ জিনিস নয়। শীত এলেই শহরের রাস্তায় দেখা মেলে এই মিষ্টির। দোকানে দোকানে কাগজের প্যাকেটে হলুদ পলিথিনের নীচে যে নিরীহ মিষ্টিগুলো উঁকি মারে তা মোয়া ঠিকই, কিন্তু তার গায়ে জন্মভিটের কোনও গন্ধ নেই।
স্বামী বিবেকানন্দের মহাপ্রয়াণ ১৯০২ সালের ৪ জুলাই। সূর্য সেনের বয়স তখন মাত্র ৮ বছর তিনমাস ১২ দিন। পরবর্তী সময়ে ‘বিপ্লবী মাস্টারদা’ হয়ে ওঠার পথে স্বামীজিকে আদর্শ মেনেছিলেন তিনি। সেই মাস্টারদা শহিদ হলেন স্বামীজির জন্মদিনে।
আহারবিলাসী ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তবে মিষ্টান্নপ্রীতি তাঁর কোনওকালেই ছিল না। তা বলে কি তিনি মিষ্টি খেতেন না? আলবাৎ খেতেন। রসগোল্লা খাওয়ার টানেই তো পরমহংসের কাছে গিয়েছিলেন নরেন। এ ছাড়া নাকি মাঝেমধ্যেই ছানাবড়া, মালপোয়া, লাড্ডুও খেতেন।
‘সদর স্ট্রীটের রাস্তাটা যেখানে গিয়া শেষ হইয়াছে সেইখানে বোধ করি ফ্রী-ইস্কুলের বাগানের গাছ দেখা যায়।’ ‘জীবনস্মৃতি’তে লিখে গিয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘প্রভাতসংগীত’ পরিচ্ছেদে তাঁর সদর স্ট্রিট যাপনের বর্ণনার সঙ্গেই জড়িয়ে কল্লোলিনীর আরও একটি রাস্তার ছবি—ফ্রি স্কুল স্ট্রিট।
ভারতে মুদ্রার প্রচলন খ্রীস্টের জন্মের বহু আগে। আর সেই মুদ্রা বলতে ছিল ধাতুর তৈরি কয়েন। কিন্তু তা দিয়ে আর্থিক লেনদেনে বিস্তর হ্যাপা। ঊনিশ শতকের গোড়ায় ব্রিটিশরা কয়েনের বিকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করলেন।
শারীরিক দিক থেকে খুব ভালো যাবে না। মনে একটা অজানা আশঙ্কার ভাব থাকবে। আর্থিক দিকটি ... বিশদ
যদি কুমড়োর মতো, চালে ধরে রত, পানতোয়া শতশত...। সেই কবে পান্তুয়ার প্রেমে পড়ে একটা গানই লিখে ফেলেছিলেন রজনীকান্ত সেন। আজও বাঙালির সঙ্গে তার প্রেম-বন্ধন অটুট। আর যদি হয় রানাঘাটের পান্তুয়া? তা হলে তো আর কথাই নেই! পান্তুয়ার সুতিকাগৃহ নিয়ে অবশ্য লেখক-সাহিত্যিকদের মতভেদ প্রকট। অনেকে বলেন, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে পান্তুয়ার উৎপত্তি। ময়রাদের হাতযশে স্থানভেদে তার খ্যাতির উন্মেষ ঘটে। তার মধ্যে রানাঘাট অন্যতম। একটি অংশের মতে, রানাঘাটের আদি জমিদার বংশ হল পালচৌধুরীদের পরিবার। বাড়ির এক কর্তার ভাজা রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে হল। কর্তার আবদার বলে কথা! শুনতেই হবে ময়রাকে। কিন্তু কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। শেষে তাঁর মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল—আচ্ছা রসগোল্লাকে তেলে ভেজে রসে চুবিয়ে দিলে কেমন হয়! যেই ভাবা ওমনি কাজ। দিলখুশ কর্তার। সেই ‘রসগোল্লা’ নাকি কালক্রমে হল পান্তুয়া। বিবর্তনের ধারায় তাতে যোগ হল নিত্যনতুন উপকরণ। তবে রানাঘাটে পান্তুয়ার স্বর্ণযুগ ছিল একশো বছর আগে। সৌজন্যে যোগেশ্বর প্রামাণিক ওরফে জগু ময়রা। জনশ্রুতি, তাঁর হাতেই খ্যাতির শিখরে পৌঁছয় চমচমের ‘আত্মীয়’ পান্তুয়া। পান কথার অর্থ পাতলা। অর্থাৎ, পানসে বা পান রসে ফেলে এই মিষ্টি তৈরি করা হতো বলে এমন উদ্ভট নাম। তবে নামে কী যায় আসে? স্বাদে আজও সেরা রানাঘাটের পান্তুয়া। হবে নাই বা কেন, মিষ্টির ভিতর জালিকার মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘর। তৈরিতে খোয়া ক্ষীর, বড় এলাচ, গাওয়া ঘি, চিনি প্রভৃতি। ছানার গুণগত মানেই নির্ভর করে পান্তুয়ার স্বাদ-বর্ণ-গন্ধ। আর সেই ছানাই যে নদীয়ার ‘ব্র্যান্ড ইক্যুয়িটি’।
