অংশীদারি কারবারে মন্দার সম্ভাবনা। যে কোনও কাজকর্মে বাধার মধ্যে উন্নতি। বৃত্তিগত শিক্ষা লাভে বিশেষ সাফল্য। ... বিশদ
স্বর পরিবর্তন এবং আওয়াজ পরিবর্তন দু’টি আলাদা বিষয়। স্বরকে আমরা ইংরেজিতে বলি ভয়েস। আর আওয়াজকে আমরা বলি স্পিচ। স্বর বা ভয়েস বের হয় স্বরযন্ত্র থেকে। এই অঙ্গটিকে বলা হয় ল্যারিংস। সেখানে কিছু সমস্যা হলে, তবে স্বরের পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে আওয়াজ বা স্পিচ-এর পরিবর্তন হয় মুখগহ্বরের নানা অংশে সমস্যার উদ্রেকের কারণে।
আমাদের আওয়াজ তৈরি হওয়ার পিছনে জিভ, গাল, মুখমণ্ডল, জিভের পিছনের অংশ এবং স্বরযন্ত্র— এই সমস্ত কিছুই একত্রিতভাবে কাজ করে। ধরা যাক আমাদের মুখের মধ্যে টনসিলের সংক্রমণ হয়েছে। এর ফলে টনসিলগুলি আকারে খুব বড় হয়ে গেল! তখনও একটা পরিবর্তন আসে আওয়াজে। মুখটা কেমন যেন একটু বন্ধ হয়ে থাকে। ফলে ঘং ঘং করে অস্পষ্টভাবে কথা বের হয়। এই বিষয়টি স্বরের পরিবর্তন নয়।
তবে ভয়েস বক্স-এ বা স্বরযন্ত্রে কোনও ধরনের সমস্যা হলে তখন আওয়াজ হয়ে যায় ফ্যাসফেসে! যেন গলা থেকে আওয়াজ বের হতে চাইছে না। এই বিষয়টি হল স্বরের পরিবর্তন।
টনসিল ও মিথ
একটা প্রবাদ চালু আছে যে টনসিলের অপারেশন করলে নাকি স্বরের পরিবর্তন হয়ে যায়। এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। স্বরযন্ত্র থাকে টনসিলের অনেক নীচে। অর্থাত্ ল্যারিংস-এর কাছাকাছি। টনসিল থাকে মুখের মধ্যে জিভের পিছনদিকে।
টনসিল আকারে খুব বড় হলে ও তার অপারেশন করাতে হলে স্বরের পরিবর্তন হয় না। অতএব টনসিল অপারেশন নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবেন না।
স্বরের পরিবর্তনের লক্ষণ
• ফ্যাসফেসে স্বরই হল মূল লক্ষণ।
• স্বরের পরিবর্তন একদিন স্থায়ী হতে পারে। আবার হতে পারে বেশ কয়েক সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী। এমনকী কয়েকমাস ব্যাপীও স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• আবার এমনও হতে পারে, স্বরের যে পরিবর্তন তা কিছুদিনের জন্য সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার কয়েকদিন পরিবর্তনজনিত জটিলতা খুবই বেড়ে যাচ্ছে।
• আবার কারও কারও ক্ষেত্রে স্বরের পরিবর্তন কোনওভাবেই সারতে দেখা যায় না।
• কোনও কোনও রোগীর গলায় ব্যথা থাকতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে জ্বর, সর্দি, কাশি।
• থাকতে পারে শ্বাসের কষ্ট।
চিকিত্সা
ইএনটি চিকিত্সকের কাছে রোগী এলে প্রথমে রোগীর অসুখের ইতিহাস সম্পর্কে ভালো করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর করা হয় ক্লিনিক্যাল একজামিনেশন। এক্ষেত্রে মুখমণ্ডলের অন্দরে ভালো করে দেখা হয়। গলার দু’পাশে, নেক অংশে ভালো করে পরীক্ষা করা হয়। নাক ও কানও দেখা হয়। কারণ এগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এরপর করা হয় কিছু টেস্ট।
রোগ নির্ণায়ক পদ্ধতি
• ফাইবার অপটিক ল্যারিঙ্গোস্কোপি নামে একটি পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় সরু ক্যামেরা পৌঁছে দেওয়া হয় স্বরযন্ত্রের কাছে। বড় স্ক্রিনে গলার অন্দরের ছবি ফুটে ওঠে। স্ক্রিনে যে ছবি ফুটে ওঠে তাতেই বোঝা যায় যে ওখানে কোনও সংক্রমণ হয়েছে বা টিউমারের মতো কিছু আছে কি না।
• কিছু কিছু ক্ষেত্রে করানো হয় ভিডিও ট্রোবোস্কোপি। এই পরীক্ষায় একটা বিশেষ ক্যামেরার সাহায্যে ভয়েস বক্স বা স্বরযন্ত্রের যে স্পন্দন বা নড়াচড়া তা সরাসরি দেখা যায়। ওই নড়াচড়ায় কোনও অস্বাভাবিকত্ব নজরে এলে তখন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাব হয়।
• টিউমার নজরে এলে বোঝার দরকার পড়ে কোন ধরনের টিউমার। সেক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই টিউমার থেকে ছোট্ট একটা মাংসের টুকরো নিয়ে প্যাথোলজক্যাল একজামিনেশনের জন্য। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে টিউমারটির ধরন কেমন।
কারণগুলি
• খুব জোরে কথা বললেও হতে পারে স্বরভঙ্গের মতো জটিলতা। বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশনের মতো জমায়েতে খুব জোরে জোরে হাঁকডাক করার পরে কর্তাব্যক্তির এভাবে স্বরভঙ্গ হতে দেখা যায়। রাজনৈতিক সমাবেশে নেতারা খুব জোরে কথা বলার পরেও এভাবে গলা ভেঙে যেতে পারে। আসলে এমন ক্ষেত্রেও ভয়েস বক্সের উপর একটা চাপ পড়ে, প্রদাহ হয়।
• অনেকের আবার পেশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্বরভঙ্গ হতে পারে। গায়ক-গায়িকা, শিক্ষাকতার পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় কথা বলতে হয় বা গলার ব্যবহার করতে হয়।
খুব জোরে দিয়ে চাপ দিয়ে এভাবে কথা বলার কারণে স্বরযন্ত্রের উপরে প্রভাব পড়ে। সেই জায়গাতেও হতে পারে ভয়েস চেঞ্জ-এর মতো জটিলতা।
• গলায় সংক্রমণের প্রভাবও পড়তে পারে ভয়েস বক্সে। সর্দি-কাশি এবং স্বরভঙ্গের সমস্যা একসঙ্গে দেখা যেতে পারে।
• এছাড়া একটা বড় জটিলতা হল ভোক্যাল কর্ড প্যারালাইসিস। ভোক্যাল কর্ডকে চালনা করে রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ। এই স্নায়ুর কোনও জায়গাতে সমস্যা হলে সে ভোক্যাল কর্ডটাকে নাড়াতে পারে না ও প্যারালাইসিস হয়ে যায়।
এছাড়া স্বরযন্ত্রের ওই জায়গাটিতে যদি কোনও ধরনের টিউমার হয়, সেখান থেকেও হতে পারে এমন স্বরের সমস্যা।
একবার রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে তারপর মূল কারণের চিকিত্সা করা হয়।
একটা বিষয় শেষ করার আগে বলে রাখা ভালো, স্বরের যখন কোনও পরিবর্তন হয়, কখনওই গার্গেল করবেন না। গার্গেল করলে স্বরযন্ত্রের উপর প্রচণ্ড পরিমাণে চাপ সৃষ্টি হয়। তখন পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। উন্নতি কিছু হয় না। স্বরের পরিবর্তন হলে বা স্বরভঙ্গ হলে যতখানি পারা যায়, ভয়েসকে বিশ্রাম দেবেন। জল ফুটিয়ে ভাপ নিন। তাতে কিছুটা লাভ হবে। তাছাড়াও যদি দেখেন তাতে লাভ হচ্ছে না, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, জ্বর আসার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, গলায় প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে, তাহলে বিলম্ব না করে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।