কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
পুরানো সেই দিনের কথা
বিবর্তনবাদীরা নানা গবেষণায় দেখিয়েছেন, কোনও বস্তু ধরার জন্য বা কিছু জিনিসকে অনুভব করার জন্য আঙুলের গায়ে ওই নকশা বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। শুধু মানুষ নয়, বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, হনুমান প্রভৃতি প্রাণীর হাতে ও পায়ের আঙুলে নানা নকশা দেখা যায়। প্রস্তর যুগের গুহাচিত্রে এই হাতের ছাপ ব্যবহার করা প্রথম নজরে আসে ইতিহাসবিদদের। কোনও ছবি এঁকে তার নীচে আঙুলের ছাপ দেওয়া থাকত। মনে করা হয়, হাতের ছাপ দেখে ছবিটির শিল্পীকে চিনে নেওয়ার রেওয়াজ তখনও চালু ছিল। এর পর প্রায় ৩০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে চীন ও গ্রিসের রাজবংশে এমন আঙুলের ছাপ দেওয়া তথ্য ও নির্দেশ দেওয়া হতো। যাকে রাজস্বাক্ষর হিসেবেই ধরে নেওয়া হতো। পরবর্তীতে তা ভারতীয় কিছু রাজবংশের রাজাও অনুসরণ করেন।
হুগলির হাতযশ
১৬৮০ বছর পর মার্সেলো ম্যালপিজি নামক এক অ্যানাটমিস্ট সর্বপ্রথম আঙুলের বিভিন্ন নকশাকে লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। এর প্রায় ১৫০ বছর পর জ্যান ইভেনজেলিস্টা পারকিনজি মানুষের আঙুলের নয় ধরনের নকশার কথা প্রকাশ্যে আনেন। উনবিং শতকে হুগলি জেলায় কর্মরত পুলিশ অফিসার স্যর উইলিয়ম জেমস হার্সেল ‘নেচার’ পত্রিকায় ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতা লেখেন। সেই লেখা প্রকাশের পর তোলপাড় পড়ে যায় অপরাধবিজ্ঞানের জগতে। হার্সেল জানান, তাঁর অধীনে বন্দি সব কয়েদির হাতের ছাপ নিয়ে পরীক্ষা করে তিনি দেখেছেন, প্রত্যেকের হাতের ছাপ আলাদা ও এটি দিয়েই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব! সেই থেকে হুগলি জেলার এই অফিসারকে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টের জনক’ বলা হয়। এই পদ্ধতি এতই আলোড়ন ফেলে যে স্যর ফ্রান্সিস গ্যাল্টন এই নকশার নমুনার উপর গবেষণা করে একটি বই প্রকাশ করেন। তার কয়েক বছর পর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের স্যর এডওয়ার্ড হেনরি ও আর্জেন্টিনার জুয়ান ভুসেটিক অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য আঙুলের ছাপ ব্যবহার শুরু করেন।
নকশার কারিকুরি
আঙুলের ছাপের নকশা প্রাথমিকভাবে চার রকমের। ১) লুপ, ২) হোল, ৩) আর্চ ৪) কম্পোজিট। লুপের উপস্থিতি দেখা যায় ৬৫ শতাংশ আঙুলে। ২৫ শতাংশে দেখা যায় হোল। ৭ শতাংশ আঙুলে মেলে আর্চ নকশা ও ৩ শতাংশরে আঙুলে থাকে কম্পোজিট নকশা। এই নকশাগুলি আবার অনেকগুলি উপবিভাগ বা সাব সেকশনে বিভক্ত। এই নকশার কোণ, কেন্দ্রীয় অংশ ও ডেলটার অবস্থান অনুসারে এই নকশা পাল্টে পাল্টে যায়।
১৯১২ সালে ডাঃ এলমন্ড লোকাড বলেন এই চার ভগে বিভক্ত করা নকশা ছাড়াও আঙুলে অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোর বা ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলির বিন্যাসও একে অপরের চেয়ে আলাদা। ফেডারেশন ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ইউএসএ আবার এই নকশাকে স্কোরিং পদ্ধতিতে ভাগ করেছে।
কেন এত জনপ্রিয়
অপরাধবিজ্ঞানে আঙুলের ছাপকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ, এই নকশা সকল মানুষের ক্ষেত্রেই ভিন্ন। মাতৃজঠরে তৈরি হওয়া আঙুলের ছাপ আজীবন একইরকম থাকে। এমনকী, যমজ শিশুর ক্ষেত্রেও আঙুলের ছাপ ভিন্ন হয়। এই নকশা জোগাড় করা সহজ ও কম প্রযুক্তি ও ন্যূনতম ব্যয় করেই অপরাধী শনাক্ত করা যায়। এমনকী, পচে যাওয়া মরদেহ বা মমি ও শুকিয়ে যাওয়া দেহ থেকেও এই ছাপ সংগ্রহ করা সম্ভব।
তথ্য ঋণ: ডাঃ পার্থপ্রতীম প্রধান (অধ্যক্ষ, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা)