বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
যোগের মূল লক্ষ্য একাগ্রতা ও মানসিক শান্তির খোঁজ ও দৈহিক সুস্থতা। একজন মহিলা ও শিশু প্রাথমিক যোগাভ্যাসে অবশ্যই ধ্যান, অনুলোম-বিলোম শোধনক্রিয়া ও পূরক ও রেচকের চর্চা করা জরুরি।
ধ্যান: সুখাসন বা বজ্রাসনে বসে কয়েক মিনিট নির্দিষ্ট কোনও দৃশ্যে মনোনিবেশ করতে হবে। শরীর সোজা ও শান্ত রেখে চোখ বুজে, হাঁটুর উপর হাত রেখে ধ্যানে বসতে হবে। চোখ বুজে নীল আকাশ বা বা ভালো লাগার কোনও দৃশ্য ভাবতে থাকুন। অন্তত ১০ মিনিট পরে ধীরে ধীরে চোখ খুলুন। এই ধ্যান প্রথমে ২-৩ মিনিট দিয়ে শুরু করতে হবে। মন প্রথম প্রথম অশান্ত থাকলেও অভ্যেসের সঙ্গে ধ্যানের সময় বৃদ্ধি পাবে। সঙ্গে করুন অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম।
মহিলা ও শিশুর জন্য আসন
শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া যোগাভ্যাসের অন্যতম দিক। এছাড়াও শিশুদের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও তাদের মনঃসংযোগ বাড়াতে কিছু আসনে অভ্যস্ত করতে হয়। মহিলাদেরও মেনস্ট্রুয়েশনের সমস্যা দূর করতে ও হাড়ের জোর বাড়াতে এই আসনগুলো অভ্যেস করা জরুরি।
ভুজঙ্গাসন: ‘ভুজঙ্গ’ অর্থ ‘সাপ’। এই আসন অভ্যেসের সময় শরীরের ভঙ্গি সাপের ফণার মতো হয় বলে এর নাম ‘ভুজঙ্গাসন’। এই আসন নিয়মিত চর্চা করলে স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্কের মতো অসুখ দূরে থাকে। সব ধরনের স্ত্রী রোগেরও মহৌষধ এই আসন।
পদ্ধতি: প্রথমে উপুড় হয়ে দু’পা জোড়া করে সোজা রেখে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। মাথাটা সোজা রাখুন। শরীরের দুপাশে হাত দুটো টানটান করে দিন। হাতের পাতা মাটিতে লেগে থাকবে। এবার হাত দুটো টেনে নিয়ে এসে দু’বাহু বরাবর উপুড় করে রাখুন। হাতের উপর শরীরের ভার জড়ো করুন। এবার হাতে ভর দিয়ে মাথা উপরে তুলুন। বুক মাটি থেকে উপরে উঠবে। নাভি ভূমি ছুঁয়ে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন। ৩ থেকে ৫ বার অভ্যেস করুন। এইভাবে ১টি সেট সম্পূর্ণ হবে।
ধনুরাসন: একটা বয়সের পর থেকে মহিলারা কোমর ও হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এই আসন খুবই কার্যকর। পেটের মেদ কমাতেও এই আসন উপকারী।
পদ্ধতি: উপুড় হয়ে শুয়ে পা দু’টি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে পায়ের পাতা যতদূর সম্ভব পিঠের উপর নিয়ে আসুন। এ বার দু’ হাত দিয়ে পায়ের গোছ দু’টো বেশ শক্ত করে ধরে বুক এবং ঊরু মাটি থেকে উপরের দিকে টেনে তুলুন। তলপেট যেন মাটিতে ঠেকে থাকে। দৃষ্টি সামনে ও ঘাড় হাতের কিছুটা পিছন দিকে হেলে থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে মনে মনে দশ গুনুন। তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। তিন বার আসনটি অভ্যেস করুন।
সতর্কতা: যাদের হৃদযন্ত্রে ও গলায় কোনও সমস্যা আছে, তাঁরা এই আসনটি করবেন না।
পবনমুক্তাসন: শিশু ও মহিলাদের জন্য পবনমুক্তাসন খুব উপযোগী। গ্যাস অম্বলের সমস্যা ছাড়াও এই আসন কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানির প্রতিকার করতেও সক্ষম। এই আসনটি করার সময় অবশ্যই প্রথমে ডান পায়ে অভ্যেস করুন। নইলে কোলনে যে বায়ু জমে আছে তা বের না হয়ে অবরোহী কোলন থেকে আরোহী কোলনে প্রবেশ করবে। ফলে বায়ুর বহির্গমন হবে না। যাঁরা গ্যাস্ট্রিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের কোনও অসুখে ভুগছেন তাঁরা কেবল ডান পায়ে এই আসন করবেন। ডিওডিনাল আলসারের রোগীরা বাম পায়ে অভ্যেস করুন।
বিপরীতকরণী মুদ্রা: মেয়েদের নানা ধরনের মেনস্ট্রুয়েশনের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা মেটাতে এই ব্যায়াম অভ্যেস করা উচিত। তবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না।
পদ্ধতি: চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দু’টো জোড়া করে উপরের দিকে তুলুন এবং হিপ অংশটি দু’ হাতের চেটো দিয়ে ঠেলে ধরুন। হাতের দুই কনুই দেহ বরাবর কাছাকাছি রাখুন। কোমর থেকে পা সোজা থাকবে।
সতর্কতা: কোমরে অপারেশন থাকলে এই ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
গর্ভবতী অবস্থায় ব্যায়াম
গর্ভবতী অবস্থায় সকলের শারীরিক জটিলতা সমান থাকে না। তাই চিকিৎসকের কাছে ব্যায়ামের অনুমতি পেলে তবেই হালকা কিছু ব্যায়াম অভ্যেস করুন।
খাদ্যাভ্যাস
শুধু আসন-প্রাণায়াম নয়। ডায়েটেও নজর দিতে হবে। যোগের নিয়মে খাদ্য ছ’রকমে বিভক্ত। টক, ঝাল,মিষ্টি, লবণ, তেতো ও কষা। এই ছয় রসের খাদ্যই পাতে নিয়মিত রাখতে হবে। শিশুদের পাতে দুধ ও সবুজ শাকসব্জি বেশি রাখা প্রয়োজন। সঙ্গে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ প্রোটিনের ব্যালান্সড ডায়েট চলবে।