এপ্রিল ফুলের খুনসুটি
পেরিয়ে এলাম পয়লা এপ্রিল। ইংরেজি চতুর্থ মাসের ১ তারিখ মানেই এপ্রিল ফুলস’ ডে। বোকা বানানোর দিন। কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে দিনটি মজা করে কাটল, সেই গল্পই শোনাল পূর্ব বর্ধমানের ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ‘ফুল’ একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ বোকা। এপ্রিল ফুলের অর্থ এপ্রিল মাসের বোকা।
দাদাকে ঠকালাম
প্রথম থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, এবছর কাউকে না কাউকে ঠকাবই। এবছর ১ এপ্রিল ছিল সোমবার। স্বভাবতই সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন খোলা ছিল স্কুল। আমি হেঁটে স্কুলে যাই। স্কুলের সামনে চলে এসেছি। দেখলাম, উঁচু ক্লাসের এক দাদা সাইকেল চড়ে আসছে। আমি বেমালুম বলে দিলাম, ‘দাদা, তোমার সাইকেলের পিছন চাকায় হাওয়া পড়ে গেছে।’ দাদাটি তো তাড়াতাড়ি সাইকেল থেকে নেমে পড়ল। দেখল, কিছুই হয়নি। কিন্তু আমাকে কিছু বলার আগেই একছুটে স্কুলের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ঠকালাম ঠিক আছে। কিন্তু এপ্রিল ফুল তো বলাই হল না!
—অর্ক সাহা, পঞ্চম শ্রেণি
গল্প শুনল বন্ধুরা
‘ফুল’ একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ বোকা। এপ্রিল ফুলের অর্থ এপ্রিল মাসের বোকা। অবশ্য, কেন এপ্রিল ফুল পালন করা হয়, তা নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। তবে, মনে করা হয়, একটি নির্দিষ্ট কারণ নয়, এপ্রিল ফুলের ইতিহাসের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণের সমন্বয়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে, রোমান উৎসব ‘হিলারিয়া’ থেকে এই দিনটির উৎপত্তি। আগে এই উৎসব পালন করা হতো ২৫ মার্চ। কিন্তু ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই উৎসব ১ এপ্রিল পালিত হতে থাকে। ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে। ১ জানুয়ারি থেকে বছর শুরু করা হয়। কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তন না মেনে আগের মতোই ২৮ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত নববর্ষ পালনে উদ্যোগী হয়। এই পুরনোপন্থীদের পিঠে ‘পেপার ফিশ’ লাগিয়ে দেওয়া হতো। আর তাদের বলা হতো ‘এপ্রিল ফিশ’। না, এবছর স্কুলে কোনও বন্ধুকে বোকা বানাইনি। সকলকে ‘বোকা দিবসে’র এই গল্পগুলিই শুনিয়েছি।
—সুমনা রক্ষিত, অষ্টম শ্রেণি
মায়ের কাছে ঠকলাম
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছি। মা বলল, ‘কে এসেছে দেখ! অরিন এসেছে।’ স্কুলের বন্ধু হঠাৎ সকালবেলা বাড়িতে কেন! আমি তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে দেখি, ভোঁ-ভাঁ। কেউ নেই। আমার ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে মা হেসে লুটোপুটি। বলল, ‘এপ্রিল ফুল।’ যাহ, আবার ঠকে গেলাম। মার্চ মাসের শেষের দিকে রীতিমতো সতর্ক হয়ে যাই। কোনওভাবে এবছর ঠকব না। কিন্তু ঠিক ভুলে যাই। প্রতিজ্ঞা করলাম, আজ আমিও বন্ধুদের ঠকাব। স্কুল যাওয়ার পথে একটা চকোলেট কিনলাম। চকোলেটটা খেয়ে মোড়কের মধ্যে একটা ঢিল ভরে দিলাম। স্কুলে ঢুকে এক সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হতেই তার হাতে ঢিল ভরা চকোলেটটা দিলাম। ও সরল মনে নিয়েও নিল। তারপর যে-ই খুলে দেখল, চকোলেট নয়, ঢিল খুব রেগে গিয়েছিল। অবশ্য, বন্ধুর রাগ ভাঙাতে পরে ওকে একটা ভালো চকোলেট খাইয়েছিলাম।
—দীপ মণ্ডল, ষষ্ঠ শ্রেণি
বিস্কুটে মাজন
এবছর এপ্রিল ফুলস’ ডে-তে দারুণ মজা করেছি। যে বিস্কুটগুলোর মাঝে ক্রিম দেওয়া থাকে, তেমন বিস্কুট দুটো নিয়েছিলাম। বিস্কুট খুলে চামচ দিয়ে চেঁচে ক্রিম ফেলে দিয়েছিলাম। তার বদলে মাজন লাগিয়ে আবার বিস্কুট আটকে দিয়ে টিফিন বক্সে ভরে স্কুলে নিয়ে এসেছিলাম। আমার প্রিয় বন্ধু পাশে বসে। আমরা সারা বছর টিফিন ভাগ করে খাই। তাই ওকে যখন মাজন লাগানো বিস্কুট দিয়েছিলাম, ও কোনও কিছু সন্দেহ করেনি। এক কামড় দিতেই ছ্যা-ছ্যা করে উঠল। আর সঙ্গে সঙ্গে আমিও চেঁচিয়ে বললাম, ‘এপ্রিল ফুল’। এক বন্ধু তো আবার জলের বোতলে নুন গুলে এনেও খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি খাইনি।
—আকাশ ভদ্র, সপ্তম শ্রেণি
নির্মল আনন্দ
বোকা বনতে কেউ চায় না। কিন্তু বোকা বানানোতে সকলেরই আগ্রহ। আমরা জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত কত বোকা বনে যাই। তাই পয়লা এপ্রিল নিয়ে আমাদের এত আগ্রহ। আসলে এই দিনটিতে বন্ধু-বান্ধবদের বোকা বানানোর মধ্যে দারুণ মজা। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, এগুলো করতে গিয়ে যেন কোনও রকম বাড়াবাড়ি না হয়। বা যাকে বোকা বানানো হচ্ছে, তার যেন কোনও ক্ষতি না হয়। তাহলেই তো নির্মল আনন্দ। আমরা দশম শ্রেণির পড়ুয়া এইদিনটিতে বোকা বনেছি, আবার বোকা বানিয়েওছি। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই খেয়াল রেখেছি, যাতে কারও কোনওরকম ক্ষতি না হয়। আর এপ্রিল ফুল নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনারও কোনও ব্যাপার না থাকে। যে বোকা বনল, সে যেন বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়। কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই বন্ধু।
—অরবিন্দ ঘোষ, দশম শ্রেণি
প্রধান শিক্ষকের কলমে
শতবর্ষের দোরগোড়ায় ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়। সালটা ১৯২৫। পাঁচবেড়িয়া গ্রামের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই স্কুল স্থাপন করেন। ঘোড়ানাশের ভোলানাথ নন্দী ও কালীকিশোর চক্রবর্তী এবং মূস্থুলীর উমাপতি বর্ধন স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে এই বিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন লাভ করে। নাম হয় ঘোড়ানাশ মিডল ইংলিশ স্কুল। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালে জুনিয়র স্কুলের তকমা পায়। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিকস্তরে উন্নীত হয়। আর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায় ২০১০ সালে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই স্কুলের পড়ুয়ারা আশাব্যঞ্জক ফল করে আসছে। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলোর জগতেও সুনাম অর্জন করেছে। এবছর শিক্ষক কিশোর মালাকার মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে চার ছাত্র রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং একজন জাতীয়স্তরে সুযোগ পেয়েছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি পরিচালন সমিতির উদ্যোগে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। বসানো গিয়েছে সিসি ক্যামেরা। আগামী দিনে এই স্কুল আরও এগিয়ে যাবে, এই আশা রাখি।
বিশ্বরূপ ঘোষ
প্রধান শিক্ষক
07th April, 2024