Bartaman Patrika
গল্পের পাতা
 

প্রাণেশদার শান্তিনিকেতন
আশিস ঘোষ 

স্টাফরুমে বসেছিলাম। ঘরের টিউব লাইট খারাপ থাকায় আবছা অন্ধকার। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। একটু যেন শীত শীত ভাব। অশোক কথা বলছিল। আমাদের কয়েকজনের অফ পিরিয়ড। কোনও তাড়া নেই। আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় খবর এল, প্রাণেশবাবু আর নেই। আজ সকালেই মারা গিয়েছেন।
অশোক কথা থামিয়ে উঠে দাঁড়াল। লম্বা বেঞ্চিতে দেবু আড়াআড়িভাবে বসেছিল। সোজা হয়ে বসল। হঠাৎ এমন একটা খবরে সবাই হকচকিয়ে গেলাম। হেডমাস্টারমশাই ছুটে এলেন। যাঁরা ক্লাসে ছিলেন, স্টাফরুমে এসে জড়ো হল। বাইরের লনে ছেলেদের নিয়ে মিটিং করতে হবে। ছুটির ঘণ্টা পড়ল। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
সেই প্রাণেশবাবু। প্রাণেশদা। লম্বা ফর্সা চেহারা। সব সময় ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন। এক সময়ে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছেন। রামকিঙ্কর বেইজের নাকি ছাত্র ছিলেন। সুযোগ পেলেই শান্তিনিকেতনের গল্প শোনাতেন। মাঝে মাঝে বলতেন মানিকবাবু অর্থাৎ সত্যজিৎ রায় নাকি ওঁর সহপাঠী ছিলেন। সত্যি-মিথ্যে জানি না, শুনতে শুনতে সব আমাদের মুখস্থ। প্রায়ই বলতেন সুযোগ পেলেই শান্তিনিকেতনে চলে যাবেন। আমরা মজা করে বলতাম, আর কবে যাবে দাদা? চুল তো সব সাদা হয়ে গেল।
প্রাণেশদা গম্ভীর হয়ে যেতেন। কিন্তু রাগতেন না। বলতেন, শান্তিনিকেতনে যাওয়ার কোনও বয়স নেই। যে কোনও বয়সেই যাওয়া যায়।
প্রাণেশদার আর শান্তিনিকেতনে যাওয়া হল না। এখন শোকসভা হচ্ছে। ছেলেরা সব লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। এক-একজন প্রাণেশবাবু সম্পর্কে বলে যাচ্ছেন। আমরা যারা পুরনো, প্রাণেশদাকে দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি, মিশেছি, আমাদের চাইতে যারা নতুন, প্রাণেশদার সঙ্গে যাদের পরিচয় বা মেলামেশা ততটা ছিল না, তারাই যেন বেশি কথা বলতে চাইছে। দেবু আমার পাশেই ছিল। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল— এভাবে আর কতক্ষণ চলবে? কিন্তু কে বলবে সে কথা? সমীরের দিকে চাইলাম। চোখাচোখি হতেই হাতের ইশারা করলাম। গরমে প্রাইমারির একটা বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উঁচু ক্লাসের ছেলেরা ওকে ধরাধরি করে অফিস ঘরের দিকে নিয়ে গেল। সমীর হেডমাস্টারমশাইকে কী যেন বলল। উনি আমাদের দিকে চাইলেন একবার। তারপর ছেলেদের দিকে। বাঁ হাত তুলে ঘড়ি দেখলেন। এবার এক মিনিট নীরবতা। সবাই বোধহয় এই অপেক্ষাতেই ছিল। সোজা হয়ে দাঁড়াল। প্রয়াত আত্মার শান্তি কামনায় গোটা স্কুল বাড়িটা নিঝুম। পেছন দিকে আমগাছের পাতা শিরশিরিয়ে কাঁপছে। একটা কাক টেলিফোনের তারে বসে অনেকক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছে। গেটের দিকে দমকা হাওয়ায় খানিকটা ধুলো উড়ল। নীরবতা শেষ হতেই, ছেলেরা লাইন করে আস্তে আস্তে চলে গেল। আমরাও আবার স্টাফরুমের দিকে গেলাম।
আমাদের এই স্কুল বাড়িটা অনেক দিনের পুরনো। কোনও এক সাহেবের বাগানবাড়ি ছিল। পুরু দেওয়ালের অনেক জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। স্টাফরুমের কড়িবরগার একটা জায়গা বেশ ঝুলে আছে। এই পুরনো বাড়ির নীচেটা ফাঁকা। সেটা নাকি গুমঘর ছিল। আমরা কিন্তু এই ঘরেই বেশ আছি। রাজনীতি, সাহিত্য, হাসি-ঠাট্টা সব কিছুই চলে। অফ-পিরিয়ডে বেঞ্চিতে টান টান হয়ে শুয়ে থাকি।
কথা হচ্ছিল শ্মশানে যাওয়া নিয়ে। কিন্তু সেখানে যেতে হলে তো স্কুলের তরফে অন্তত একটা ফুলের মালা চাই। কে আনবে? বিশেষ কাউকে উদ্দেশ্য না করেই প্রশ্নটি করলাম। সবাই চুপ। আসলে বাইরে এখন দারুণ রোদ। কে বলবে কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছিল। গরমে এখন কেউ বেরতে চাইছে না। আমিও একটু গড়িমসি করছি। আজ সন্ধ্যায় বিন্দুকে নিয়ে নন্দনে একটা সিনেমা দেখার কথা। হলের সামনেই ও দাঁড়াবে। এখন এই রোদে বেরিয়ে শরীর খারাপ করতে চাই না। সবার মুখের দিকে চাইলাম। দরজায় দাঁড়িয়ে যতীন আমাদের দিকেই চেয়েছিল। ছেলেটার বয়স কম। কিন্তু অন্যদের মতো নয়। সব কিছুতেই বেশ উৎসাহ। ওকেই বললাম, যাবে তুমি? যতীন রাজি হল। ভুবন চা নিয়ে এল। চা-বিস্কুট খেতে খেতে আবার প্রাণেশবাবুর কথা শুরু হল। পাশের ঘরের লম্বা টেবিলে পুরনো হারমোনিয়ামটা রাখা আছে। পেছনের দেওয়াল ঘেঁষে রবি ঠাকুরের আবক্ষ মূর্তি। ওই প্লাস্টার মূর্তিটা প্রাণেশদারই তৈরি। পাশের দরজা দিয়ে চাইলেই চোখ পড়ছে। চায়ে চমুক দিতে দিতে অশোক বলল— ওই হারমোনিয়াম আর মূর্তিটা দেখলেই প্রাণেশদাকে মনে পড়ে। জর্দা পান চিবুতে চিবুতে দেবু কী যেন বলতে যাচ্ছিল। বাইরে থেকে হঠাৎ একঝলক গরম হাওয়া এল। সমীর কাছাকাছি বসেছিল। আমার দিকে চেয়ে চাপা গলায় বলে উঠল— দশ-বারো বছর এই স্কুলে আছি, এর মধ্যেই চারজনকে যেতে দেখলাম। ওর কথা শেষ হতে না হতেই দপ করে আলো জ্বলে উঠল। চারদিকের মুখগুলো এবার স্পষ্ট। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে অশোক হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। চলি, খুব জরুরি একটা কাজ আছে। ও দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে, দেবু বলে বসল— কাল ছুটি থাকবে কিনা জেনে যাবি না?
জানার কী আছে? একজন শিক্ষক মারা গিয়েছেন, ছুটি তো থাকবেই। এটুকু সম্মান তাঁর নিশ্চয়ই প্রাপ্য।
—কিন্তু নোটিস দেওয়া হবে না?
—আরে, রাখ তোর নোটিস।
সত্যিই তো, একটা নোটিস দেওয়া উচিত ছিল। স্টাফরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি। প্রাণেশবাবুর কথা বলছি। অথচ কারুর মনেও হল না, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটা শোক প্রস্তাব লেখা উচিত।
ইতিমধ্যেই হেডমাস্টারমশাইয়ের কাছে খবরটা পৌঁছেছিল। ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন।— কী ব্যাপার? প্রথমে দেবুর গলাই শোনা গেল। — অনেকেই তো বেরিয়ে যাচ্ছে। কালকের ছুটির নোটিসটা?
ভদ্রলোক একটু যেন থমকে গেলেন।— আজকেই হাফডে হল। কাল আবার ছুটি কেন?
মুহূর্তে সবাই চুপসে গেলাম। একজন আর একজনের দিকে তাকাচ্ছি। সংস্কৃতের রমাপতি টেবিল চাপড়ে গর্জে উঠল।
—এটা কী বলছেন? আমাদের একজন প্রয়াত শিক্ষকের সম্মানে পুরো ছুটি থাকবে না? চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে হেডমাস্টারমশাই আমাদের মুখগুলো দেখার চেষ্টা করলেন। —আপনারা যদি বলেন তো ছুটি দিতেই হবে। সামনেই ছেলেদের পরীক্ষা। এভাবে ছুটি দেওয়াটা— ভদ্রলোকের কথা শেষ হতে না হতেই চিৎকার, পাল্টা চিৎকার শুরু হয়ে গেল। সবাই বলছে। কারুর কথাই বোঝা যাচ্ছে না। হেডমাস্টারমশাই কী যেন বোঝাতে চাইছেন। কেউ শুনছে না। অশোক হঠাৎ পাশের ঘর থেকে হারমোনিয়ামটা এ ঘরের টেবিলে এনে এলোপাতাড়ি ‘রিড’ টিপতে শুরু করল। বিশ্রী যান্ত্রিক শব্দ। মানুষ আর যন্ত্রের মিলিত শব্দে কড়িবরগার কিছুটা অংশ বোধহয় এবার খসে পড়বে। দেবু হঠাৎ উঠে দাঁড়াতেই ধাক্কা লেগে হারমোনিয়ামটা আর একটু হলেই নীচে পড়ে যেত।
হেডমাস্টারমাশাই বিড় বিড় করতে করতে চলে গেলেন। কোনও কথা না বলে অশোকও বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হলেও বাইরে এখন আবার দারুণ রোদ। সবাই চুপচাপ বসে। একটু পরেই দেবু টিউশন করতে চলে গেল। সমীর বিড়বিড় করে কী যেন বলছিল। ফুলের মালা আর মোড়ক নিয়ে যতীন কখন যে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করিনি। এবার ভেতরে এসে হারমোনিয়ামের সামনে রেখে মুখ মুছতে শুরু করল। ঘরে আমরা এখন চারজন। আমি, সমীর, নীলকমলবাবু আর যতীন। দেওয়ালের ক্যালেন্ডার মাঝে মাঝে বাইরের হাওয়ায় দুলছে। সামনের টিনের শেডে পেছনের বস্তি থেকে হঠাৎ একটা রবারের বল এসে পড়ল। বলটা লাফাতে লাফাতে এ ঘরের চৌকাঠে এসে লাগল। গড়িয়ে বাথরুমের দিকে গেল। আমরা চুপচাপ বসে। ফুলের মৃদু গন্ধে কেমন যেন নেশায় ধরছে।
—চলুন এবার যাওয়া যাক— একটু নড়েচড়ে বসে সমীর। গালে হাত দিয়ে যতীন একপাশে দাঁড়িয়ে। নীলকমলবাবু হারমোনিয়ামে একটা হাত রেখে চুপচাপ বসে। এই তো গত বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ওই হারমোনিয়ামটা বাজিয়ে প্রাণেশদা গান গেয়েছিলেন। গানের শেষে হারমোনিয়ামের রিড টিপতে টিপতে বলেছিলেন— আমি চলে গেলে এই হারমোনিয়াম আর রবি ঠাকুরের মূর্তি আমাকে মনে করিয়ে দেবে। সেই প্রাণেশদা। সুযোগ পেলেই শান্তিনিকেতনের গল্প জুড়ে দিতেন। কাদের কাছে গান শিখেছেন। ছবি আঁকা বা মূর্তির কাজ কীভাবে করতেন। সেখানকার ছাতিমতলা। শুনতে শুনতে সব আমাদের মুখস্থ। প্রায়ই বলতেন— একটা চাকরি বা কোনও সুযোগ পেলেই শান্তিনিকেতনে চলে যাবেন। খুব নাকি ইচ্ছে হয় পুরনো দিনের স্মৃতি জড়ানো জায়গাগুলো দেখতে। কথা বলতে বলতে কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতেন। নাম না বললেও একজন মহিলার কথাও প্রায়ই বলতেন। এক ক্লাসে একসঙ্গেই পড়াশোনা করেছেন। তিনি নাকি এখনও শান্তিনিকেতনেই আছেন। মজা করে বলতাম— তিনি কি তোমার বান্ধবী? প্রাণেশদা উত্তর দিতেন না।
এই তো সেদিন। স্কুলের টিফিনের সময় স্টাফরুমে সবাই চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছি। কয়েকদিন পরেই বাইশে শ্রাবণ। স্বাভাবিকভাবেই শান্তিনিকেতনের কথা উঠেছিল। প্রাণেশবাবু পাশের ঘরে ছিলেন। এ ঘরে এসে বললেন— একবার বাইশে শ্রাবণে শান্তিনিকেতনে যাব। কত গান, উৎসব হতো— প্রাণেশদা আরও কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন। দেবু হঠাৎ বলে বসল— সেখানে যাবে- যাবে বলতে বলতে তো তোমার মাথার চুল পেকে আয়ু শেষ হয়ে এল—
দেবুর কথায় প্রাণেশদা চমকে উঠেছিলেন— এসব কী বলছ?
—বলব না তো কী? শান্তিনিকেতনের কথা শুনতে শুনতে কানে তো পোকা ধরে গেছে।
দেবুর কথায় প্রাণেশদার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল।
—দেখো আমার শিকড় রয়েছে সেখানে। এ যে কী টান বুঝবেন না।
—বোঝার দরকার নেই। যাবে তো যাও না। সবসময় ভ্যানর-ভ্যানর ভালো লাগে না—যত্ত সব!
প্রাণেশদা বিড়বিড় করে কী যেন বললেন। হাত-পা কাঁপছিল। কোনওদিন এরকম দেখিনি। স্টাফরুম থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন। এরপর তিন দিন আর স্কুলে আসেননি। সেই প্রাণেশদা। চোখ বুজলেই যেন স্পষ্ট দেখতে পাই, পাশের ঘরে পায়চারি করছেন।

সন্ধে প্রায় ছ’টা নাগাদ বিন্দু এল। কথা মতো নন্দনের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। বিন্দু এল উল্টো দিক দিয়ে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে?
কই না তো— ওকে আর বললাম না যে, প্রায় চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে। স্কুল থেকে শ্মশানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই সোজা এখানে। হাতের ব্যাগ দিয়ে খোঁচা দেয় বিন্দু। এখনও তো মিনিট কুড়ি বাকি। চলো চা খেয়ে আসি। যেতে যেতে বিন্দুকে বললাম— আমাদের এক সহকর্মী আজ মারা গেলেন। শ্মশানে গিয়েছিলাম।
—সে কী! চলতে চলতে আমার দিকে তাকায় বিন্দু। গম্ভীর হয়ে যায়।
এদিকে আলো কম। শুকনো পাতা ছড়িয়ে। পাশের বাঁধানো পুকুর রেলিং ঘেরা। গাছের পাতায় আলোর আভাস। সিমেন্ট বাঁধানো জায়গায় পাশাপাশি বসলাম। আমার হাত ধরে বিন্দু বলল— কী ব্যাপার, কথা বলছ না?
—কী বলব? মেজাজটাই তো ভালো নেই— হাত ছাড়িয়ে বললাম— আজ আর সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করছে না—
ও-পাশের রাস্তা কাঁপিয়ে একটা ভারী গাড়ি চলে গেল। হাত তুলে ঘড়ি দেখে বিন্দু। কিছু না বলেই মুখ নিচু করে। ওকে এখন কী করে বলি, এখানে বসে থাকতেই ইচ্ছে করছে না। কীসের যেন গন্ধ পাচ্ছি। এটা কী শ্মশানের গন্ধ? শ্মশানের একটা গন্ধ থাকে। সেখানে গেলেই পাওয়া যায়। এইরকম একটা গন্ধ যেন নাকে লেগে আছে। এই গন্ধটাই প্রাণেশদাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। কাল বাদে পরশু তো আবার স্কুল। ছেলেরা আসবে। ক্লাস চলবে। স্টাফরুমে আমাদের আড্ডাও হবে। হারমোনিয়ামটা পাশের ঘরের টেবিলে পড়ে থাকবে। বিন্দুকে এসব বলব? কিছু মনে করবে না তো?—
অনেকক্ষণ বসে থাকারও ক্লান্তি আছে। এক সময় বিন্দুকে বললাম— চল, এবার ওঠা যাক—
বিন্দু মুখ নিচু করে বসেছিল। বলামাত্রই উঠে দাঁড়াল। আমাদের সিনেমা দেখার কথা ছিল। কিন্তু সেই গন্ধটা নাকে এসে সব কেমন গোলমাল করে দিল। সিনেমা দেখার মেজাজটাই আর নেই। বিন্দু উসখুস করছে। কী গো, যাবে না?
উত্তর দিলাম না। দ্বিতীয়বার বলতেই, পকেট থেকে টিকিট দুটো বের করে বললাম— একদম ভালো লাগছে না। তুমি দেখে এস। আমি এখানেই অপেক্ষা করছি।
বিন্দু মুখ তুলে তাকাল। মুঠোয় ধরা টিকিট দেখল। তারপর মুখ গোঁজ করে গেটের দিকে হাঁটা শুরু করল। একটু পরেই রাস্তা পেরিয়ে আমরা পিজি হাসপাতালের সামনের রাস্তা ধরলাম। হাসপাতালের গেটে একটা ট্যাক্সি ঘিরে কয়েক জনের জটলা। ফাঁকা আর একটা ট্যাক্সি ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ময়দানের দিকে ছুটে গেল। বিন্দুকে বললাম— এবার তো যেতে হয়—
—কোথায় যাবে?
—কেন বাড়িতে।
—সাততাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে? সিনেমাও তো দেখা হল না— বিন্দু ঘড়ি দেখল। আমার দিকে তাকাল। সামনের স্টপে একটা মিনি দাঁড়িয়ে। কেউ নামছে না, উঠছেও না। কন্ডাক্টর— ‘হাওড়া-হাওড়া’ বলে সমানে চিৎকার করছে। মিনিটার সামনে গিয়ে বিন্দু হঠাৎ থমকে দাঁড়াল।— যাই এবার?
কী বলব ভাবছি, বিন্দু মিনিটায় উঠে পড়ল। গাড়িটাও চলতে শুরু করল। মুহূর্তে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল। আমাদের মাঝখানের দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।
প্রাণেশদার সঙ্গেও আমাদের দূরত্ব এখন অনেকটাই। এই কালো পিচের রাস্তার মতোই তা ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। বিন্দুকে নিয়ে মিনিটা আর পাঁচটা গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গেছে। ওদিকে চেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর কোনওদিকে না তাকিয়ে, দু’দিক দিয়ে ছুটে আসা গাড়িগুলোকে অগ্রাহ্য করেই রাস্তা পেরলাম।  
16th  June, 2019
মেট্রোর দুপুর

সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল দীপন। কারণ দুটো— এক, এতগুলো সিঁড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে একটু না দাঁড়ালে আর পারা যাচ্ছিল না। দুই, সামনে মধ্য দুপুরের কলকাতা বৈশাখের রোদে ঝলসাচ্ছে। পা রাখার আগে এটাই শেষ সুযোগ। পকেট থেকে সেলফোনটা বের করল। বসে পড়ল মেট্রোর সিঁড়িতে। চোখ রাখল স্ক্রিনে। 
বিশদ

21st  April, 2024
অথ দাম্পত্যচরিতম
সোমজা দাস

যে লোকটা ফুলকুল্লি স্টেশনের লাগোয়া বিন্তিমাসির চায়ের দোকানে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল আর শুক্কুরবার বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা অবধি বসে থাকে, ওই যে যার মাথায় খড়খড়ে মরচে রঙের চুল, গালে চটামটা লালচে দাড়ি, উদাস চোখ, তার কথা বলছি। সে-ই দশানন দাস।    বিশদ

07th  April, 2024
ছোট গল্প: বন্ধনহীন গ্রন্থি
বিতস্তা ঘোষাল

—অনেকদিন তোমার পোস্ট আমার অ্যাকাউন্টে দেখাচ্ছে না। আজ একজন বললেন, তোমার হ্যাজব্যান্ড চলে গেলেন। তিনি তোমার পেজ শেয়ারও করলেন। আমি জানতাম না অনিকেত তোমার স্বামী। ওঁর সঙ্গে বহুদিন আগে আমার দেখা হয়েছিল। বিশদ

31st  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: দারা শিকোহের গ্রন্থাগার
সমৃদ্ধ দত্ত

রামায়ণকে বুঝতে হলে, হিন্দু শাস্ত্রের অন্তর্নিহিত দর্শনকে আত্মস্থ করতে হলে, যোগ বশিষ্ট পাঠ করা দরকার। আর শুধু পাঠ করা নয়, প্রজাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা শিকোহকে একথা বলেছিলেন দরবারের অন্যতম হিন্দু পণ্ডিত চন্দ্রভান ব্রাহ্মণ। বিশদ

31st  March, 2024
অতীতের আয়না: হারিয়ে যাওয়া হাড়গিলে পাখি
অমিতাভ পুরকায়স্থ

নিউ মার্কেটের পূর্ব ও পশ্চিম গেটের একটু উপরের দিকে সবুজ বৃত্তাকার জায়গাটার দিকে কখনও নজর করেছেন? খেয়াল করলে দেখবেন একটি এমব্লেম বা প্রতীক। কলকাতা পৌরসংস্থার এই মোহরচিহ্ন শহরের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। বিশদ

31st  March, 2024
সম্পর্ক
অর্পিতা সরকার

 

ওদের তিনতলা বাড়ি, বাবা সরকারি চাকুরে। সুস্মিতা ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তারপরেও বাবার সাধারণ জীবনযাত্রার কারণেই স্কুল-কলেজে কখনও সেভাবে গর্ব করতে পারেনি সুস্মিতা। ওর বাবার মুখে একটাই কথা, ‘নিজে ইনকাম করো, তারপর বুঝবে রোজগার করতে কত কষ্ট করতে হয়। বিশদ

24th  March, 2024
তবু যেতে হয়

—কাজটা তালে ছেড়েই দিলি সুবি!
সুবি উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। লাঙলপোতা গ্রামের ছোট্ট বাড়ির মাটির বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে পায়ের উপর পা ঘষে সুবিনয়। এ তার দীর্ঘ দিনের অভ্যেস। ঘরের ভিতরে তার শয্যাশায়ী মা অলকা। শুয়ে শুয়েই সান্ত্বনা দেন।
বিশদ

17th  March, 2024
গুরুদ্বার সিস গঞ্জ

দিল্লি দেখতে এসে চাঁদনী চক যাওয়া হবে না? তা কীভাবে হয়? অতএব দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় ভ্রমণস্থল চাঁদনী চক।
বিশদ

17th  March, 2024
দেখা যায় না, শোনা যায় পুতুল বাড়ি
 

আকর্ষণ, বিতর্ক, কৌতূহলের চিরন্তন কেন্দ্রবিন্দু অলৌকিক দুনিয়া। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী দুই শিবিরেরই এব্যাপারে আগ্রহ ষোলোআনা। তাই ভৌতিক সাহিত্য হোক বা সিনেমা, বাজারে কাটতি বরাবরই বেশি।
বিশদ

17th  March, 2024
প্রস্থান
দীপারুণ ভট্টাচার্য

শববাহী গাড়িটা গেটের ভিতর ঢুকতেই অরুণবাবু চারপাশটা দেখলেন। বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে তার ছেলে নীলাঞ্জন আর বউমা সুতপা। নীলাঞ্জন বড় চাকরি করে। সে ফোন পেয়েছিল অফিসে যাওয়ার পর। সুতপাকে বলেছিল, ‘বেরতে একটু সময় লাগবে। বিশদ

10th  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: জাহান আরার সমাধি
সমৃদ্ধ দত্ত

নভরোজ পরব চলছে। আগ্রা জুড়ে উৎসবের উচ্ছ্বাস। এখন ১৬৪৪। বাদশাহ শাহজাহানের আগ্রা দুর্গে সবথেকে বেশি উজ্জ্বল আয়োজন। স্বাভাবিক। প্রতি বছর নভরোজের সময় আগ্রা দুর্গ এভাবেই সেজে ওঠে। সম্রাটের পুত্রকন্যারা এই সময়টায় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হন। বিশদ

10th  March, 2024
অতীতের আয়না: বাঙালির সার্কাস
অমিতাভ পুরকায়স্থ

১৯২০ সালের ২০ মে। নিজের ‘গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ নিয়ে সিঙ্গাপুরে ট্যুরে গিয়ে জন্ডিস হয়ে মারা গেলেন প্রিয়নাথ বসু। শুধু উপমহাদেশের সার্কাসের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উৎকর্ষের নতুন মানদণ্ড ছাড়াও, বিনোদন শিল্প হিসেবে সার্কাসকে দৃঢ় ভিত দিয়ে গেলেন তিনি। বিশদ

10th  March, 2024
ভোগ
শুচিস্মিতা  দেব

পুতুলকে সদ্যই নিমতিতা থেকে ‘রায়চৌধুরী ভিলা’তে এনেছে তার পিসি সবিতা। সবিতা এই পরিবারের বহু দিনের থাকা-খাওয়ার মাসি। টিভি সিরিয়ালের মতো প্রকাণ্ড বাড়িখানা দেখে পেরথমেই ভেবলেছে পুতুল। ফুটবল মাঠের মতো বৈঠকখানা। বিশদ

03rd  March, 2024
রুপোর চাকু

আলমারিটা খুলতেই দাদার চোখ চলে গিয়েছিল। উপরের তাকে জামা কাপড়ের পাশে খালি জায়গায় শোয়ানো ছিল। বাজপাখির চোখ দাদার।
বিশদ

25th  February, 2024
একনজরে
লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত। ধৃতের নাম ইন্দরপাল সিং গাবা। তিনি ব্রিটেনের হাউন্সলোরের বাসিন্দা। দিল্লি থেকে ...

কথা ছিল বাড়ি ফিরে পাকা বাড়ি দেওয়ার। সেই স্বপ্ন নিয়ে আর ফেরা হল না। কফিনবন্দি হয়ে ফিরছে পরিযায়ী কিশোর শ্রমিক। কর্মরত অবস্থায় বহুতল ...

রক্তক্ষরণ আটকাতে পারবে কি সিপিএম? আটকানো যাবে কি বামের ভোট রামে যাওয়া? —মূলত এই দু’টি প্রশ্নই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রিগেড ভরাতে পারলেও ভোটবাক্স ভরাতে পারবেন কি না, তা নিয়েই এখন চিন্তিত সিপিএমের বঙ্গ রাজনীতির কুশীলবরা। ...

বুধবার রাতে নদীয়ার কালীগঞ্জের বল্লভপাড়ায় দু’টি বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হল। বাইকের গতি এতটাই বেশি ছিল যে এক যুবক ছিটকে একটি টোটোর কাচ ভেঙে ঢুকে যান। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৮৮৪- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার ও সুরবাহার বাদক ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর জন্ম
১৮৯৭- বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক নীতীন বসুর জন্ম
১৯২০- ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের মৃত্যু
১৯২৪- সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের জন্ম 



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮১.৫০ টাকা ৮৪.৯৩ টাকা
পাউন্ড ১০১.৪৭ টাকা ১০৫.৯২ টাকা
ইউরো ৮৭.১৪ টাকা ৯১.১৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭২,৭০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৩,০৫০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৬৯,৪৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮১,৪৫০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮১,৫৫০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১৩ বৈশাখ, ১৪৩১, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪। দ্বিতীয়া ৬/১৩ দিবা ৭/৪৭। অনুরাধা নক্ষত্র ৫৮/৪০ রাত্রি ৩/৪০। সূর্যোদয় ৫/১১/৩০, সূর্যাস্ত ৫/৫৭/২৪। অমৃতযোগ প্রাতঃ ৬/৫৪ মধ্যে পুনঃ ৭/৪৪ গতে ১০/১৮ মধ্যে পুনঃ ১২/৫১ গতে ২/৩২ মধ্যে পুনঃ ৪/১৫ গতে অস্তাবধি। রাত্রি ৭/২৮ গতে ৮/৫৭ মধ্যে পুনঃ ২/৫৭ গতে ৩/৪১ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ রাত্রি ১০/২৭ গতে ১১/১২ মধ্যে পুনঃ ৩/৪১ গতে উদয়াবধি। বারবেলা ৮/২৪ গতে ১১/৩৪ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৪৫ গতে ১০/১০ মধ্যে। 
১৩ বৈশাখ, ১৪৩১, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪। দ্বিতীয়া দিবা ৬/২৮। অনুরাধা নক্ষত্র রাত্রি ২/২৬। সূর্যোদয় ৫/১২, সূর্যাস্ত ৫/৫৯। অমৃতযোগ দিবা ৬/৪৬ মধ্যে ও ৭/৩৮ গতে ১০/১৫ মধ্যে ও ১২/১৫ গতে ২/৩৫ মধ্যে ও ৪/২০ গতে ৫/৫৯ মধ্যে এবং রাত্রি ৭/৩২ গতে ৯/০ মধ্যে ও ২/৫০ গতে ৩/৩৪ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ রাত্রি ১০/২৭ গতে ১১/১১ মধ্যে ও ৩/৩৪ গতে ৫/১১ মধ্যে। বারবেলা ৮/২৪ গতে ১১/৩৫ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৪৭ গতে ১০/১১ মধ্যে। 
১৬ শওয়াল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আইপিএল: কেকেআরকে ৮ উইকেটে হারাল পাঞ্জাব

11:31:28 PM

আইপিএল: ২৩ বলে হাফসেঞ্চুরি শশাঙ্ক সিংয়ের, পাঞ্জাব ২৪৬/২ (১৭.৪ ওভার) টার্গেট ২৬২

11:26:31 PM

আইপিএল: ৪৫ বলে সেঞ্চুরি জনি বেয়ারস্টোর, পাঞ্জাব ২১০/২ (১৬.১ ওভার) টার্গেট ২৬২

11:13:32 PM

আইপিএল: ২৬ রানে আউট রাইলি রুশো, পাঞ্জাব ১৭৯/২ (১৩ ওভার) টার্গেট ২৬২

10:56:50 PM

আইপিএল: ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরি জনি বেয়ারস্টোর, পাঞ্জাব ১২০/১ (৯.১ ওভার) টার্গেট ২৬২

10:36:30 PM

আইপিএল: ৫৪ রানে আউট প্রভসিমরন, পাঞ্জাব ১০৭/১ (৭.৫ ওভার) টার্গেট ২৬২

10:29:44 PM