বিষয় সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে শরিকি বিবাদ চরম আকার ধারণ করতে পারে। কর্মে উন্নতি হবে। অপব্যয়ের ... বিশদ
তবে ‘খেয়াল রাখা’ মানে শুধুই শরীরের খোঁজখবর নয়। বরং মনের যত্নও এখানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত্নের পাঠে যোগ করে নিতেই হবে বাড়তি কিছু সচেতনতার অধ্যায়।
মানসিক যত্ন
কথায় বলে মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। তাই শরীরের সঙ্গে মনের যত্ন বিশেষ গুরুতর। এই বয়স অবসরের। জীবন থেকে দিনানিপাতের ঘোড়দৌড় মুছে যাওয়ায় অনেক ষাটোর্ধ্ব মানুষই সময় কাটানোর উপায় খুঁজে পান না। তাঁদের হতাশা গ্রাস করে। অভ্যস্ত ব্যস্ত জীবন হঠাৎ বদলে যাওয়াকে সহজে গ্রহণ করতে পারেন না অনেকে। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন।
সামাজিক যোগাযোগ: বয়স্কদের সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকা খুব গুরুতর। আজকাল কমবেশি সকলের কাছেই একটি ফোন আছে। সেটি ব্যবহার করতে উৎসাহী করে তুলুন। আত্মীয়, বন্ধু বা পরিজনদের সঙ্গে দিনে কয়েকবার কথা বললে মন যেমন ভালো থাকে, তেমনই শরীরে ডোপামিন বা গুড হরমোন ক্ষরণ বাড়ে। এতে বয়সজনিত নানা জটিল অসুখ, বিষাদ দূরে থাকে। বাড়ির সদস্যদেরও উচিত বয়স্কদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটানো। এই সময় নাতি-নাতনিদের সঙ্গ খুবই উপভোগ করেন তাঁরা। এছাড়া একসঙ্গে কাছেপিঠে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, শারীরিক সক্ষমতা থাকলে বছরে দু’-একবার বেড়াতে যাওয়া, অন্তত মাসে দু’-একবার তাঁদের নিয়ে খেতে যাওয়া এগুলি বজায় রাখুন। নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ি হলে অনেকসময় রেস্তরাঁয় যাওয়াও বিলাসিতা হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে মাসে কয়েকদিন তাঁদের নিয়ে ধারেকাছে নদীর ধার বা কোনও নিকট আত্মীয়ের বাড়ি যান। খেয়াল রাখতে হবে তাঁরা যেন মানসিকভাবে একাকী বোধ না করেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: বয়স্ক ব্যাক্তিরা অনেক সময় অল্পেই খিটখিটে হয়ে যান। কেউ বা পুরনো মেজাজ হারিয়ে একেবারেই শান্ত ও চুপচাপ হয়ে যান। বয়স বাড়ার সঙ্গে নানা অসুখ জাঁকিয়ে বসে। জীবনের প্রতি চাহিদাও আর বিশেষ কিছু থাকে না। তাই বিষণ্ণতা বাড়লে ও বাড়াবাড়ি রকমের উদ্বেগ হলে অবশ্যই মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শখ বজায় থাক: কাজে ব্যস্ত থাকার সময় অনেক কিছুতেই মন দিতে পারেননি। হয়তো অবসর মিলেছে সদ্য কিংবা গৃহকাজে দীর্ঘ অভ্যাসের পর খানিক বিরাম পেয়েছেন। এমন সময় নিজের শখ ও ভালোলাগার কাজগুলি নতুন করে ব্যস্ত করে তুললে, তা জীবনের দিকে এক কদম এগিয়ে যাওয়াই হবে। তাই সেটি প্রশ্রয় দিন। শখের পালে হাওয়া দিতে গল্প করুন তাঁর আগ্রহের বিষয় নিয়ে। এতে ইতিবাচক মন ও বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তি তাঁকে সুস্থ রাখবে।
শারীরিক যত্ন
মনের পরেই আছে দৈহিক সুস্থতার প্রসঙ্গ। বয়স বাড়লে আধিব্যাধি বাড়ে। অনেকের ঘন ঘন চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। কারও আবার প্রয়োজন পরে জীবনযাত্রার ধরন বদলানোর। তাই এই বয়সে তাঁরা সব নিয়ম মেনে শরীরের খেয়াল রাখছেন কি না সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
নিয়মিত হেলথ চেক আপ: বাড়ির বয়স্ক সদস্যের নিয়মিতভাবে শারীরিক কিছু চেক আপ প্রয়োজন হয়। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা না থাকলেও সেগুলি নিয়ম মেনে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তিন চার মাস অন্তর ডায়াবেটিস, ইউরিক অ্যাসিড সহ কিছু রক্তের পরীক্ষা করানো দরকার। বয়স্ক নারী-পুরুষ উভয়েরই বছরে অন্তত দু ' বার ইউএসজি করানো দরকার। তিন মাস অন্তর হার্টের কিছু পরীক্ষাও করা উচিত। পারিবারিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে হেলথ চেক আপের রুটিন বানিয়ে নেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য: চিকিত্সকদের মতে, নির্দিষ্ট একটি বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পর ডায়েটে একটি বিপুল পরিবর্তন আনতে হয়। ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন, অসুখ ও অন্যান্য সমস্যার উপর নির্ভর করে তৈরি হবে ডায়েট। এই ডায়েট কিন্তু এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। সারাদিনে বয়স্কদের খাবারের পাতে রাখুন সুষম আহার। যেসব খাদ্যে হজমের সমস্যা বা সংক্রমনের ভয় আছে সেসব এড়িয়ে চলুন। সারাদিনে শরীর বুঝে জলপান করুন। কতটুকু জল কার শরীরে প্রয়োজন তো জানাবেন চিকিৎসক। এছাড়া প্রচুর ফল, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, হজমের সমস্যা বুঝে ভালো করে সেদ্ধ করা সবুজ শাকসব্জি, বাদাম, দুধ এসব খাওয়া প্রয়োজন। দুধ সহ্য না হলে তার বিকল্প বলে দেবেন চিকিত্সক। ঘন ঘন নিমন্ত্রণ, ফাস্ট ফুড, রেড মিট, ধূমপান, এলকোহল, বেশি তেল-মশলা নিয়মিত এড়িয়ে চলতে হবে বয়স্কদের।
শরীরচর্চা: নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস কম বয়স থেকেই থাকা উচিত। বয়স্ক মানুষদের পেশি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল রাখতে ব্যায়াম সাহায্য করে। বিশেষ করে এরোবিক্স এক্সারসাইজ, সাঁতার, হাঁটাহাঁটি এগুলো খুব ভালো ব্যায়াম। দিনে অন্তত ৪০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। অসুস্থ ব্যক্তি হলে প্রয়োজনে বাড়িতে প্রশিক্ষক রেখে ব্যায়াম শুরু করুন।
ওষুধ: সময়মতো ওষুধ খাচ্ছেন কি না সেটাও খুব জরুরি। বাড়ির লোকজনকে খেয়াল রাখতে হবে এই দিকটি। বয়স হলে অনেকেরই ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। তাই সজাগ থাকুন।