বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দিরের কথা জানতে পারি টিভির একটি অনুষ্ঠান দেখে। সেটি দেখেই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম গুজরাতে গিয়ে আর কোথাও যাই বা না যাই, এই নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দিরে একদিনের জন্য হলেও যাব। মন্দিরটি দেখার অদম্য ইচ্ছার কারণ হচ্ছে এটির অবস্থান সমুদ্রের মধ্যে। সমুদ্রপাড় থেকে দেড়-দু’ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে তবেই পৌঁছতে হয় নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দিরে। মনে করা হয় এই মন্দিরে মহাদেবের পুজো করলে নিষ্কলঙ্ক অর্থাৎ কলঙ্ক মুক্ত হওয়া যায়। সমুদ্রের জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে এই পঞ্চ শিবলিঙ্গ দর্শন করা আর পুজো দেওয়া।
গুজরাতের ভাবনগর থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে কলিয়াক গ্রামে আরব সাগরের মধ্যে এই নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের অবস্থান।
নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দির ঘিরে একটি লোককাহিনি প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পঞ্চপাণ্ডব অনুশোচনায় ভুগছিলেন। সেই সময় তাঁরা তাঁদের অনুশোচনা তথা পাপ মোচন করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের বলেছিলেন একমাত্র মহাদেবই পারেন তাঁদের কলঙ্কহীন করতে। এরপরে শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপাণ্ডবকে কালো রঙের গোরু এবং কালো পতাকা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে এই কালো গোরু আর কালো পতাকা নিয়ে তাঁরা যেন ভারত ভ্রমণ শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণ আরও বলেছিলেন, যে স্থানে গিয়ে এই কালো গোরু এবং কালো পতাকা সাদা হয়ে যাবে, সেখানে যেন পঞ্চপাণ্ডব পাঁচটা আলাদা আলাদা শিবলিঙ্গ তৈরি করে শিবের আরাধনা করেন। এতেই তাঁদের সব পাপ খণ্ডন হবে। মনে করা হয় বর্তমানে যে স্থানে নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দির অবস্থিত সেখানেই এসে কালো গোরু এবং কালো পতাকা সাদা হয়ে গিয়েছিল। আর এইখানেই পঞ্চপাণ্ডব পাঁচটা শিবলিঙ্গ তৈরি করে আলাদা আলাদাভাবে মহাদেবের আরাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। পঞ্চপাণ্ডবের আরাধনায় মহাদেব তুষ্ট হন এবং তিনি তাঁদের অনুশোচনা, পাপ সবকিছু থেকে মুক্ত করেন। আর এই স্থানে তিনি নিষ্কলঙ্ক মহাদেব রূপে বিরাজ শুরু করেন।
আমরা হোটেল থেকেই সেই দিনের জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিয়েছিলাম। জানতে পেরেছিলাম সকাল আটটা থেকে ভাটা শুরু হবে। সেইমতো আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে সড়কপথে পৌঁছে গেলাম ৩০ কিলোমিটার দূরের কলিয়াক গ্রামের সমুদ্রতটে যেখানে নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দির অবস্থিত। আমরা সমুদ্রের পার থেকে পুজোর সামগ্রী নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দিরের উদ্দেশে। বালি, কাদা, জলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম একটি বিশাল চাতালে। সেই চাতালে অবস্থান করছে পাঁচটি শিবলিঙ্গ। চাতালের উপরে একটি বিশাল স্তম্ভ। আর তার মাথার উপর একটি বিশাল পতাকা সমুদ্রের হাওয়ায় ফরফর করে উড়ে চলেছে। জোয়ারের সময় যখন মন্দিরটি জলের নীচে থাকে, তখন কেবলমাত্র ওই পতাকাটাই জলের উপর দৃশ্যমান থাকে। আমরা যেহেতু ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম সেহেতু ওখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখিও চোখে পড়েছিল।
পঞ্চলিঙ্গের পুজো দিয়ে আমরা ফিরে এসেছিলাম সমুদ্রের পাড়ে। ভেবেও অবাক লাগে দিনের মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা জলের উপর অবস্থান করে মন্দিরটি।
কীভাবে যাবেন: ট্রেন পথ বা সড়কপথে পৌঁছতে হবে ভাবনগরে। এরপরে এক রাত ভাবনগরে থেকে ওখান থেকে সড়কপথে পৌঁছে যাওয়া যায় নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের মন্দিরে। তবে এই মন্দিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য করেই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিতে হবে, কারণ শুধুমাত্র ভাটার সময়ই মন্দিরটি সমুদ্রের জলের উপর অবস্থান করে।