বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
এই শহরে শীত দিনকয়েকের অতিথি মাত্র। তবু গ্রামাঞ্চল বা দূর শহরতলিতে ঠান্ডার ভাব খানিক থাকলেও এই শহরে সে আসে লাজুক প্রেমিকের মতো। দিনকয়েক থেকে ফের অলক্ষ্যে বিদায় নেওয়াই তার কাজ। শীতের দুপুরে কফি ও প্রিয় বই হাতে লেপের ভিতর সেঁধিয়ে যাওয়া বা লেপ গায়ে প্রিয় ওয়েব সিরিজে চোখ রাখার যে আনন্দ, তার অনেকটাই লুকিয়ে শীতের এই বালাপোষ, লেপ, কম্বলের ওমের ভিতর। তাই এদের কিনতে হলে বেশ বুঝে, ভেবেচিন্তে কিনতে হবে বইকি! আজও পুরনো বাঙালি বাড়ির অন্দরে চোখ পড়লে দেখা যায়, বাহারি ভারী ট্রাঙ্কের ভিতর রয়েছে শিমুল তুলোর লেপ, হাতে বোনা কাঁথা বা বালাপোষ। আজকাল অবশ্য এসি ব্ল্যাঙ্কেটেরও আলাদা চাহিদা তৈরি হয়েছে। পলিয়েস্টার মাইক্রোফাইবার কমফর্টারেও ভরসা করছেন অনেকে।
শীতের ওয়ার্ডরোব ভরতে এখন বাজারে লেপ-তোষকের নানা ধরনের বিকল্প মেলে। রেজাই, থ্রো ব্ল্যাঙ্কেট তো আছেই, আজকাল আবার ডুভেটেও আরাম খুঁজে নিচ্ছে শীতকাতুরে পরিবার। আগেকার দিনে হাতে বোনা কাঁথাই হতো শীতের অস্ত্র। আজকাল অবশ্য তা ব্যবহার ও কাচাকুচির ঝঞ্ঝাটের কারণে অনেক পরিবারই সেসব বের করতে চান না। বরং পছন্দ করেন ওজনে হালকা ও ওয়াশেবল লেপ-কম্বল। হালকা ওজনের কম্বল খুঁজতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন পুরনো কলকাতার কিছু দোকানপাটে। ধর্মতলা, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান অঞ্চলের ছোটবড় দোকানপাট, গজকুমার, যোগেশ সাহা, কার্ল অন ও বোম্বে ডাইংয়ের নানা আউটলেট, সারথি, গুপ্তাজি, ক্যালকাটা বেডিং স্টোর্স ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও গোটা শহর ও শহরতলি জুড়ে লেপ-তোষক বিক্রির নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কেনার আগে সেসব জায়গায় ঢুঁ মারলে জিনিসের মান যেমন নিজের হাতে পরখ করে দেখা যায়, তেমনই ভ্যারাইটিও চোখে পড়ে। প্রয়োজনে খানিক দরদামও করা যায়। অনলাইন শপিংয়ে দরদাম বা হাতে পরখের সুযোগ না থাকলেও ভ্যারাইটি কিন্তু মিলবে এখানেও। পছন্দ ও নকশা বুঝে কিনে ফেললেই হল।
তোমার আমার দোহার
হালকা ঠান্ডায় নরম লেপের আরাম চাইলে দোহারকে আপন করে নিতে পারেন। সিঙ্গল বা ডাবল, দু’রকম মাপেই দোহার কিনতে পারেন। বাজারচলতি বেশির ভাগ দোহারকে দু’দিকেই ব্যবহার করা যায়। বেডিংয়ের নামী দোকানগুলিতে দোহারের বেশ ভালো কালেকশন এসেছে এবার। বেগুনি, নীল, হলুদ ও লাল রঙের প্রাধান্য সেখানে বেশি। ফুলেল ও বুটি নকশা যেমন পাবেন, তেমনই এই দোহারের মধ্যে সুতির ছাপা নকশাও মিলবে। দাম পড়বে ২০০০-৩০০০ টাকার মধ্যে। সিঙ্গল বেড হলে ১৭০০-১৮০০ টাকায় পাবেন দোহার। দক্ষিণাপণের গুরজরিতেও দোহারের নানা ভ্যারাইটি পাবেন। সুতির কাপড়ের উপর আজরাখ নকশার হালকা তুলো ঠাসা সিঙ্গল বেডের দোহার এখানে পাবেন ২২০০ টাকা বাজেট থাকলেই। ডাবল বেড ও ভারী তুলোর দোহার পাবেন ৪৫০০ টাকা থেকে। কম ওজনের তুলো নিলে তা পাবেন ৪৩০০ টাকায়। দোহারের দাম কিন্তু নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন, এটি যদি তুলো ঠাসা হয়, তবে কিন্তু দাম একটু বেশি পড়বে। আবার তুলো কতটা আছে তার উপরেও নির্ভর করবে দাম। তুলো ছাড়া শুধুই কয়েকটি সুতির কাপড় জুড়ে যে পুরু দোহার তৈরি হয়, তাতেও কিন্তু ভালো শীত আটকায়।
সাধারণ ছিমছাম নকশা ও পকেটসই দামের এমন দোহার কিন্তু অনলাইনেও মেলে। তিন-চারটি সুতির কাপড় মিলে যে ডাবল বেড দোহার বানানো হয় তার দাম পড়ে ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে।
লেপের আরাম
আজকাল এসি ব্ল্যাঙ্কেটের চাহিদা বেশ ঊর্ধ্বমুখী। হালকা ও নরম উপাদান ফ্লানেল দিয়ে তৈরি ব্ল্যাঙ্কেটগুলো ওজনে হালকা কিন্তু বেশ গরম। এগুলো কটন বা পলি কটন মেটিরিয়ালেরও হয়। তবে মূল জিনিসটি যে উপাদানেরই হোক না কেন, সঙ্গে সুতির কভার ব্যবহার করুন। আরামদায়ক হবে। ধোয়াকাচা করতেও সুবিধা হবে। বিভিন্ন রঙের এই ব্ল্যাঙ্কেট অনলাইনে অর্ডার দিতে পারেন। সিঙ্গল বেডের বেলায় দাম পড়বে ৮০০-৯০০ টাকা। ডাবল বেড হলে ১১০০ টাকার কাছাকাছি। এই ব্ল্যাঙ্কেটগুলো ধোয়াকাচা করা খুব সহজ। ঠান্ডা জলে হাতে কেচে নিলেই চলে। ওজনে হালকা হওয়ায় হাতে কাচতে অসুবিধা হয় না। এগুলোয় ব্লিচ দেওয়া বারণ।
এসি ব্ল্যাঙ্কেটের আরও নানা ভ্যারাইটি রয়েছে। ফ্লানেল ছাড়াও পলিয়েস্টার, মাইক্রোফাইবার মাইক্রো পলিয়েস্টার দিয়েও আজকাল ভালো মানের এসি ব্ল্যাঙ্কেট তৈরি হয়। মেশিন ওয়াশের উপযোগী হওয়ায় এগুলো ব্যবহারেও সুবিধা। নানা শপিং মল ও বেডিংয়ের দোকানে এগুলো সহজেই মেলে। সিঙ্গল বেডের জন্য বাজেট রাখুন ৬০০-৭০০ টাকা। ডাবল বেডের জন্য খরচ পড়বে ৯০০-১০০০ টাকার মধ্যে।
অনেকে আবার তুলো ভরা ব্ল্যাঙ্কেট বেশি পছন্দ করেন। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট ও হাতিবাগানের বেডিং স্টোরগুলোয় এমন ব্ল্যাঙ্কেট সহজেই মিলবে। সিঙ্গল বেডের জন্য দাম পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। কিং সাইজ বেড হলে বাজেট ৩০০০-৩৫০০ টাকা ধরে এগনই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে তুলোর ব্ল্যাঙ্কেট আজকাল ভারী হওয়ায় অনেকে এগুলোর পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার দিয়ে তৈরি এসি ব্ল্যাঙ্কেট বেশি ব্যবহার করেন। এগুলো দামেও তুলনামূলক সস্তা। দাম ঘোরাফেরা করে ১২০০-২০০০ টাকার মধ্যে।
বেডরুমের ফ্যাশনে ডুভেট
গরমকালে ঠান্ডা, শীতে গরম। এসি ব্ল্যাঙ্কেটের মতো এসি ডুভেটেরও সুবিধা এখানেই। বিয়েবাড়ির উপহার হোক বা নিজের বাড়ির জন্য, ডুভেটের জনপ্রিয়তা গত তিন চার বছরে বেশ বেড়েছে। অনেক সময় এসি ডুভেটের সঙ্গে একটি বেডশিট, দু’টি পিলো কভার মেলে। অনলাইন প্লাটফর্মগুলোয় এই ডুভেট সহজলভ্য। পুরো সেট সহ কিনতে গেলে সিঙ্গল বেডের বেলায় ১২০০ ও ডাবল বেডের বেলায় ১৫০০-২০০০ টাকা বাজেট ধরে এগন। তবে এদের মান ও তৈরির উপকরণের উপর দাম নির্ভর করে। নানা জ্যামিতিক নকশা ও রঙের এমন ডুভেটের কিছুটা সংগ্রহ রয়েছে গজকুমার, সারথি ইত্যাদি দোকানগুলোয়। তবে এসব জায়গার তুলো ভরা ডুভেট কিন্তু বেশ গরম। এগুলো শীতকালেই কেবল ব্যবহার করা যাবে। এগুলোর সঙ্গে সেট মিলবে না। কিন্তু কলকাতার শীত আটকাতে ডুভেটগুলি একাই একশো। এই তুলো ঠাসা ডুভেট পাবেন ৩০০০-৪৫০০ টাকা দামের মধ্যে। সিঙ্গল ও ডাবল দু’রকমই মিলবে।
নকশা কাটা রেজাই
শীত আটকাতে গায়ে জড়ানো থাকবে সুতোর কাজের গরম কাপড়। নকশার বুননে শৈল্পিক ছোঁয়া দিয়ে যদি বেড়রুমের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তুলতে চান, তাহলে রেজাই আপনার অন্যতম পছন্দ হতে পারে। সুতির কাপড়ের উপর নানা ধরনের জয়পুরী নকশার রেজাই কিনতে পারেন অনলাইন থেকেও। সিঙ্গল বেডের জন্য সেখানে খরচ পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। ডাবল বেড হলে খরচ দাঁড়াবে ১৩০০-১৪০০ টাকা। তবে কলকাতার বেশ কিছু নামী বেডিং স্টোর যেমন গুরজারি, গুপ্তাজি, সারথি, মৃগনয়নী ইত্যাদি দোকানে এমন রেজাই পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ও নকশা অনুযায়ী দামের হেরফের হবে। হাতে বোনা রাজস্থানী কাজ ও ভরাট নকশার রেজাই খুঁজলে সিঙ্গল বেডের জন্য খরচ ধরে রাখুন ২৫০০-৩০০০ টাকা। ডাবল বেড হলে এই খরচ দাঁড়াবে ৪০০০-৪৫০০ টাকার আশপাশে। সুতির সঙ্গে উল মেশানো ভারী ঠান্ডায় ব্যবহারের জন্য এক ধরনের রেজাই বাজারে মেলে। তার দাম আর একটু বেশি। হাতে বোনা জয়পুরী ঘন নকশা যখন সুতো ও উলের মিশেল কাপড়ে মিশে যায়, তখন দেখতেও বেশ রাজকীয় হয়! বাজেট একটু বেশির দিকে হলে এমন রেজাই কিনতে পারেন। দাম শুরু ৬০০০ টাকা থেকে। মোটামুটি ১১০০০ টাকার মধ্যে নানা ভ্যারাইটি পাবেন। ব্লক প্রিন্ট, ফ্লোরাল মোটিফ, জিওমেট্রিক্যাল অ্যালাইনমেন্ট নানা কেতার নকশা মিলবে এই বাজেটে।