কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও ঘরে বাইরে বাধা থাকবে। কারও প্ররোচনায় যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক হন। ... বিশদ
স্বামী অখণ্ডানন্দ কখনো ‘পরোপকার’ কথা লিখতেন না, শুধু ‘উপকার’ ব্যবহার করতেন। ‘পর’ এই কথাটি পর্যন্ত যেন তাঁর সহ্য হতো না। মহারাজের একখানি ছবি আছে—জামা-জুতো পরা এবং একটি শিশুকে কোলে করে দাঁড়িয়ে। শ্রীশ্রীঠাকুরের সন্তান, স্বামী বিবেকানন্দের অনুগত সহচর ও ভাই, সর্বত্যাগী বালক-সন্ন্যাসীর এই কী মূর্তি! তা চিন্তা করলে মস্তিষ্ক বেঠিক হয়ে যায়, হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কৈলাসশিখরে তিব্বতভূমির অন্তরে ভগবান বুদ্ধকে জমিয়ে রাখলে চলবে না। ভগবান বুদ্ধকে গলিয়ে বের করে সেই শান্তিবারি ভারতের সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। সব অমঙ্গল দূর হয়ে যাবে—দেশের মঙ্গল, দশের মঙ্গল, প্রত্যেকের মঙ্গল হতেই হবে। স্বামী অখণ্ডানন্দ তিব্বত ভ্রমণ করে যেন তাঁর তীর্থযাত্রা সম্পূর্ণ করলেন। সাধু ভক্ত তীর্থভ্রমণ করেন—ভাব গ্রহণ করতে, হৃদয় পূর্ণ করতে। স্বামী অখণ্ডানন্দের হৃদয় ভারতের তীর্থস্থান সব দেখেও পূর্ণ হলো না। তাই তিনি ছুটে গেলেন কৈলাসের সেই মুক্ত বায়ুতে, সেই স্বাধীন দেশে—ভগবান বুদ্ধের রত্নগহ্বরে। তীর্থযাত্রা শেষ করে পথিক ফিরে এলেন আপন দেশে, কণ্ঠে তাঁর সত্যের বাণী। সত্যের প্রতিমূর্তি তিনি—তাঁর মুখে শুনেছি, তিনি যদি একটু মিথ্যা পরিচয় দিতেন, তাহলে তিব্বতের রাজধানী ‘লাসা’-ঢুকতে পারতেন। কিন্তু তাঁর জিহ্বা মিথ্যা উচ্চারণ করতে পারেনি। একদল মুসলমান বণিক লাসায় পণ্যসম্ভার নিয়ে বাণিজ্য করতে যায়। স্বামী অখণ্ডানন্দের তখন যে চেহারা ছিল—বিশেষ করে তাঁর তলোয়ারের মতো নাক, তাতে অনায়াসে তিনি সেই দলে মিশে সেখানে চলে যেতে পারতেন। তিব্বতে বহু লোক এই ফন্দি তাঁকে শেখায়। কিন্তু তিনি বললেন, “‘আমি বাঙালি সন্ন্যাসী’—আমার এ-ই পরিচয়, অন্য পরিচয় নেই।”