কাজকর্ম, বিদ্যাশিক্ষায় দিনটি শুভ। বৃত্তিগত প্রশিক্ষণে সাফল্যের সুবাদে নতুন কর্মপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। দেহে আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
কীর্তন করার গুরুত্ব বর্ণনা করে শুকদেব গোস্বামী পরীক্ষিৎ মহারাজকে বলেছিলেন, “হে রাজন! কেউ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তনের প্রতি আসক্ত হন, তা হলে বুঝতে হবে যে, তিনি পরম সিদ্ধিলাভ করেছেন।” সেখানে বলা হয়েছে, যে সমস্ত কর্মী তাদের কর্মফল ভোগ করার বাসনা করছেন, যে সমস্ত মুক্তিকামী জ্ঞানীরা ব্রহ্মে লীন হয়ে যাওয়ার বাসনা করছেন, এবং যে সমস্ত যোগী যৌগিক সিদ্ধিলাভ করার আকাঙ্ক্ষা করছেন, তাঁরা সকলেই ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করার ফলে তাঁদের অভীপ্সিত বাসনা চরিতার্থ করতে পারেন। শ্রীল শুকদেব গোস্বামী এখানে নির্ণীতম শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ হচ্ছে—‘তা ইতিমধ্যেই নির্ণীত হয়েছে।’ শুকদেব গোস্বামী ছিলেন মুক্ত পুরুষ, তাই তিনি তেমন কোন মত স্বীকার করেননি, যা নির্ণীত (সিদ্ধ) হয়নি। তাই শুকদেব গোস্বামী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, যে মানুষ দৃঢ়তা ও ঐকান্তিকতার সঙ্গে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করেছেন, তিনি যে ইতিমধ্যেই সকাম কর্ম, মনোধর্মপ্রসূত জ্ঞান ও যোগের অষ্টসিদ্ধির স্তর অতিক্রম করেছেন, তা নিশ্চিতভাবে নির্ণীত হয়েছে।
আদি-পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ সেই তত্ত্ব প্রতিপন্ন করে অর্জুনকে বলেছেন, “হে অর্জুন! যে মানুষ আমার দিব্যনাম কীর্তন করে, সে নিরন্তর আমার সান্নিধ্য লাভ করছে বলে বুঝতে হবে। হে সখে! এই ধরনের ভক্তদের কাছে আমি সহজেই বিক্রীত হয়ে থাকি।” পদ্ম-পুরাণেও বলা হয়েছে, “যে মানুষ বহু জন্মে ভগবান বাসুদেবের সেবা করেছেন, তাঁরই জিহ্বায় ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ বিরাজ করে।” পদ্ম-পুরাণে আরও বলা হয়েছে, “ভগবানের দিব্য নাম জড় শব্দতরঙ্গ নয় এবং তা কখনও জড় কলুষের দ্বারা প্রভাবিত হয় না।” সুতরাং, যার ইন্দ্রিয় সর্বতোভাবে কলুষমুক্ত হয়নি, সে ভগবানের এই দিব্যনাম নিরপরাধে কীর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ, প্রাকৃত বিকারগ্রস্ত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ যথাযথভাবে কীর্তন করা যায় না। কিন্তু এই কীর্তনের প্রভাবে মানুষ পবিত্র হতে পারে এবং তার ফলে তারা অচিরেই নিরপরাধে ভগবানের দিব্য নামসমন্বিত এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে পারে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, প্রতিটি মানুষই যেন তাদের হৃদয়কে সম্পূর্ণভাবে কলুষমুক্ত করার জন্য ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে’ কীর্তন করে। হৃদয় নির্মল হলে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের’ গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করা যায়। যে সমস্ত মানুষ তাদের হৃদয় কলুষমুক্ত করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তারা ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করার অপ্রাকৃত ফললাভ থেকে বঞ্ছিত হয়। তাই সকলেরই কর্তব্য হচ্ছে উৎসাহের সঙ্গে ভগবানের প্রতি সেবাভাব বিকশিত করা।