শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
এ বৎসর দিনগুলি কি সুন্দরভাবেই না কাটিয়াছে! এইসব দিনেই যে, আদর্শ বাস্তবে পরিণত হইয়াছে! প্রথমে নদীতীরে বেলুড়ের কুটীরে, তারপর হিমালয়বক্ষে নৈনিতাল ও আলমোড়ায়, পরিশেষে কাশ্মীরে নানাস্থানে পরিভ্রমণ-কালে সর্বত্রই এমন সব সময় আসিয়াছিল যাহা কখনো ভুলিবার নয়, এমন সব কথা শুনিয়াছি যাহা আমাদের মনে সারাজীবন ধরিয়া প্রতিধ্বনিত হইতে থাকিবে। আর অন্তত জাগরূক থাকিবে বারেকের জন্য লব্ধ সেই চকিত দিব্যদর্শন! সে সবই যেন একটা খেলা! এমন এক প্রেমের বিকাশ দেখিয়াছি, যে প্রেম ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্রকেও, অজ্ঞান হইতে অজ্ঞানকেও আলিঙ্গন করিয়া এক হইয়া যায় এবং তাহারই দৃষ্টিতে তখন সমস্ত জগৎকে দেখে, যেন তাহাতে কোনরূপ প্রতিবাদ করিবার কিছুই নাই।
বিরাট প্রতিভার বিশাল খেয়ালে আমরা কৌতুক করিয়াছি, বীরত্বের উচ্ছ্বাসে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছি—এই সমস্ত দিব্যলীলায় মনে হয় যেন বালরূপী ভগবান তাঁহার শিশুশয্যা হইতে জাগিতেছেন, আর আমরা দাঁড়াইয়া সাক্ষিস্বরূপ নিরীক্ষণ করিয়াছি! কিন্তু ইহাতে কোনরূপ মানসিক উগ্রতা বা কঠোর গাম্ভীর্যের ভাব ছিল না। দুঃখ আমাদের সকলের কাছেই ঘেঁষিয়া গিয়াছে। অতীতের কত শোকস্মৃতি আসিয়া চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু সে দুঃখও ঊর্ধ্বশিখ হইয়া হেমজ্যোতিতে উদ্ভাসিত হইত, দীপ্তিতে মণ্ডিত হইত, তাহাতে কোনরূপ দাহ থাকিত না। যদি সে ক্ষমতা আমার থাকিত, মহা-উল্লাসে আমি সে ভ্রমণ কাহিনী বর্ণনা করিতাম। তবু আজ সে কথা লিখিতে লিখিতে যেন দেখিতেছি বারামুল্লায় সেই প্রস্ফুটিত প্রফুল্ল আইরিস কুসুমসকল; দেখিতেছি ইসলামাবাদে পপলার তরুতলে চারা চারা ধানগাছগুলি; দেখিতেছি নক্ষত্রালোকিত হিমাচল-অরণ্যানীর দৃশ্যাবলী; আর দেখিতেছি দিল্লী ও তাজের রাজভোগ্য সৌন্দর্যরাশি। স্মৃতির এই সকল নিদর্শন বর্ণনা করিতে কার না আগ্রহ হয়! কিন্তু বর্ণনায় উহা বিবর্ণ হইয়া উঠিবে—কেন না সে যে অসম্ভব। তাই স্মৃতির আলেখ্যে নর-স্মৃতির আলোকেই তাহাদের অক্ষয় পুণ্যপ্রতিষ্ঠা। আর সেই প্রতিষ্ঠায় চিরসংযুক্ত হইয়া বিরাজ থাকিবে তথাকার কোমলহৃদয় শান্তপ্রকৃতি অধিবাসিবৃন্দ, যাহাদের আনন্দ মনে হয় আমাদের আগমনে, আমাদের সংশ্রবে আসিবার ফলে আরও ঘনীভূত হইয়া বিরাজ করিবে। এমন একটি দিন (৯ই মে) কখনই ভুলিবার নহে। তরুতলে বসিয়া আমরা কথাবার্তা কহিতেছিলাম, এমন সময় সহসা ঝড় আসিল। আমরা প্রথমে নদীর তীরে পোস্তার ওপরে বারান্দায় উঠিয়া গেলাম। আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করা চলিত না। দশ মিনিটের মধ্যে গঙ্গার অপর পার আর দেখা গেল না। চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হইল। শুধু মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপতন-শব্দ শুনিতে পাইতেছিলাম, আর থাকিয়া থাকিয়া ঘোর বিদ্যুৎ চমকাইতেছিল। তথাপি বাহ্য প্রকৃতির এই সকল আলোড়নের মধ্যে আমাদের ছোট বারান্দাটিতে বসিয়া বসিয়া আমরা ইহার চেয়েও এক গভীরতর অভিনয় তন্ময়ভাবে দেখিতেছিলাম।