শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
শ্রীরামকৃষ্ণ-সারদা দেবীর পরিচালনায়, নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ছোটো অথচ প্রচণ্ড শক্তিধর সেই সঙ্ঘ কাশীপুর উদ্যানবাটীতেই ক্রমে রূপ পেয়েছিল। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পনেরো দিন পরে কাশীপুর উদ্যানবাটী ছেড়ে দিতে হল, মা চলে গেলেন বৃন্দাবনে, যুবকভক্তদের অধিকাংশই গৃহে ফিরে গেলেন। সাময়িকভাবে মনে হল, সঙ্ঘ বুঝি ভেঙে গেল। এরপরে শ্রীরামকৃষ্ণ সুরেন্দ্রনাথ মিত্রকে দর্শন দিয়ে বললেন, ত্যাগী সন্তানদের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করতে। সেই অনুযায়ী, সুরেন্দ্রনাথের অর্থে শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের চারমাস পরে বরানগরে প্রথম রামকৃষ্ণ মঠ গড়ে উঠল। একে একে ত্যাগী সন্তানেরা সেখানে এসে জড়ো হলেন। অবর্ণনীয় দারিদ্র্য সেখানকার জীবনের নিত্যসঙ্গী, তবুও ত্যাগ-তপস্যার অনাবিল আনন্দে সন্ন্যাসীরা ভরপুর থাকতেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পরিব্রাজক জীবনের আকর্ষণ তাঁদের মনে প্রবল হয়ে উঠল। কখনও একা, কখনও বা দু-একজনের ছোটো ছোটো দলে মঠ ছেড়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়তে লাগলেন। এদিকে তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে ১৮৯০ সালের মার্চ মাসে মা বুদ্ধগয়ায় পৌঁছান। সেখানকার মঠের অতুল ঐশ্বর্য দেখে তাঁর মনে পড়ে তাঁর দরিদ্র সন্ন্যাসী ছেলেদের কথা। আকুল হৃদয়ে তিনি প্রার্থনা করতে থাকেন, যাতে তাঁদের জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হয়, সঙ্ঘ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মায়ের নিজের কথায়া “ঠাকুরের শরীর যাবার পর ছেলেরা সব সংসার ত্যাগ করে কয়েকদিন একটা আশ্রম করে একসঙ্গে জুটল। তারপর একে একে স্বাধীনভাবে বেরিয়ে পড়ে এখানে-ওখানে ঘুরতে থাকে। আমার তখন মনে খুব দুঃখ হল। ঠাকুরের কাছে এই বলে প্রার্থনা করতে লাগলুম, ‘ঠাকুর, তুমি এলে, এই কজনকে নিয়ে লীলা করে, আনন্দ করে চলে গেলে, আর অমনি সব শেষ হয়ে গেল? তাহলে এত কষ্ট করে আসার কি দরকার ছিল? কাশী বৃন্দাবনে দেখেছি, অনেক সাধু ভিক্ষা করে খায় আর গাছতলায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। সেরকম সাধুর তো অভাব নেই। তোমার নাম করে সব ছেড়ে বেরিয়ে আমার ছেলেরা যে দুটি অন্নের জন্য ঘুরে ঘুরে বেড়াবে, তা আমি দেখতে পারব না। আমার প্রার্থনা, তোমার নামে যারা বেরুবে তাদের মোটা ভাত-কাপড়ের অভাব যেন না হয়। ওরা সব তোমাকে আর তোমার ভাব-উপদেশ নিয়ে একত্র থাকবে। আর এই সংসারতাপদগ্ধ লোকেরা তাদের কাছে এসে তোমার কথা শুনে শান্তি পাবে। এইজন্যই তো তোমার আসা। ওদের ঘুরে ঘুরে বেড়ানো দেখে আমার প্রাণ আকুল হয়ে ওঠে।’ তারপর থেকে নরেন ধীরে ধীরে এইসব করল।”