বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
এক সম্প্রদায় আর এক সম্প্রদায়কে নিন্দা করিলে বা সমালোচনাচ্ছলে কটাক্ষ করিলে, কখনও ধর্ম্মের মর্ম্ম উপলব্ধি বা প্রচার করা হয় না। কোন ধর্ম্ম কাহারও কল্পনাপ্রসূত হইতে পারে না। কোন ধর্ম্ম কাহারও নিজস্ব হইতে পারে না এবং কোন ধর্ম্ম কোনও ব্যক্তিবিশেষের নিমিত্ত প্রকটিত হয় নাই। যে কোনরূপে অপরের ভাবে কটাক্ষ করা হয়, অথবা তাহার ভাব অপেক্ষা নিজ ভাবের শ্রেষ্ঠতা জ্ঞান করা হয়, তাহাকেই দ্বেষভাব কহে। দ্বেষভাবেই আমাদের দেশ কলঙ্কিত হইয়া গিয়াছে। এই কলঙ্ক অপনোদন করিবার নিমিত্ত কথিত হইয়াছে যে, রামকৃষ্ণদেব অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। তিনি একস্থানে সকল ভাবের সমন্বয় করিয়া যাহা প্রচার করিয়াছেন, তন্মধ্য হইতে অদ্য সাকার নিরাকার বিষয়টী আলোচনা করিবার নিমিত্ত সর্ব্বসাধারণের সমক্ষে উপস্থিত হইয়াছি। রামকৃষ্ণদেব দয়া করিয়া যেমন সাকার নিরাকারের নিগূঢ় রহস্য আমাকে বুঝাইয়াছেন, তাঁহার চরণে প্রার্থনা করি, যেন সেইরূপ কৃপা করিয়া অদ্য আপনাদিগকে তাহা বুঝাইয়া দিয়া আমার মনোরথ পূর্ণ করুন। সাকার নিরাকার সম্বন্ধীয় প্রস্তাবটী অগ্রে আলোচনা করিবার হেতু এই যে, অন্যান্য সাম্প্রদায়িক ধর্ম্মের দ্বারা আমাদের দেশের যে পরিমাণে ক্ষতি হইয়াছে, তাহাদের তুলনায় নিরাকারবাদীদিগের দ্বারা বাস্তবিক প্রচুর পরিমাণে অপকার হইয়াছে এবং হইতেছে। এই নিরাকারবাদীরা হিন্দুসমাজের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে অবস্থিতি করিতেছেন। যাঁহারা হিন্দুসমাজভুক্ত, তাঁহারা মৌখিক সাকার মত সমর্থন করিয়া থাকেন, কিন্তু মনে মনে নিরাকার ভাবকেই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরূপ জ্ঞান করেন। সাকারের প্রসঙ্গ হইলেই তাঁহারা উপনিষদাদি শাস্ত্রের দোহাই দিয়া ‘নিরাকার ভাব সমর্থন করিতে যত্নবান হন। শাস্ত্রীয় বিচার লইয়া যদ্যপি সাকার ও নিরাকার তত্ত্ব নিরূপিত হইত, তাহা হইলে আমাদিগকে সর্ব্বদা বিচার বিগ্রহে নিযুক্ত হইতে হইত না। আমাদের দেশের শাস্ত্রাদি যে প্রকারে লিখিত, তাহার প্রকৃত তাৎপর্য্য বহির্গত করা মনুষ্যের সাধ্যাতীত ব্যাপার বলিলে বোধ হয় প্রকৃত কথা বলা হয়। শাস্ত্রের মর্ম্ম অবগত হওয়া মনুষ্যের সাধ্যাতীত বলিবার হেতু এই যে, যখন একটী শ্লোকের ব্যাকরণাদির সাহায্যে ইচ্ছামত অর্থ এবং তাৎপর্য্য বহির্গত করা যায়, তখন শাস্ত্রপ্রণেতার কি উদ্দেশ্য, তাহা কে কিরূপে স্থির করিতে সমর্থ হইবেন? একখানি শাস্ত্রের কত টীকা-টিপ্পনী প্রচলিত হইয়াছে এবং সময়ে সময়ে পণ্ডিতপ্রবরেরা তাহার নূতন নূতন ভাবার্থ প্রকাশ করিয়া নব নব ভাব প্রদান করিতে প্রয়াস পাইয়া থাকেন।