বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
১। সন্ধ্যা-বন্দনা ও নিত্য নৈমিত্তিক উপাসনা।
২। ভগবানের নাম গুণকীর্তন বা পুনঃপুনঃ পবিত্র মন্ত্র জপ।
৩। প্রাণায়াম অনুশীলন।
এই উপায়গুলি যে কার্যকরী তা আমরা স্বীকার করি। আমরা আরও বলেছি, “আন্তরিক উপাসনা ও দৃঢ় বিশ্বাস তার পক্ষে খুবই প্রয়োজন এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষে প্রভূত পরিমাণে সাহায্য করে।”
কিন্তু প্রচলিত লোকাচারের বশবর্তী হয়ে আমাদের চলা উচিত নয়। সন্ধ্যানুষ্ঠানাদি সকলের পক্ষে সমান ফলপ্রসূ হয় না, যদিও সকলে সমভাবে আচারাদি পালন করে থাকে। অনুশীলনকারীর মানসিক গঠনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। কিছুই বৃথা যায় না। অতি নিকৃষ্ট ক্ষেত্রেও নিত্যকর্মের ফল আছে। বহুরকম প্রচেষ্টার মাঝে একজন মানুষ যদি দিনে দু-তিন বার নিরাসক্ত চিত্তে অন্ততঃ কয়েক মিনিট চুপ করে শান্তভাবে জগদতীত তত্ত্বে মনোনিবেশ করতে চেষ্টা করে তবে তার নিজস্ব গুরুত্ব আছে। কিন্তু অন্য কোন প্রকার উপযুক্ত সাহায্য না পেলে ঐরকম অল্পসল্প সাধনে রোগ সারে না। সন্ধ্যা-বন্দনায় তার কি উপকার হতে পারে—যদি দিনের বাকি সময় তুচ্ছ সাংসারিক ব্যাপারে খরচ করে ফেলে? তার প্রতিদিনের কাজকর্ম পবিত্র ও উচ্চভাবোদ্দীপক হওয়া চাই যদি ধর্মপথে লক্ষণীয় উন্নতি সাধন করতে হয়। এইখানেই হচ্ছে নৈতিকতা, সৌন্দর্যবোধ প্রভৃতির ভূমিকা। আনুষ্ঠানিক সাধন করতে কাউকে নিষেধ করা হচ্ছে না। মনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এগুলি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ আকার ধারণ করে। কিন্তু এসবের সঙ্গে নৈতিকতা, জ্ঞান, কলা প্রভৃতির অনুশীলন প্রয়োজনীয়। যদি ধর্মকে সত্যিকারের ফলপ্রসূ করতে হয়, তাহলে অবশ্যই এগুলিকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করা দরকার।
আমরা এই প্রশ্ন এখানে আলোচনা করছি, কারণ আজকাল ভারতে অনেকে আছেন এবং পৃথিবীর অন্যত্রও যেখানে ধর্মবিশ্বাস ও সাধন বর্তমান, সেখানেও অনেকেরই ধারণা কয়েকটি নির্দিষ্ট আচার পালন করতে পারলে তাঁরা স্বর্গের দুয়ারে পৌঁছে যাবেন। স্বর্গদ্বার—এত সহজলভ্য নয়। ইহা অনস্বীকার্য যে দৃঢ়-চিত্তে আচারপর্বাদি পালনে মানুষের মধ্যে বিশেষ শক্তি জন্মায়। প্রকৃতপক্ষে যে কোন সূক্ষ্মবিষয়ে মনঃসংযোগ করলে তা থেকে অনুরূপ ফল লাভ হয়। কিন্তু মানুষের কখনও কি শক্তির অভাব ঘটে? এটি আমাদের মধ্যে প্রয়োজনের অধিক পরিমাণে রয়েছে। সত্যসত্যই; শক্তি লাভের চেয়ে আমাদের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শক্তি বর্তমান, তার যথাযথ ব্যবহারের জন্য তীব্র ইচ্ছা ও সুষ্ঠু বিচারের অধিক প্রয়োজন। বর্তমান শক্তির যথাযথ ব্যবহার করতে যত আমরা শিখব, নিজে থেকে তত নতুন শক্তির স্ফূরণ ঘটবে। এমন ঘটনাও ঘটে যেখানে একজন মানুষ কোনপ্রকারে সামান্য অতিপ্রাকৃত শক্তি লাভের ফলে উদ্ধত হয় এবং পরের ও নিজের অশেষ ক্ষতিসাধন করে। উন্নতির পথে চরিত্রবলই আমাদের রক্ষাকবচ।
নামসঙ্কীর্তনও তদনুরূপ। জপও ভজনের ফল সামান্য। মনের অবস্থার উপর সব নির্ভর করে। যন্ত্রবৎ নামজপ করলে ফল সামান্যই হয়। অপবিত্র মনে দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে জপ করলে আমাদের কিছু সিদ্ধাই হতে পারে, কিন্তু সেটা তো কোন সত্যিকারের আধ্যাত্মিকতা নয়। প্রত্যেক সচেতন মনে নিজ স্বাভাবিক কর্ম ও আকাঙ্ক্ষার স্তর রয়েছে, যার প্রেরণায় মন অনুভব করে এবং তদনুযায়ী ব্যবহার করে। যদি মনের স্বাভাবিক অবস্থা আধ্যাত্মিক না হয়, ধ্যানের প্রযত্নের ফলে যে সিদ্ধাইসকল আমরা লাভ করব, তা দিয়ে আধ্যাত্মিক উন্নতিলাভে বঞ্চিত হব। শ্রীচৈতন্য বলেছেন, যিনি তৃণের চেয়ে নম্র, বৃক্ষের মতো সহিষ্ণু, আত্মাভিমানরহিত, অপর ব্যক্তিকে আন্তরিকভাবে মান দান পূর্বক তাঁর শ্রীভগবানের নামগুণগান করা উচিত। ভগবদ্ভজন কিভাবে ফলপ্রসূ করা যায় তার প্রয়োজনীয় নির্দেশ পরিষ্কারভাবে এখানে দেওয়া হয়েছে।