বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
বাম জমানার পত্তন হয়েছিল গ্রামভিত্তিক অর্থনীতি এবং দুর্বল ও শ্রমিক শ্রেণির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কোনও সন্দেহ নেই, শেষদিকে এই কথা বিস্মৃত হওয়াটাই ছিল বামেদের পতনের প্রধান কারণ। লাল পতাকা গ্রাম-গ্রামান্তরে উঁচু রাখতে তারা যেকোনও প্রকারে পঞ্চায়েতের দখল নিতে মরিয়া ছিল। তার ফলে, একটা সময়ের পর পঞ্চায়েত ভোট উৎসবের পরিবর্তে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেহারা নেয়। ভোট ডাকাতিই ছিল এই নির্মম অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম পঞ্চায়েত ভোট নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। ভোটে রক্তক্ষয়ের বাস্তব অব্যাহত ছিল সেবারও। যদি মুর্শিদাবাদের ডোমকলের দিকে তাকানো যায়, তবে তথ্যটা এইরকম—শুধু ভোটের দিনে নিহতের সংখ্যা ২০০৩ সালে ৮ জন, ২০০৮ সালে ১১ জন এবং ২০১৩ সালে ১৮ জন! অর্থাৎ অশান্তি কমার পরিবর্তে ধারাবাহিকভাবেই বেড়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটেও (২০১৮ সালে) এরাজ্যে কারচুপির সঙ্গে ভয়াবহ হিংসার অভিযোগও ছিল। শুধু ভোটের দিনেই প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ১৬ জনের। কোনও সন্দেহ নেই, দশকের পর দশক এই যে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি, তার শিকার মূলত সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হতদরিদ্র লোকজন। কীসের জন্য এই ভোট? গ্রাম বাংলার সর্বত্র পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করা। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কী কাজ? গ্রামে গ্রামে স্থায়ী সম্পদ নির্মাণ এবং সাধারণ মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো, বিবিধ সমস্যার সুরাহা করা। তার মধ্যে থাকে রাস্তা, সেতু, সেচ, কৃষি, পশুপালন, বনসৃজন, বুনিয়াদি শিক্ষার বিস্তার, গৃহ ও শৌচাগার নির্মাণ, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, জাতি ও শ্রেণিগত ভেদাভেদ দূর করা, ব্যবসা ও গ্রামভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান প্রভৃতি।
গান্ধীজি গ্রামস্বরাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পল্লিউন্নয়ন চিন্তার সঙ্গে তার মূলগত ফারাক নেই। কিন্তু তাঁদের এই স্বপ্নপূরণের জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলিতভাবেই তার জোগান দেয়। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ‘ঐতিহ্য’ সম্পর্কে সামান্য ধারণাও যাঁদের আছে তাঁরা জানেন, কেন্দ্র কী বস্তু! রাজ্য সরকার বিরোধী দলের হাতে থাকলে তো কথাই নেই। ১৯৭৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রীয় শাসক দল রাইটার্স বা নবান্নের দখল নিতে পারেনি। ফলে, কেন্দ্রের বিমাতাসুলভ আচরণই পশ্চিমবঙ্গের নামের পাশে নিয়তির মতো লেখা হয়ে আছে। রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য অর্থ দিল্লি থেকে আদায় করার চেয়ে যেকোনও কসরতই আরামদায়ক মনে হয়। তাই সমস্ত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ যথাসময়ে এবং পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাই কাম্য। কারণ অব্যবহৃত টাকা কেন্দ্র ফেরত নিয়ে নিতে পারে এবং পানের থেকে চুন খসলেই আটকেও দিতে পারে একাধিক ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। মনরেগা এবং আবাস যোজনা নিয়ে মোদি সরকার নবান্নকে বেনজির নাকাল করেছে। সেই জট এখনও পুরো কাটেওনি। তার মধ্যেই সামনে এসেছে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা রাজ্যের বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত যথাসময়ে খরচ করতে না পারার প্রসঙ্গ। ব্যর্থ পঞ্চায়েতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার! এই ব্যর্থতার কোনও সাফাই হতে পারে না, এটা সর্বার্থে নিন্দনীয়। জনগণ তো এই সংগত প্রশ্ন তুলবেনই, মানুষের উন্নয়নের কাজই যদি না করতে পারেন তবে পঞ্চায়েত দখলের জন্য এত মরিয়া ভাব, হিংসা, দলাদলি কেন?